
যখন স্কুলে পড়তাম তখন আমার সাথে যাদের বন্ধুত্ব হত তারা আমার বেস্টফ্রেন্ড হতে চাইত। আমি যার সাথে মিশতাম তার সাথে খোলা মনেই কথা বলতাম আর বলার থেকে শুনতাম বেশি তাই হয়তো তারা লাইকও করতো বেশি।
মাঝে মাঝে একজনের সাথে বসা হত আবার টিচার সিট চেঞ্জ করে দিলে আরেকজনের সাথে। এভাবে দু’টি ফ্রেন্ড সার্কেল হত। দুই জায়গাতেই আমি বেশি প্রাইওরিটি পেতাম। এবং এটা নিয়ে আবার ঝামেলাও ফেইস করতে হত। লাইক এক বান্ধুবি আমাকে আরেক বান্ধুবির সাথে মিশতে দেখলে রাগ হত। পরে দেখতাম আবার কান্নাও করে। আমাকে কাগজে চিঠি লিখে পাঠায় যে আমি স্বার্থপর কারন তাকে রেখে আরেকজনের সাথে বসেছি। পরে বান্ধুবিকে মানাতে হত আমার। ওকে মানাতে যেয়ে আমার আরেক সার্কেলের বান্ধুবির সাথে আবার এই একি অবস্থা হত। আর প্যারা খেয়ে যেতাম। ৯ এ ওঠার পর তারা সাইন্সে চলে যায় আর আমি নিয়েছি কমার্স। তাই আলাদা সার্কেল হয়।
তখন ফেইসবুকেও আরেকটা বান্ধুবি হয়। এই বান্ধুবির সাথে কথা দেখা এবং বিপদাপদে পাশে ছিলাম বলে আস্তে আস্তে অনেক ভাল ফ্রেন্ডশিপ হয়ে দাড়ায়। ওর প্রতি একটা মায়া জন্মায়। তার সাথে সময় বেশি কাটাতাম তেমনি বাহিরে গেলে বেশ খরচ করতাম। আর স্কুলের একটা ফ্রেন্ডের সাথে কলেজ পর্যন্ত আসছি। ওর সাথে আমার বন্ধুত্ব ছিল দোস্ত টাইপের, কথা বললে বলতাম আবার রেস্টুরেন্টে গেলে যেতাম না গেলে নাই। তাই ও আমাকে পিঞ্চ মেরে বলত যে তোর ওই ফেসবুকের বান্ধুবিই তো তোর সব। আমাদের কেন ভাল রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাবি!? হাহাহাহ!
এরকম আমার সাথে বার বার হয় বিধায় আমি ফেইসবুকে ফান করে একটা স্ট্যাটাস লিখি যে আমি আমার মেয়ে ফ্রেন্ডদের প্রতি সফট, মেয়েদের কে আমি না বলতে পারি না। এই স্ট্যাটাসে একজন কমেট করে আমি নাকি লেসবিয়ান! তখন লেসবিয়ান মানে কি সেটাই পুরোপুরি বুঝি
না। অনলাইনে রিসার্চ করে ব্যাপার টা বুঝার পর আমি লজ্জা পেয়ে সাথে সাথে ব্লক দেই এবং স্ট্যাটাস ডিলিট করি।
আমার ছেলেদের সাথে চলতে কোন প্রব্লেম ছিল না বাট পরিবার থেকে আমাকে এমন বুঝানো হয়েছে যে পর ছেলেদের সাথে কথা বলা, তাদের দেখা সবই পাপ ও হারাম। যার জন্য আমাকে লেখা পড়ার জন্য ভর্তিই করানো হয়েছিল গার্লস স্কুল কলেজে।
ছোট কালে মানুষ যা শুনে তাই তার মাথায় নিয়ে বড় হয়। তেমনই আমার মাথায় ছেলেদের সাথে কথা বলা তাদের দিকে তাকানো এবং মেশা যে একটা পাপ এটা এমন ভাবে গেথে যায় আমি এখনো ছেলেদের সাথে মিশতে পারি না। একজনের সাথে সম্পর্কে জড়াতে নিয়েছিলাম কিন্তু যখন ছবি চায়, ভিডিও কল বা বাহিরে দেখা করা এবং ফোনে কথা বলার সময় আজে বাজে কথাতে জড়াতে চায় তখন সব ইন্টারেস্ট হারিয়ে ফেলি। আমি ভাবতাম যে বিয়ের আগে সম্পর্ক হলেও এমন কিছু না হোক, একবারে বিয়ের পর হালাল ভাবে যা হওয়ার হবে কিন্তু এই সমাজে এমন সম্পর্ক কে করে?
তাই কোন ছেলের সাথে সম্পর্ক করতে পারিনি। ১ সপ্তাহের বেশি কোনো ছেলের সাথে কথা বলা আমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাড়াত, মানসিক ভাবে অস্বস্তি অনুভব হত ছেলেদের এসব কাজের জন্য। সুন্দর ছেলেদের দেখে ক্রাশ খেয়ে ফেলতাম মাঝে মাঝে বাট আগ বারিয়ে কথা বলতাম না আর কেও বলতে আসলেও ছাড় দিতাম না কারন ছেলেদের নজর খারাপ এমন ধারণা ছিল আমার। তাছাড়া ছেলেদের ফ্রেন্ড হয়ে লাভ কি, শুধুই গুনাহগার হব। প্রেম করাতো আরও গুনাহের কাজ। করলে একবারে বিয়েই করবো এই ভেবে ছেলেদের থেকে ১০ হাত দূরে ছিলাম।
একাই সুন্দর জীবন যাচ্ছিলো। হঠাৎ ফেসবুকে একজন মেয়ের সাথে পরিচয় হয়। তার সাথে ফ্রেন্ড হবার পর দেখলাম ছেলেরা মেয়ে দের সাথে যেভাবে ফ্লার্ট করে, এই মেয়েটা আমার সাথে এভাবে কথা বলে। আমি ভাবলাম মেয়েদের সাথে এভাবে কথা বললেই কি আর না বললেই কি। মেয়েদের সাথে তো কথা বা দেখা করা হারাম বা গুনাহের কাজ না।
কিছু দিনের মধ্যেই সে আমাকে তার ভালবাসার কথা বলে। তখন আমি নিজেকে আটকাতে পারলাম না। আমিও তার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ি। প্রতিদিন আমি নিজেকে প্রশ্ন করেছি যে আমি ছেলেদের সাথে দূর্বল হতে পারলাম না কিন্তু একটা মেয়েকে এতো সহজে মেনে নিলাম। এই সম্পর্কও তো হারাম। একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক হলে যতটুক না পাপ, একটা মেয়ের সাথে এমন সম্পর্ক করা তো তার থেকে আর বড় মহাপাপ।
অনেক চেষ্টা করেছি আমার মন কে বুঝাতে যে এটা ঠিক না। কিন্তু বার বার দূর্বল হয়ে পড়েছি তার ভালবাসার সামনে। তাকে মন থেকে ভালবেসে ফেলেছি আমিও। আমি অনেক ইসলামিক পরিবারের মানুষ এবং ইসলামিক ম্যানারস নিয়ে চলি সবসময়। কিন্তু নিজের প্রতি নিজেই আমি নিরাশ কারন আমার থেকে এমনটা আশা করিনি আমি।
এতে আমি কাকে দোষারোপ করবো? আমার পরিবারকে? অবশ্যই না। কারন ইসলামে বলা আছে পরপুরুষের সাথে মেশা হারাম এবং প্রেমের সম্পর্ক কার সাথেই জায়েজ না একমাত্র স্বামী
স্ত্রী ছাড়া। আর পরিবার আমাকে শুধু ছেলে থেকে দূরে থাকার শিক্ষা দিয়েছি, মেয়ে দের সাথেও যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হারাম তা বলেনি কিন্তু আমি তা নিজেই জেনেছি বুঝেছি। তবুও তো জেনে শুনে এই পথেই চলে গেলাম। সুতরাং অন্যের দোষ দিয়ে কোন সমাধান নেই।
আমার ভেতরেই এমন ভিন্নতা ছিল ছোট থেকে যা আমি মানতে রাজি ছিলাম না। কিন্তু এখন মেনে নিয়েছি। কারন আমার মতো আর ৮/১০ টা মেয়েও ইসলামিক পরিবার থেকে বড় হয়েছে। তারাও গার্লস স্কুল কলেজ থেকে শিক্ষা অর্জন করেছে কিন্তু কই? তারা তো বিয়ে করে সংসার গড়েছে। তাহলে আমার কেনো অস্বস্তিবোধ হয় এখন যখন বিয়ের জন্যে ছেলেদের সাথে আমার কথা বলতে হয়। আগে তো ছেলেদের সাথে ফ্রেন্ড বা প্রেম করতে সমস্যা ছিল কারন বিয়ে ছাড়া প্রেম হারাম তাই আর এখনতো আমার জায়েজ ভাবে কোনো ছেলেকে বিয়েও করতে মন চায়না।
ছোট কালে পাশের ফ্লাটের সুন্দরী আপুদের দেখতে ভালো লাগত তাই বারান্দায় যেতাম। শপিং এ মেয়েদের দেখলে ভাব নিয়ে দোকানে হাটতাম। ফেসবুকে মেয়েরা কমেন্ট করলে রিপ্লাই দিতাম আর ছেলেদের করতাম ইগনোর। এক রিলেটিভের গ্রামে গিয়েছিলাম। সেখানে এক মেয়ে আমার খেলার সাথি হয়েছিল। তখনও সে যেদিকে যেতো আমিও যেতাম, যে রং এর কাপড় পড়তো আমিও পড়তাম। সে কোনো গাছের পাতা ছিড়লে আমিও তা ছিড়তাম। কি আজব! একটা ছেলের সাথে আমি এভাবে খেলার চিন্তাও করতে পারি না কিন্তু একটা মেয়ের সাথে আমি এমন স্বাচ্ছন্দ বোধ করতে পারি।
Source: BAH ( Bangladesh Against Homophobia)