
সমাজ ওদের পুরুষ বলে না। যারা একটু হাত নাচিয়ে কথা বলে, কোমর বাঁকিয়ে হাটে।
সমাজ ওদের মেয়েলি পুরুষ, হাফলেডিস বলেই ডাকে। মেয়েলি পুরুষদের কোমর বাঁকানোর সাথে সাথে সমাজের চোখও বেঁকে যায়।
সেই ছেলেটা যদি আবার শাড়ি পরে, চোখে কাজল দেয়, কপালে টিপ দেয় তাহলে তো কথাই নেই। যেন সমাজের মুখে চুনকালি লেপ্টে যায় ছেলে হয়ে শাড়ি পরলে।
কিন্তু দেখুন সমাজটা কিন্ত আমরাই তৈরী করেছি। সমাজের নিয়মকানুনও আমাদের বানানো। আমরা ঠিক করে দিয়েছি, ছেলে হয়ে জন্ম নিলে কোমর বাঁকিয়ে হাটা যাবে না, রিনরিনে গলায় কথা বলা যাবে না, ফুটবল খেলতে হবে, মেয়েদের সাথে চুটিয়ে প্রেম করতে হবে। একটু রান্নাবান্না করলে, গলায় হার পরলে, কানে দুল পরলে, নখে নেইলপালিশ, চোখে কাজল দিলে সমাজের পুরুষত্ব ছুটে যায়।













“সত্যি তো, ছেলেরা কেন শাড়ি পরতে যাবে? কিন্তু মেয়েরাই বা কেন কষ্ট করে নাক ফুঁড়তে যাবে? কান ফুঁড়তে যাবে? সাজবে বলে, তাই তো? দেখতে ভাল লাগবে, তাই। যদি কোনও ছেলে নিজে মনে করে লিপস্টিক লাগিয়ে ঠোঁটটা লাল হলে ওকে দেখতে ভাল লাগবে, কিংবা কাজল পরলে দেখতে ভাল লাগবে, তা নিয়ে আমরা কেন এত হাসাহাসি করি? প্যান্ট পরলে একটা মেয়ে সমাজের চোখে হয়ে যায় স্মার্ট, আর কাজল পরলে একটা ছেলে হয়ে যায় হিজড়ে এই মনোভাবটা, এই দৃষ্টিভঙ্গিটা পাল্টে ফেললেই মনে অশান্তি থাকবে না। জানি, বহুদিন ধরে একটা সোশাল ভ্যালু তৈরি হয়। ওগুলো আমাদের মনের গভীরে গেঁথে থাকে। আর ওইসব ভ্যালুজ সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে পাল্টায়। অনেকের বাড়িতেই তো ঠাকুর-দেবতা আছে। দেবতাদের গায়ে গয়না নেই? কৃষ্ণের কানে দুল, গলায় মালা, হাতে বালা, মাথায় মুকুট। রাধারও তাই। সব রাজা গয়নাগাটি পরতেন। এতে তো কোনও নিন্দে ছিল না। লিঙ্গের বিচার ছিলো না। ইউরোপে আগেকার দিনে ছেলেরাও ফ্রক পরত। কোনও-কোনও ছেলে হয়তো ধর্মীয় কারণে নয়, অন্য কোনও ভাল- লাগা থেকে মেয়েদের পোশাক-টোশাক পরে। মানে, যাকে আমরা মেয়েদের পোশাক বলে ভাবি আর কী।”
পুরোটাই নির্ভর করে ব্যাক্তি স্বাচ্ছন্দ্য এবং পছন্দের উপর, সমাজের নিয়মে নয়। সুতরাং যুগ যুগ ধরে চলতে থাকা সামাজিকতার নামে পুরুষতান্ত্রিক চিন্তাভাবনা এবং নিয়মকে বিদায় জানানো প্রয়োজন। সংস্কার প্রয়োজন আমাদের গতানুগতিক পুরনো চিন্তাভাবনাকে।
হলদে গোলাপ
স্বপ্নময় চক্রবর্তী
ফটোগ্রাফার: শৌনক ইমরান
মডেল: অনীশকৌর ও হেমনলীনি