
লেখক :- অনির্বাণ আহমেদ
সমকামিতা কী জেনেটিক রোগ! এই বিতর্ক অনেকদিন আগে থেকেই চলছে তবে সম্প্রতি গবেষণা থেকে অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে সমকামীতার জন্য জেনেটিক প্রভাব রয়েছে।এমনকি জিনের কোন অঞ্চলে গে জিন থাকতে পারে তাও নিশ্চিত হয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
তায় বিতর্কটা সামাজিক ভাবে আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। যদি সমকামিতার জন্য জিনের প্রভাব থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই তা স্বাভাবিক না, এটা কোন রোগ বা জেনেটিক ত্রুটির ফসল। যদিও জেনেটিক ত্রুটি হলে সমকামীতার জন্য কিছু মানুষ সহানুভূতি দেখাবে। তাও আমাদের মতো ধর্মান্ধ কুসংষ্কারাচ্ছন্ন তৃতীয় বিশ্বের মানুষেরা এটাকে অভিশাপ হিসেবে ধরে নেবে। হিন্দুরা বলবে অবশ্যই সে আগের জন্মে পাপ করে এসেছে তায় এ জন্মে সমকামি হয়ে জন্মেছে আর মুসলীম হলে বলবে বাবা মায়ের পাপের কারণেই সন্তান সমকামি হয়েছে। কয়েকদিন আগেই একজন হুজুরের ওয়াজ ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছে তার বক্তব্য ছিলো এমন ” বাবা-মা মিলিত হওয়ার সময় অন্য কোন নারী বা পুরুষের কথা চিন্তা করলে সন্তান সমকামি হয়” তাহলে বুঝুন বাংলাদেশের মতো ধর্মান্ধ দেশে সমকামিতাকে কতটা ঘৃণার চোখে দেখা হয়। জেনেটিক ত্রুটি হলেও অর্থাৎ সমকামী হওয়ার পিছনে যে সমকামিদের কোন হাত না থাকা সত্ত্বেও কতটা অবহেলার স্বিকার হতে হয়। আর রাষ্ট্র সমপ্রেমকে গুরুতর অপরাধ করে রেখেছে।এখন আসা যাক, সমকামিতা কী কোন জেনেটিক রোগ বা বংশ পরম্পারায় বাহিত হওয়া কোন জেনেটিক ত্রুটি!
না সমকামিতা কোন জেনেটিক রোগ বা জিনগত কোন ত্রুটি নয়। কারণ মেডিকেল অভিধানে রোগের যে সংজ্ঞা দেয়া আছে তা হলো ” Disease is an impaiment of the normal state of the body that interputs function, causes pain, and has indentitiable charecteristcs.”
এই সংজ্ঞা অনুযায়ী সমকামিতা কোন রোগ নয়। সমকামীতা শরীরে কোন বেথা, বেদনার সৃষ্টি করে না কিংবা শরীরের কোন ফাংশন বিনষ্ট করে না। সমকামীতা সমলিঙ্গের মানুষের প্রতি ভালোবাসার টান, একটা যৌন প্রবৃত্তি আর যৌন প্রবৃত্তি কখনো রোগ নয়।জেনেটিক ত্রুটি বা বংশপরম্পারায় বাহিত ত্রুটি কী?মা, বাবা সব ধরনের বৈশিষ্ট্য সন্তানের মাধ্যমে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্ম বহন করে। জিনের অস্বাভাবিক মিউটেশন, ডিএনএ বিন্যাসের অস্বাভাবিকতার কারনে যে সকল ত্রুটি দেখা যায় সেগুলোকে বংশপরম্পরায় জেনেটিক ত্রুটি বালা যেতে পারে। যেমন :- বর্নান্ধতা, হিমোফিলিয়া ইত্যাদি।
বর্নান্ধ পুরুষ ও স্বাভাবিক দৃষ্টিসম্পন্ন নারীর মধ্যে বিয়ে হলে F1 জনুর পুত্র বা কন্যা সবাই স্বাভাবিক দৃষ্টি সম্পন্ন হলেও কন্যাদের সবাই হবে বর্নান্ধ জিনের বাহক এবং পরবর্তী বংশের অর্ধেক এ জিন সঞ্চারিত হবে।
হিমোফিলিয়া হলো বংশগতভাবে সঞ্চারণশীল বা উত্তারাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত একপ্রকার রক্ত তঞ্চন ঘটিত ত্রুটি বা অস্বাভাবিকতা। আক্রান্ত ব্যাক্তিদের রক্ত তঞ্চিত হয় না এবং রক্ত ক্ষরণজনিত কারণে আক্রান্ত ব্যাক্তির মৃত্যু ঘটতে পারে।জেনেটিক রোগ :- জেনেটিক রোগ হিসাবে ডাউন সিন্ড্রম এবং প্রোজেরিয়ার কথা বলতে পারি। ডাউন সিন্ড্রম একটি জেনেটিক রোগ যেখানে ২১ নং ক্রোমজমে আরেকটি অতিরিক্ত ক্রোমজম বিদ্যমান বিদ্যমান।এই রোগ শিশুর শারিরীক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও বুদ্ধিমত্তা স্বাভাবিকের তুলনায় কম থাকে।
প্রোজেরিয়া এর কারণে শিশু অল্প বয়সে বুড়িয়ে যায়।প্রোজেরিয়া হলো কতগুলো প্রোজরয়েড সিন্ড্রোমের অন্যতম একটি। নতুন মিউটশনের ফলে ঘটে থাকে।
উপর্যুক্ত দুটো জেনেটিক রোগে আক্রান্ত শিশুর পিতা মাতা জেনেটিক ভাবে স্বাভাবিক থাকে। অতিরিক্ত ক্রোমজমের ঘটনা দৈবক্রমে ঘটে থাকে।তাহলে জেনটিক ত্রুটি বা জেনেটিক রোগের সাথে কী সমকামীতার কোন মিল আছে এতে কী কোন ধরনের ক্ষতি হচ্ছে? হ্যা যৌনবাহিত রোগের ঝুকি সমকামিদের ভিতর একটু বেশি থাকতে পারে, সেটা সমকামীদের অসচেতনতার ফলেই। তাহলে সমকামীতা কী অস্বাভাবিক? প্রকৃতিতে মানুষ বাদেও ১৫০০ প্রজাতির মধ্যে সমকামিতার স্বাভাবিক চর্চা দেখা যায় তাহলে মানুষ সমকামি হলে সেটা রোগ হতে যাবে কেনো! জেনেটিক ভেরিয়েশনের কারণে মানুষ খাটো, লম্বা, নীল বা লাল চোখের হয়ে থাকে তাহলে কী তাদের কে জেনেটিক রোগী বলবেন? আবার মানব জাতি অর্থাৎ হমো সেপিয়েন্সদের ভাষা জ্ঞান থাকার পিছনে কোন জেনেটিক কারণ দায়ী বা নিদৃষ্ট জিন দায়ী বলে প্রমাণ করেছেন বিজ্ঞানীরা তাহলে কী পুরো মানব জাতিই জেনেটিক রোগী! তেমনি ভাবে সমকামিতার জন্যেও কোন জেনেটিক প্রভাব দায়ী অর্থাৎ জেনেটিক কোডেরই কোথাও সমকামি জিনের একটা ফাংশন ঢোকানো আছে। সমকামিতা প্রকৃতি বিরুদ্ধো নয়, কেবল প্রকৃতির অনন্য বৈচিত্র।
:)তথ্যসূত্র :- উকিপিডিয়া,
একাদশ-দ্বাদশ শ্রেনীর জীববিজ্ঞান বই গাজী আজমল- গাজী আসমত,
সমকামীতা – অভিজিৎ রায়।