
Roopbaan Admin
ফ্রান্সিস এস কলিন্স, যিনি প্রখ্যাত তার নিজ গুণে। হিউম্যান জিনোম প্রজেক্টের চিফ সায়েন্টিস্ট, একজন গভীর ধর্মপ্রবণ খ্রিষ্ঠান। কিন্তু তবুও তিনি বিবর্তন তত্ত্বের গভীর সমার্থক। তিনি ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন আর সৃষ্টিবাদকে বাতিল করে দিয়েছেন।
কিন্তু এই প্রখ্যাত জীববিজ্ঞানীকে নিয়ে ২০০৭ সালে একটা ঝামেলা বেধে গিয়েছিল। NARTH এর প্রেসিডেন্ট সমকামিতা জিনগত ভাবে নির্ধারিত নয়, এমন দাবী করে একটা আর্টিকেল লিখেন। [১] এই এনএআরটিএইচ এর পুর্নরুপ হলো ন্যাশনাল এসোসিয়েশব ফর দ্য রিসার্চ অব থেরাপি অন হোমোসেক্সুয়ালিটি। এই সংগঠন আগেভাগেই ধরে নেয়, সমকামিতা একপ্রকার রোগ। যার চিকিৎসার প্রয়োজন। এই সংগঠনের প্রেসিডেন্ট কলিন্সের বই থেকে নেওয়া উদ্ধৃতি আর্টিকেলটাতে ব্যবহার করেন। এটা প্রকাশ হওয়ার পর বিশ্বের সমকামী বিদ্বেষি মিডিয়াগুলো একে লুফে নেয়। হইচই চেচামেচি করে, এই জাতীয় থেরাপি ওয়ালা সংগঠন গুলো আমেরিকার স্কুলগুলোতে এই মর্মে চিঠি পাঠাতে থাকে যে, কোনো কিশোর যদি নিজেকে সমকামী হিসাবে প্রকাশ করে, তবে তাকে উৎসাহিত করার পরিবর্তে চিকিৎসা বা থেরাপি দিন।
এমতাবস্থায় কলিন্সকে ডেভিড রবার্টস অনুরোধ করেন, বিষয়টা নিয়ে কিছু বলতে। কলিন্স তখন তাকে যে জবাব দেন, সেটাই এখানে উদ্ধৃত করা হলো।
এটা আমাকে অত্যন্ত পীড়িত করেছে, যখন আমি জানতে পেরেছি যে, সমকামিতার উৎস সম্বন্ধে আমার লেখা তোমাদের বা অন্যদের মানসিক যন্ত্রণা দিয়েছে। এনএআরটিএইচ; দ্য ল্যাঙ্গুয়েজ অব গড (পৃষ্ঠা ২৬০-২৬৩) থেকে শব্দগুলো এমনভাবে উদ্ধৃত করেছে, যার ফলে আমি যা বলতে চেয়েছি, তা না হয়ে, এর অর্থ ভিন্ন হয়ে গেছে। যারা এই বিষয়টা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়েছেন, তাদের প্রত্যেককে বলব, আমি কি বুঝাতে চেয়েছি, তা বুঝতে আপনারা বই পড়ুন। আমাদের কাছে যে প্রমাণ আছে, তা শক্তভাবেই; পুরুষে সমকামিতা জিনগত; এমনটা সমর্থন করে। মোট জনসংখ্যার অন্তত ১০ শতাংশ যদি এলজিবিটি থেকে হয়, তবে জমজ পুরুষে গবেষনা থেকে এটা বলা যায়, পুরুষে সমকামিতা অন্তত ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে জিনগত বা উত্তরাধিকার সুত্রে প্রাপ্ত। কিন্ত বাস্তবতা হলো, এটা কখনো ১০০% নয়। তার মানে ডিএনএ ছাড়াও আরো অন্যান্য ফ্যাক্টর সমকামিতায় প্রভাব ফেলে। এই অসংজ্ঞায়িত বিষয়গুলো জন্মগতভাবে পরিবর্তনযোগ্য।
তোমার নোট এটাই নির্দেশ করে যে, তুমি সত্যিটা জানতে চাও এবং এটাই আমরা এখন পর্যন্ত জানি। কেওই সুনির্দিষ্ট জিন আবিষ্কার করতে পারে নি, যা বংশগতিতে এভাবে যৌন অভিমুখিতাকে বয়ে নিয়ে যাবে। তবে এরকম জিন আগামী কয়েক বছরেই পাওয়া যাবে।
পাঠক খেয়াল করুন, কলিন্সের বই ২০০৭ সালে প্রকাশিত হয়েছে। কলিন্স সে সময় ভবিষ্যৎবানী করেছেন, ভবিষ্যতে সমকামিতার সাথে সংশ্লিষ্ট জিন খুজে পাওয়া যাবে। তার অনুমান শতভাগ সঠিক হয়, ঠিক তার ১০ বছর পরে। ন্যাচার জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, সমকামিতার সাথে TSHR (thyroid stimulating hormone receptor) ও SLITRK6 এবং SLITRK5 এর মধ্যে জিনগত সংযোগ আছে। সমকামিতার সাথে জিনগত সংযোগ যে দৃঢ় অথবা নিদেনপক্ষে তা আছে; এমনটা প্রমাণ করতে আরো শক্তিশালী তথ্যসুত্র হাতে এলো অবশেষে।
চয়েজ সাপোর্টিভ বায়াজ বলে একটা বিখ্যাত বায়াজ বা হেত্বাভাষ আছে। এর মানে হলো, আপনি আগে থেকে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখবেন, তারপর সেই সিদ্ধান্তের স্বপক্ষে, যতগুলো যুক্তি আছে, সেগুলো খুজে খুজে বের করে নিয়ে আসবেন। NARTH এর প্রেসিডেন্ট বাস্তবিকভাবে এটাই করলো। নিজের কুৎসিত মানসিকতা চরিতার্থ করার জন্য তিনি প্রখ্যাত সায়েন্টিস্টকে ব্যবহার করলেন। NARTH এর মত প্রতিষ্ঠান যারা হোমোসেক্সুয়ালদের বিষমকামীতে রুপান্তরের থেরাপি দেয়। তবে এসব থেরাপিকে সমগ্র বিশ্বে মেডিক্যাল অর্গানাইজেশনগুলো সুডোসায়েন্টিফিক বলে উল্লেখ করেছে [৩][৪][৫][৬][৭] । মজার বিষয় হলো, এই অপবৈজ্ঞানিক সংস্থার প্রেসিডেন্ট যে আর্টিকেলটা লিখেছে, তা খোদ তাদেরই ওয়েবসাইটে পাওয়া যায় না। অন্যান্য ওয়েবসাইটগুলোর কপি পেস্ট করা থেকে জানতে হয়। যাই হোক, তবুও সত্য তার আপন আলোয় উদ্ভাসিত হবে, এবং এমনটাই হয়েছে।
বিজ্ঞানী বলতে সম্ভবত এমনই হয়। যারা গভীরভাবে ধার্মিক হওয়া সত্ত্বেও, নিজের বিবেকবোধ নিজের পেশাগত দায়িত্ব থেকে দূরে সরে যান নি। সত্যকে প্রকাশ করেছেন অকপটে। এই মহানতম বিজ্ঞানীর প্রতি রইলো অশীম শ্রদ্ধা। এমন দায়িত্বসচেতন বিজ্ঞানী যুগে যুগে জন্মাক, দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ুক। এমনটা প্রত্যাশা করি সর্বদাই।
তথ্যসুত্রঃ ১) NARTH এর আর্টিকেলটা পুর্বে এই লিঙ্ক থেকে পাওয়া গেলেও এখন আর পাওয়া যায় না। https://www.therapeuticchoice.com/docs/nothardwired.html
২) মুল আর্টিকেলের গুরুত্বপুর্ণ অংশ এখান থেকে নেওয়া হয়েছে https://exgaywatch.com/2007/05/major-geneticist-francis-collins-responds-to-narth-article/
4) http://www.apa.org/pi/lgbt/resources/therapeutic-response.pdf
5) http://www.psychotherapy.org.uk/UKCP_Documents/policy/MoU-conversiontherapy.pdf
6) http://www.gmc-uk.org/news/26043.asp
অতিরিক্ত তথ্যসুত্রঃ ১) http://en.wikipedia.org/wiki/Francis_Collins
২) http://en.wikipedia.org/wiki/Human_Genome_Project
৩) https://www.nature.com/articles/s41598-017-15736-4
উৎস: রুপবান ব্লগ