
লেখকঃ অন্যস্বর
আলফ্রেড কিনশের গবেষণা অনুযায়ী প্রতি একশ জনের মধ্যে দশ জন পুরুষ সমকামী। আলফ্রেড কিনশে একজন বায়োলজিস্ট, যিনি ফাদার অব সেক্সোলজি হিসেবে পরিচিত। ১৯৪৮ সালে তিনি বেস্টসেলার বই Sexual Behavior in the Human Male এ হিউম্যান সেক্সুয়ালিটি নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেন। এই বইতে তিনি সমকামী জনসংখ্যার পরিমানগত ধারনাটি দেন যা সে সময়ে প্রচন্ড জনপ্রিয় হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ সমাজবিজ্ঞানী কিনশের এই ‘এস্টিমেট’ এ আস্থা রাখেন না। কিনশের জরিপ কয়েদী এবং প্রস্টিটিউট দ্বারা অভার স্যাম্পলড ছিল এরকম অনেকে অভিযোগ করেন। সাম্প্রতিক কালের বেশ কিছু বিশ্বস্ত জরিপ অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার প্রায় ২-৩ % পুরুষ সমকামী। মেয়েদের বেলায় এই সংখ্যাটা একটু কম, শতকরা ২ জন। কিন্তু এইসব জরিপেও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় যৌনতা বিষয়ে মানুষ জরিপে কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করে, এমনকি অনেক সময় মিথ্যেও বলে।
সেথ স্টিফেনস তার এভ্রিবডি লাইস বইতে জরিপের সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি লিখেছেন আমেরিকার এক রিপ্রেজেন্টেটিভ রিসার্চ অনুযায়ী বিষমকামী মেয়েরা বছরে গড়ে ৫৫ বার সেক্স করে এবং কনডম ব্যবহার করেন শতকরা ১৬ বার। এই হিসাব অনুযায়ী প্রতি বছর আমেরিকানরা ১.১ বিলিয়ন কনডম ব্যবহার করে। কিন্তু বিষমকামী পুরুষরা এই জরিপে জানাচ্ছে তারা বছরে ১.৬ বিলিয়ন কনডম ব্যবহার করে। সংজ্ঞা অনুযায়ী এই সংখ্যাটা সমান হওয়ার কথা। তাহলে কারা মিথ্যা বলছে, পুরুষ না মহিলারা? আশ্চর্যজনক ভাবে এরা উভয়ই মিথ্যা বলছে। কনজিউমার বিহেভিয়ার বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান Nielsen এর রিপোর্ট অনুযায়ী আমেরিকায় প্রতিবছর ৬০০ মিলিয়নেরও কম কনডম বিক্রি হয়।
সেথ একজন লেখক এবং সাংবাদিক, যিনি দেড় বছর গুগলে ডাটা সাইন্টিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন। এভ্রিবডি লাইস বইতে তিনি গুগল ডাটা ব্যবহার করে আমেরিকায় কতজন পুরুষ সমকামী তা বের করার চেষ্টা করেছেন। সেথ প্রথমে ফেসবুক ডাটা ব্যবহার করে দেখিয়েছেন প্রায় ২.৫% পুরুষ ফেসবুকে জানিয়েছে তারা পুরুষের প্রতি ইন্টারেস্টেড, যেটা প্রচলিত জরিপের ফলাফলের সাথে মিলে যায়। কিন্তু এই সংখ্যাটা মিসিসিপির মত রক্ষণশীল স্টেটে প্রায় অর্ধেক। এর দুটো ব্যাখ্যা হতে পারে, এক – সমকামীরা রক্ষণশীল স্টেট হতে সমকামীদের প্রতি সহনশীল স্টেটে স্থানান্তরিত হয়, দুই – রক্ষণশীল স্টেটের সমকামীরা নিরাপত্তাজনিত বা অন্য কারণে প্রকাশ্যে সমকামী হিসেবে বিচরণ করেন না। সুতরাং ফেসবুক ডাটার সাহায্যে সমকামীদের সংখ্যা নির্ণয় নির্ভুলভাবে সম্ভব নয়। সেথ গুগলের পর্ন সার্চ বিশ্লেষণ করে সমকামীদের সংখ্যা নির্নয়ের সিদ্ধান্ত নেন। তার হিসেব অনুযায়ী আমেরিকায় প্রায় ৫% পুরুষ গুগলে গে পর্ন সার্চ করে। ধরে নেওয়া যায় এদের সবাই উভকামী কিংবা সমকামী।
আমেরিকায় এমন হলে বাংলাদেশে শতকরা কতজন সমকামী? এই সংখ্যাটা সমান হওয়ার কথা। সমকামিতায় ভূগোলের কোন ভূমিকা আছে এমন প্রমান নেই। তবে গ্রাম এলাকার তুলনায় শহরে সমকামীদের সংখ্যা বেশি হতে পারে। গ্রামে শিক্ষার প্রসার যথেষ্ট নয় বলে অনেকে সমকামিতার ব্যাপারে অল্প বা ভুল তথ্য জানে।ফলে অনেক সমকামী বিষমকামীর জীবন যাপন করে। আবার বাংলাদেশে বিষমকামিতার তুলনায় সমকামী যৌনসংগম তুলনামূলক সহজলভ্য বলে শহরাঞ্চলে উভকামীর সংখ্যা বেশি হতে পারে।
বাংলাদেশের মত রক্ষণশীল দেশে অধিকাংশ সমকামী পুরুষ, মেয়েদের বিয়ে করে বিষমকামী জীবন যাপন করে। সেথ তার বইতে দেখিয়েছেন আমেরিকাতেও এরকম প্রচুর সমকামী পুরুষ আছে যারা বিবাহিত বিষমকামীর জীবনযাপন করছে। আমেরিকায় “আমার স্বামী ডিপ্রেসড কিনা” লিখে গুগলে যতবার সার্চ হয়েছে তার চেয়ে দশগুন বেশিবার সার্চ হয়েছে ” আমার স্বামী গে কিনা” লিখে, যা “আমার স্বামী মদ্যপ কিনা”র তুলনায় আট গুন বেশি।
সুতরাং সেথ এর দাবি অনুযায়ী প্রতি একশ জনে প্রায় পাঁচজন পুরুষ সমকামী। এই হিসেবে আপনি ফেসবুকে যদি ৫০০ মানুষের সাথে কানেক্টেড থাকেন তাহলে তাদের মধ্যে অন্তত ২০ জন মানুষ সমকামী। আপনার ক্লাসে যদি ৪০ জন ক্লাসমেট থাকে তাহলে তাদের মধ্যে অন্তত ২ জন সমকামী।