জেন্ডার ডিস্ফোরিয়া

লেখকঃ অরণ্য রাত্রি

জেন্ডার ডিস্ফোরিয়া নিয়ে আলোচনার আগে  সেক্স এবং জেন্ডার সংক্রান্ত কিছু বিষয় জানা দরকার। নিম্নে তা নিয়ে আলোচনা করা হল।

বায়োলজিক্যাল সেক্স

মানুষের জন্মের সময় তার যে সেক্স নির্ধারিত হয় তাকে বায়োলজিক্যাল সেক্স বলা হয়। এই বিষয়টা  নির্ভর করে মানুষের জননাঙ্গের উপর। যেমন পুরুষের ক্ষেত্রে পেনিস এবং নারীর ক্ষেত্রে ভ্যাজাইনা।

জেন্ডার আইডেন্টিটি

মানুষ নিজেকে যে জেন্ডার হিসেবে অনুভব , উপলব্ধি করে, বা যে জেন্ডার হিসেবে সমাজের কাছে নিজেকে  প্রকাশ করতে চায় অথবা সমাজ তাকে যে জেন্ডার হিসেবে স্বীকৃতি দিক সেটা সে চায় তাকে জেন্ডার আইডেন্টিটি বলে। এক্ষেত্রে লক্ষ্যনীয় কেউ কেউ নিজেকে কোন জেন্ডার হিসেবেই  প্রকাশ করতে চাইতে না পারে বা উভয় জেন্ডার হিসেবে প্রকাশ করতে চাইতে পারে। জেন্ডার আইডেন্টিটি জন্মের সময় জানা যায় না। এবং সব সময় বায়োলজিক্যাল সেক্স আর জেন্ডার আইডেন্টিটি এক হয় না। যেমন ট্রান্সজেন্ডার মানুষের ক্ষেত্রে কোন মানুষের পেনিস থাকা সত্ত্বেও সে নিজেকে নারী হিসেবেই উপলব্ধি করতে পারে। আবার ভ্যাজাইনা থাকা সত্ত্বেও কেউ কেউ পুরুষ হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করতে চায়।

ননবাইনারি

এটা একটি আম্ব্রেলা ওয়ার্ড। এর মাঝে অনেক গুলো সংজ্ঞা রয়েছে। যেমন  কেউ কেউ কোন জেন্ডার দ্বারা পরিচিত হতে চায় না। যেমন এসেক্সসুয়াল। কারো কারো সময়ের সাথে সাথে জেন্ডার আইডেন্টিটি পরিবর্তন হয় । যেমন জেন্ডার ফ্লুইডিটি। কেউ কেউ পুরুষ প্রকৃতি এবং নারী প্রকৃতির মাঝখানে পরে।যেমন ইন্টার জেন্ডার। কারো কারো ২ বা ততোধিক জেন্ডার রয়েছে যেমন বাইজেন্ডার এবং প্যানজেন্ডার ।

ট্রান্সজেন্ডার

যাদের জন্মের সময় নির্ধারিত সেক্স এবং জেন্ডার আইডেন্টিটি এক হয় না তাদের কে ট্রান্সজেন্ডার বলা হয়। এবং যারা এক সেক্স থেকে আরেক সেক্সে চিকিৎসা বিজ্ঞানের মাধ্যমে রূপান্তরিত হয় তাদের কে ট্রান্সসেক্সুয়াল বলে।

সিসজেন্ডার

যাদের বায়োলজিক্যাল সেক্স এবং জেন্ডার আইডেন্টিটি এক হয় তাদের কে সিসজেন্ডার বলা হয়।

জেন্ডার ডিস্ফোরিয়া 

একটা মানুষের যখন বায়োলজিক্যাল সেক্স এবং জেন্ডার আইডেন্টিটি ভিন্ন হয়ে থাকে তখন সেই মানুষটি কিছু অস্বস্তি এবং যন্ত্রনার মধ্য দিয়ে যায় ।এই  অবস্থা বা পরিস্থিতি কে জেন্ডার ডিস্ফোরিয়া বলা হয়।

জেন্ডার ডিস্ফোরিয়া মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপনে বাঁধা তৈরি করতে পারে। যেমন স্কুলে যাওয়া বন্ধ করা, চাকুরী  ছেড়ে দেয়া

পূর্বে জেন্ডার ডিস্ফোরিয়া কে জেন্ডার আইডেন্টিটি ডিসঅর্ডার বলা হত। কিন্তু পরবর্তীতে জেন্ডার আইডেন্টিটি ডিসঅর্ডার নামটি পরিবর্তন করে নতুন করে নাম রাখা হয়েছে জেন্ডার ডিস্ফোরিয়া। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ,ইন্টারন্যাশনাল ক্লাসিফিকেশন অফ ডিজিজ -১১(ICD-11) ভার্সনের  সেক্সুয়াল হেল্থ চ্যাপ্টারে জেন্ডার ডিস্ফোরিয়া কে অন্তর্ভুক্ত করেছে। কিন্তু পূর্বে ১০(ICD-10) ভার্সনে জেন্ডার আইডেন্টিটি ডিসঅর্ডার ছিল মেন্টাল ডিসঅর্ডার চ্যাপ্টারে। সুতরাং জেন্ডার ডিস্ফোরিয়া কোন মানসিক রোগ কিংবা অন্য কোন রোগ নয়। এটা একটি মেডিক্যাল কন্ডিশন মাত্র।

এখন আর এটা কে মানসিক রোগ হিসেবে গণ্য করা হয় না বলে এটা ট্রান্সজেন্ডার মানুষদের জন্য একটা বড় জয় বলে মনে করা হয়।এর মাধ্যমে ট্রান্সজেন্ডার মানুষ যে লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার হচ্ছিল বা হচ্ছে তা থেকে তারা অনেক দেশেই মুক্তি লাভ করছে।

একটা কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে জেন্ডার ডিস্ফোরিয়া আর সমকামিতা সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার। মানুষের নিজের জেন্ডার সম্পর্কে উপলব্ধি আর তার সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন এর মাঝে অনেক পার্থক্য রয়েছে।

শৈশবকাল থেকেই জেন্ডার ডিস্ফোরিয়ার সূচনা হতে পারে। যেমন ডিস্ফোরিয়া আছে এমন শিশু যার বায়োলজিক্যাল সেক্স ছেলে তার মেয়েদের খেলনা নিয়ে খেলতে ভাল লাগে, এবং মেয়েদের সাথেই বন্ধুত্ব করে খেলতে চায়। এবং মেয়েদের পোশাক পরিধান করতে চায়। সে  নিজেকে মেয়ে ভাবতেই পছন্দ করে। আবার জেন্ডার ডিস্ফোরিয়ায় আছে এমন একটি বায়োলজিক্যালি মেয়ে শিশু কিন্তু ছেলেদের পোশাক , খেলনাই পছন্দ করবে।তখন যদি তাকে বাড়ন করা হয় তা সে মানতে চাইবে না এবং অস্বস্তি এবং যন্ত্রণা অনুভব করবে।

বয়ঃসন্ধি তে এসে যখন বাহ্যিক যৌন পরিবর্তন গুলো হতে শুরু করে যেমন কণ্ঠ ভারি হওয়া, ব্রেস্ট সুগঠিত হওয়া তা তাদের মাঝে তীব্র অস্বস্তি এবং যন্ত্রণা তৈরি করে।

 কিন্তু সব ক্ষেত্রে এমন বলা যায় না। পরিণত বয়সে  বা বয়ঃসন্ধি আসার আগেই কিছু কিছু ক্ষেত্রে সময়ের সাথে সাথে এই ব্যাপার টা শিশুদের মধ্য থেকে দূর হয়ে যায় । আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই ব্যাপার টা পরিণত বয়স পর্যন্ত বজায় থাকে। যেসব ক্ষেত্রে পরিণত বয়স  অথবা বয়ঃসন্ধি পর্যন্ত এই ব্যাপার টা বজায় থাকে থাকে তাদের জেন্ডার ডিস্ফোরিয়া আছে। এক্ষেত্রে মোটামুটি বলা যায় জেন্ডার ডিস্ফোরিয়া স্থায়ী ভাবে থেকে যাবার সম্ভাবনাই বেশি। তা পরিবর্তন হবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

যখন মানুষ পরিণত বয়সে পৌঁছায় তখন জেন্ডার ডিস্ফোরিয়া আছে এমন একটি মানুষের মনে হয় বায়োলজিক্যাল সেক্স অনুযায়ী। তার যে শরীর, তাতে সে আবদ্ধ হয়ে গিয়েছে।এর থেকে  সে মুক্তি পেতে চায়।  এটা তাকে পীড়া দেয়।বায়োলজিক্যাল সেক্স অনুযায়ী সমাজে তার যে ভূমিকা, দায়িত্ব আছে  তা তার ভালো লাগে না। সে জীবনে অসুখী হয়ে পড়ে। সে তার দৈহিক যে সকল পরিবর্তন বয়ঃসন্ধির পর এসেছে তা মেনে নিতে পারে না। তা থেকে সে পরিত্রাণ পেতে চায়। যেমন মুখের দাঁড়ি , গোঁফ , কিংবা ব্রেস্টের পরিবর্তন।  তার নিজের জননাঙ্গ সে অপছন্দ করে এবং সে তা পরিবর্তন করতে চায়।

বরং সে তার বিপরীত সেক্সের মানুষের শরীরের পরিবর্তন গুলো তার শরীরে পেতে চায়। সে চায় সমাজে তার  বিপরীত সেক্সের যে ভূমিকা  তা পালন করতে। এক কথায় সে তার সেক্স পরিবর্তন করতে চায় । কেউ কেউ করতে পারে। কেউ কেউ সমাজ, সংসার এবং সুযোগ সুবিধার অভাবের কারনে এই ইচ্ছাটাকে দমন করে ।

কিন্তু এইভাবে নিজের ইচ্ছা গুলো কে দমন করে চলা সহজ ব্যাপার নয়। এর ফলে অনেক সময় সে বিষণ্ণতা , উদ্বিগ্নতায় আক্রান্ত হয়।আত্মবিশ্বাস কমে যায়। এমন কি  নিজের ক্ষতি করা, এবং আত্মহত্যার চেষ্টা পর্যন্ত করে। কেউ কেউ মাদক দ্রব্য গ্রহণ করে।

কারণ

এর কারণ এখনো অস্পষ্ট। তবে ধারণা করা হয় জেনেটিক এবং গর্ভে হরমোনের তারতম্যের কারণে জেন্ডার ডিস্ফোরিয়া হতে পারে।

স্ট্যাটিস্টিকস

গবেষণায় দেখা যায় বায়োলজিক্যালি পুরুষ এমন ৩০০০০ জনে ১ জনের জেন্ডার ডিস্ফোরিয়া থাকে। আর বায়লজিক্যালি নারী এমন ১০০০০০ জনে ১ জনের জেন্ডার ডিস্ফোরিয়া আছে।( সূত্র – উইকিপিডিয়া )

চিকিৎসা

অনেক উন্নত দেশে জেন্ডার ডিস্ফোরিয়ার চিকিৎসা শুরু হয়েছে। এমন কি সেক্স পরিবর্তনের সার্জারি করা হচ্ছে। জেন্ডার ডিস্ফোরিয়ার চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হল এর জন্য একটি ব্যক্তি যে অস্বস্তি এবং যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যায় তা দূর করা।

শিশুদের চিকিৎসা

শিশুদের চিকিৎসা নির্ভর করে  একটি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত মাল্টি ডিসিপ্লিনারি টিমের উপর। এই টিমে থাকে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ , একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ , অন্যান্য মানসিক রোগ কর্মী , একজন শিশু হরমোন বিশেষজ্ঞ এবং একজন এডভোকেট। চিকিৎসার প্রাথমিক ফোকাস হল শিশুদের মানসিক অবলম্বন দেয়া, তাদের অন্তর্নিহিত অনুভূতি কে বোঝা, তারা যাতে এই অস্বস্তি এবং যন্ত্রণা কে সামলে নিতে পারে সে সাহায্য করা এবং শিশুদের কে তাদের অনুভূতি প্রকাশের একটি নিরাপদ স্থান দেয়া। অনেক শিশুদের ক্ষেত্রেই এই অনুভূতি বয়ঃসন্ধি বা পরিণত বয়স পর্যন্ত বজায় থাকে না।

ফ্যামিলি থেরাপিও খুব গুরুত্বপূর্ণ । প্রত্যেক বাবা মায়ের উচিত তাদের সন্তানদের জন্য একটা ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করা। যাতে এই পরিবেশে গঠনমূলক আলোচনা এবং অবলম্বন দেয়ার মাধ্যমে সন্তানদেরকে জেন্ডার ডিস্ফোরিয়া সম্পর্কে বুঝানো যায় এবং  সন্তানদের মধ্যে যে অস্বস্তি এবং যন্ত্রনা  তৈরি হয়েছে তা দূর করা যায়।

পরিণত বয়সে চিকিৎসা

এটি নিম্ন লিখিত ধাপে করা হয়

প্রথমে জেন্ডার ডিস্ফোরিয়া আছে কিনা তা নির্ণয় করতে হয়। সেই সাথে অন্য কোন মানসিক রোগ আছে কিনা যেমন বিষণ্ণতা , উদ্বিগ্নতা ,মুড ডিসঅর্ডার ইত্যাদি সনাক্ত করতে হবে এবং তার চিকিৎসা করতে হবে। এরপর মূল চিকিৎসা

কাউন্সেলিং এবং সাইকোথেরাপি

এখানে কাউন্সেলর সাহায্য করেন ব্যক্তি কে একটি বাস্তবধর্মী লক্ষ্য নির্ণয় করতে এবং এর জন্য তার ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক জীবনে যে পরিবর্তন গুলো আসবে তার পরিণতি বিশ্লেষণ করতে। এখানে উল্লেখ্য, ব্যক্তির জেন্ডার আইডেন্টিটি এবং বায়োলজিক্যাল সেক্সের যে পার্থক্য তা যদি কাউন্সেলর দূর করার চেষ্টা করেন তবে তা অনৈতিক হবে বরং কিভাবে জীবনের এই ধ্রুব সত্য কে একসেপ্ট করে পরবর্তীতে কি সিদ্ধান্ত নেয়া যায় সেই ব্যপারে  সাহায্য করা হবে তার নৈতিক দায়িত্ব। ফ্যামিলি এবং গ্রুপ থেরাপিরও প্রয়োজন হতে পারে।

জেন্ডার ডিস্ফোরিয়ার চিকিৎসা ব্যাক্তি ভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন কেউ কেউ শুধুমাত্র কখনো কখনো অথবা সর্বদা বিপরীত লিঙ্গের পোশাক  পরিধান করে এবং কখনো কখনো অথবা সর্বদা  বিপরীত লিঙ্গের জীবন যাত্রা অনুকরণ করেই শান্তি পায়। আবার কেউ কেউ চূড়ান্ত পর্যায় যায় যেমন সেক্স পরিবর্তন।

যারা সার্জারির মাধ্যমে সেক্স পরিবর্তনের   সিদ্ধান্ত নেন তাদের জন্য পরিবর্তী ধাপ গুলো

বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা

যে সকল ব্যক্তির জেন্ডার ডিস্ফোরিয়া আছে এবং সার্জারির মাধ্যমে সেক্স পরিবর্তন করবেন তাদের কে ১ বছর নতুন জেন্ডারের ভুমিকায় বাস্তবে জীবন যাপন করতে হবে। এই সময় হরমোন চিকিৎসা প্রদান করা হয়। বছরের শেষে তাদের কে  মুল্যায়ন কমিটির সামনে উপস্থাপন করতে হবে যে তারা তাদের নতুন জেন্ডারের ভুমিকায় ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পেরেছেন। কিন্তু এতে অনেক সামাজিক এবং মানসিক ঝুঁকি রয়েছে যেমন  চাকুরী চলে যাওয়া, বন্ধুদের সাথে এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে সম্পর্কের অবনতি হওয়া ,লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার  হওয়া। যদি একজন ব্যক্তি, যার জেন্ডার ডিস্ফোরিয়া রয়েছে, সে হরমোন থেরাপি এবং সার্জারির মাধ্যমেই উপশম লাভ করে তাহলে  ব্যক্তির জীবনের এই অভিজ্ঞতার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে বলে অনেকে  মনে করেন। এটা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে।

হরমোন থেরাপি

সার্জারির আগে হরমোন থেরাপি নিতে হয়। এটা নিরাপদ এবং কার্যকর।হরমোন থেরাপি বয়ঃসন্ধি তে যখন পর্যন্ত ব্যাক্তির সেকেন্ডারি যৌন বৈশিষ্ট্য গুলো প্রকাশ পায় নি তখন নিলে সবচেয়ে সুবিধা হয় । যেমন দাঁড়ি , গোঁফ উঠা, ব্রেস্ট এর আকৃতি পরিবর্তন ইত্যাদি। সার্জারির আগে  হরমোন থেরাপি ছাড়াও আরও কিছু চিকিৎসা নিতে হয়। যেমন ডায়েটেশিয়ানের কাছ থেকে ডায়েট চার্ট নেয়া। স্পিচ থেরাপি নেয়া,কসমেটিক ব্যবহারের উপদেশ নেয়া। যেমন শরীরের পশম দূর করা,নন ভারবাল আচরন সম্পর্কে উপদেশ নেয়া।

বিহেভিওরাল থেরাপিও খুব গুরুত্বপূর্ণ।এই ক্ষেত্রে কিভাবে চলতে হবে, পোশাক পরিচ্ছদ পরতে হবে, কিভাবে সঙ্গীদের সমর্থন পাওয়া যাবে এইসব ব্যপারে আলোকপাত করা হয়,

সেক্স পরিবর্তনের সার্জারি ( জেন্ডার কনফারমেশন সার্জারি )

এই ব্যাপারে অভিমতের ভিন্নতা থাকতে পারে কিন্তু এই ব্যপারে সিদ্ধান্ত নিবেন ব্যক্তি এবং মাল্টিডিসিপ্লিনারি টিমের সদস্যরা। এই টিমের সদস্য দের একজন কসমেটিক সার্জন , একজন ইউরোলজি বিশেষজ্ঞ , একজন গায়নোকলজি বিশেষজ্ঞ ।এছাড়া অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরাও থাকেন।

পুরুষ থেকে নারী তে রূপান্তরিত হতে গেলে যে সকল সার্জারি করা হয় তা হল

ম্যামোপ্ল্যাস্টি ( ব্রেস্ট গঠন করা)

পেনেক্টমি ( পেনিস অপসারন করা)

অরকাইডেক্টমি( টেস্টিস অপসারন করা)

এবং ভ্যাজাইনার মত একটি স্ট্রাকচার তৈরি করা।

আর নারী থেকে পুরুষে রূপান্তরিত হতে গেলে যে সকল সার্জারি করা হয় তা হল

ম্যাস্টেক্টমি( ব্রেস্ট অপসারণ করা)

অভারিয়েক্টমি( অভারি অপসারণ করা)

হিস্টেরেক্টমি ( জরাউ অপসারণ করা)

 ফেলপ্লাস্টি ( পেনিস গঠন করা )

সার্জারির ক্ষতচিহ্ন পুরোপুরি ভাবে শুকাতে প্রায় ১ বছরের মত লাগে।

সার্জারি পরবর্তী জীবন

এই সার্জারি গুলো সাধারণত উন্নত দেশে করা হয়। এবং এই সার্জারি করার পর অনেকেই সুখী জীবন যাপন করছেন। কিন্তু তারপরও কিছু কিছু মানুষ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয় যেমন

১। একঘরে হয়ে যেতে পারে যদি তার পরিবার, আত্মীয়স্বজন না বুঝে যে সে কি পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এবং অনেক সময় বুঝলেও সমাজের কাছে কিভাবে মুখ দেখাবে সেই চিন্তা করে পরিবারের মানুষ তাকে ত্যাগ করতে পারে।

২।সে সমাজে গ্রহণযোগ্য হবে কিনা সেই ব্যপারে কঠিন চাপ অনুভব করতে পারে।

৩। কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হতে পারে।

৪। ধর্মীয় ক্ষেত্রেও তিরস্কার এবং হুমকির শিকার হতে পারে।

এসকল কারণে সার্জারির পরও কেউ কেউ বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হন। এজন্য তখন কাউন্সেলর এবং মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিৎ।

পরিশেষে বলবো, এখন সময় এসেছে যৌন স্বাধীনতার , নিজের মত জেন্ডার আইডেন্টিটি বেছে নেয়ার,জেন্ডার ডিস্ফোরিয়া দূর করে সামনে এগিয়ে যাবার। যদিও এই পথটি মসৃণ নয়, অনেক বিপদসংকুল। কিন্তু কাউকে না কাউকে এগুতেই হবে। সেই  অপেক্ষায়।

লেখক নিজস্ব মতামত প্রকাশ করেছেন।  

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.