প্রাইড বনাম শেইম

তুমিল

আমাদের কমিউনিটিতে যৌনসম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে যে জিনিসটাকে সবথেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় সেটা হলো রোল/প্রেফারেন্স। সমকামীদের ৩ ধরনের রোল আছেঃ টপ, বটম এবং ভারসাটাইল। টপ হলেন যিনি দিচ্ছেন, বটম হলেন যিনি নিচ্ছেন আর ভারসাটাইল হলেন, যার একটা হলেই হলো। যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে সব রোল এর গুরুত্বই কিন্তু এক‌ই রকম কিন্তু তবুও আমাদের কমিউনিটি তে বটম-দের নিচু বা হেয় করে দেখা হয়। 

নিজেকে বটম হিসেবে স্বীকার করার থেকে ভারসাটাইল হিসেবে জানাতে দেখেছি অনেক বটমকে। কারন ভারসাটাইলদের সম্মান বটমদের থেকে বেশি। সব থেকে বেশি সন্মান টপদের, কারন তারা আধিপত্য বিস্তারকারি পুরুষ। কিন্তু এই টপদের কিন্তু ঘুরে ফিরে বটমদের কাছেই আসতে হয় তাদের চাহিদা মেটানোর জন্য তারপরেও কেন বটমদের নিচু চোখে দেখা হয়? বটম হওয়া কিন্তু হাসি-তামাশার ব্যাপার না। শুধু যে বটম হয় বা হয়েছে, সেই ভালো জানে যে এর সাথে কতো প্রস্তুতির প্রয়োজন। সময়মত নিজের পেট খালি করা, নিজের হাইজিন ভালো মত মেইন্টেইন করা, এবং সঙ্গমের পুরো সময় জুড়ে মাথা ভর্তি দুশ্চিন্তা তো আছেই, যেন বাজে কিছু না ঘটে যায়। আর টপদের তো শুধু কনডম লাগাও, লুব লাগাও আর ঢুকাও। ঝামেলা শেষ। এত পরিশ্রমের পরেও আমাদের নিয়ে হাসাহাসির শেষ নেই।

এখন কথা হল বটমদের নিয়ে কমিউনিটি তে শেমিং কারা করে? সত্যি বলতে টপ এবং বটম দুই গোত্রই এই কাজে জড়িত। টপদের ধারণা, যেহেতু তারা ডমিনেট করছে বেডে, তাহলে তারা পুরুষ এবং যেহেতু একজন বটম নিচ্ছে তাহলে সে ভালনারেবল। টপ এর থেকে বটম তাই নিচে অবস্থান করছে। সত্যি কথা হচ্ছে, একটা বটমকেই যদি আপনার শয্যাসঙ্গী বানিয়ে তার ভিতরে প্রবেশ করতে হয় তাহলে তাকে নিচু চোখে দেখাটা হিপক্রিসির পর্যায়ে যাচ্ছে না? আমার এক বটম বন্ধুকে একবার এক টপ গ্রাইন্ডারে বলেছিল, “কোন পসিশন লাইক কর” আমার বন্ধু বলেছিল “আমি আসলে ওরাল সেক্স পছন্দ করি” উত্তরে ঐ টপ বলেছিল “বটমের আবার পছন্দ-অপছন্দ!” আমি নিজেও একবার সঙ্গমের সময় যখন আমার টপ পার্টনারকে বলি যে আমার ব্যথা করছে, উত্তরে সে বলে “ধুর তোর আবার কিসের ব্যথা”। তখন বোঝা যায় আসলে বটমদের অবস্থানটা কোথায়।

বটমদেরও বটম শেমিং আরও অনেক বেশি মারাত্মক। স্পেশালি বাংলাদেশের কমিউনিটির বটমরা একজন আরেকজনকে পঁচানোর জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। আর কারো যদি কোন বাজে কাজের খবর ফাঁস হয়ে যায়, তাহলে আর নিস্তার নেই। সেই খবর পুরো ঢাকা ছড়িয়ে যাবে। আর মুখ দেখানোর জোঁ থাকবে না। মেয়েলি বটমদের নিয়ে পুরুষালি বটমদের একরকম ঘৃণা আর পুরুষালি বটমদের নিয়ে মেয়েলি বটমদের আরেকরকম আক্রোশ। 

আমি যেহেতু এক্সারসাইজ করি এবং একটু মাস্কুলার তাই টপরা প্রায় সময়ই বলে যে আমি নাকি বটম না, মিথ্যা বলছি। একটা বটম কিভাবে এরকম দেখতে হয়। আবার বটমরাও অনেক সময় বলেছে “you are such a waste, I like you and your body and dick. But unfortunately you are bottom too”। কিন্তু আমার সবসময়ই যে জিনিসটা মনে হয়েছে যে, সমস্যা টা আসলে বটম হওয়ার জন্য না। শেইম করা হয় তাদেরকেই বেশি যারা ছেলে হয়ে মেয়েলি আচরণ করে। আর কোন আচরণটা ছেলেলি আর কোনটা মেয়েলি সেটাও কিন্তু বেঁধে দেয় সমাজ। আর আমাদের এখানে টপ হলে তাকে অবশ্যই পুরুষালি হতে হবে। যদি মেয়েলি হয় তাহলে সে টপ হলেও বটম। আমি আমার পরিচিত অনেক বন্ধু যারা কিনা টপ রোল প্লে করে কিন্তু মেয়েলি তাদেরকেও জোড় করে বটম বানিয়ে বটম শেইম করতে পিছপা হই না আমরা।

আমাদের একাত্ম হওয়ার মাঝে রোল/ছেলেলিপনা মেয়েলিপনা/ক্লাস/গায়ের রঙ এসব যাতে বাঁধা না হয়। এমনিতেই আমাদের সমাজে বিভাজনের শেষ নেই। এমনিতেই সমাজ আমাদের গায়ে থুথু ছিটায়। এমনিতেই আমাদের মাঝে ভালবাসার অনেক অভাব। নতুন নতুন কারন তৈরি করে ঘৃণার প্রচার আমাদের মত দুর্বল এই কমিউনিটির যত দ্রুত সম্ভব পরিহার করা উচিৎ। অন্যকে ভালবাসা টা অনেক জরুরি ,কিন্তু তার আগে প্রয়োজন নিজেকে ভালোবাসা। নিজেকে ভালো না বাসলে অন্যকে ভালোবাসার কোন সুযোগই থাকে না। Just like Rupaul said “If you can’t love yourself, how the hell you are gonna love somebody else.”

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.