প্রকৃতি ও প্রেম

শিল্পীর চিন্তা

মিথলজিতে এমন একটা কনসেপ্ট আছে যে, একবার রাধা আর কৃষ্ণ তারা একে অপরের কাপড় বদল করেছিল। রাধা কৃষ্ণের জামাকাপড় পড়ে, আর কৃষ্ণ রাধার অলংকার, গহনা, পোশাক পড়ে। তো এখান থেকেই গানের কনসেপ্ট আসে- বনমালী তুমি , পরজন্মে হইয়ো রাধা। ছবিটা দেখে এখানে অনেকেই সেই কনসেপ্টটা ভাবছে।

কিন্তু এই ছবিতে তারা দুজনেই পুরুষ, একজন পুরুষ পুরুষের সাজে, আরেকজন পুরুষ নারীর সাজে । ‘প্রকৃতি ও প্রেম’ ছবিতে সূর্য , চন্দ্র, গাছপালা, আকাশের সুন্দর একটা প্রকৃতি দেখানো হচ্ছে। আমরা জানি যে নারী সত্ত্বাকে প্রকৃতি বলা হয়। এখানে সেই ব্যাপারটাকেও তুলে ধরা হচ্ছে।

ছবিতে দুজন মানুষ দেখানো হয়েছে, একজন পুরুষ বাঁশি বাজাচ্ছে, বাঁশির সুরের সাথে রেইনবো পতাকার রংধনুর বিভিন্ন রঙ ছড়াচ্ছে। আরেক পুরুষ নারী রূপে বসে আছে , সে তার প্রদীপের আলোয় আলোকিত করছে জগতকে।

এখন গায়ের রঙের কনসেপ্টটা , যিনি নারী রূপে আছেন তাকে নিয়ে অনেকে বলছে , তাকে আরও সুন্দর দেখাতে পারতেন। নারী সাজেও যে তাকে সুন্দর দেখাচ্ছে সেটা দেখাতে পারতেন, তাদের কাছে মনে হচ্ছে কদাকার। কিন্তু শিল্পী এখানে সেটা ভাবছেন না।

এখানে নারী সাজের পুরুষের গায়ের রঙ সবুজ দেখানো হয়েছে। নারী সত্ত্বা কে প্রকৃতি বলা হয় ,আর প্রকৃতি তো সবুজ। সেই নারী সত্ত্বার পুরুষের মাধ্যমে প্রকৃতির সবুজ ভাবটা আমাদের মধ্যে ধরা দেয়, ,বিলীন হয়ে যায়। সেই সবুজ নারী-সত্তাকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা নারী রুপী পুরুষের মাধ্যমে। নারী সাজের পুরুষটি প্রদীপের মাধ্যমে সমাজকে আলোকিত করছেন, সমাজকে নতুন রাস্তা দেখাছে, অনেক কিছু দেখাচ্ছে, বুঝানর চেষ্টা করছে, এই পুরুষটি নারীর সাজে, যিনি প্রকৃতির অংশ।

যিনি এখানে বাঁশিওয়ালা , বাঁশি বাজাচ্ছেন সেখান থেকে আমাদের রংধনুর পতাকার রঙ বের হচ্ছে, এই যে আমাদের গৌরবের রঙ, আমাদের নিজস্ব একটা রঙ, সেই রংটা বাঁশি বাজিয়ে ছড়িয়ে সবাইকে মোহময় করে তুলছে। সবাই হয়তো প্রেমিক না হতে পারুক, কিন্তু সবাই অন্তত তার বোধটাকে জাগাক, বোধটাকে জাগানর অংশ হিসাবে আমি বাঁশির সুরটাকে ধরেছি।

গায়ের রঙ এবং অলংকারের কনসেপ্টটা নিয়ে বলি দেখবেন পুরুষসাজে পুরুষের অলংকারের রঙ আর নারী রূপে পুরুষের গায়ের রঙ একই। আবার নারী রূপে পুরুষের অলংকারের রঙ, পুরুষ সাজের পুরুষের গায়ের রঙের সমান। এখনে আমি আমার প্রেমিককে অলংকার হিসাবে আমার শরীরে জড়াচ্ছি।

আরও অনেক ছোট ছোট ভাবনা আছে এই ছবির পিছনে, তবে ছবির মেইন ভাবনা যদি ধরা হয় এই ছবির মধ্যে সেটা হল প্রকৃতি আর প্রেম কে কোথাও এক সুরে মেলানো, এজন্য ছবির নাম প্রকৃতি আর প্রেম, এটাই ছবির কনসেপ্ট।

হিন্দু কোন মিথলজিকেকে ভেবে আমি আঁকাইনি । এরকম একটা কনসেপ্ট হিন্দু মিথলজিতে আছে, এখন অনেকে বাঁশি বাজানো দেখলেই তাকে কৃষ্ণ ভাবি, পাশে কোন কন্যা থাকলে তাকে রাধা ভাবি, তবে এই ভাবনা থেকে বের হওয়া উচিত। তবে এটা সবার স্বতন্ত্র ভাবনা।এটা অনেকেই ভেবেছে।

তবে আমার ভাবনা, সাধারণ একটা গ্রাম বাংলায় একজন পুরুষ নারীরুপে সেজেছেন আর একজন পুরুষ পুরুষরুপে সেজেছেন।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.