সমারূঢ় : উপক্রমণিকা

অরিত্র হোসেন

(১)

কথাসাহিত্যকে সাহিত্য সহজে স্থান দেয়নি, অনেক ধরণের কণ্টকপূর্ণ অগ্নিপরীক্ষা পাশ করেই কবিতা, নাটক ছাপিয়ে এখন দিব্যি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তবে কথাসাহিত্যকে আড়চোখে দেখা এখনও বন্ধ হয়নি। মধ্যবিত্ত শ্রেণির খাদ্য আর গরীবের সোনার হরিণ— ধনীদের কাব্যপ্রেমী মনোভাবকে কথাসাহিত্য প্রায়ই বুড়ো আঙুল দেখায়, তবে ক্ষমতার দাপটে হিমশিম না খাওয়া থেকে নিস্তারও পাওয়া যায় না। কথাসাহিত্যকে হেয় করার ইতিহাস নতুন নয়, বরং যুগ যুগ ধরে চলে আসা সরব ও নীরব ষড়যন্ত্র উপন্যাস, উপন্যাসিকা আর বিশেষ করে ছোটগল্পকে তাড়াতে পারেনি, বরং হিতে বিপরীত হয়েছে। মানুষজন নিজেকে লেখার মধ্যে দেখতে, বুঝতে এবং লিখতে শিখেছে। ধর্ম, বর্ণ ও লিঙ্গ নির্বিশেষে সবক্ষেত্রেই কথাসাহিত্য প্রমাণ করতে বাকি রাখেনি যে তা এক অদম্য তরঙ্গ।

কথাসাহিত্য নিয়ে ভারী ভারী কিছু না বললে হয়তো ছোটগল্পের সংকলনের ভূমিকা নাটকীয়ভাবে সার্থক হবে না। সব জায়গার মতোই প্রান্তিক লিঙ্গ ও যৌন বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর কমিউনিটির মধ্যেও কথাসাহিত্যকে নিয়ে টানাহেঁচড়া করা হয়। ২০১৫ সালের কথা। কবিতা সংকলনের দায়িত্ব পেলাম। বয়স কম, মনোবলের অবস্থা নড়বড়ে। সেসময় আমি অনলাইনে ছোট গল্প, উপন্যাসিকা খুব ভক্তি নিয়ে লিখতাম, যেন কথাসাহিত্য ছাড়া আমার জীবনের কোন কাজই সার্থক নয়। কবিতাও যা দু’চারটা লেখা হতো, কিন্তু ছোটগল্পের প্রতি অনুরাগ মলিন হতো না। তাই প্রস্তাব রাখলাম কবিতার সংকলন না করে, একটা ছোট গল্প সংকলন করা যায়। বুদ্ধি আমলে  নেওয়া হল না। 

বাংলাদেশের প্রথম ক্যুইয়ার কবিতার বই ‘রূপঙক্তি’ সম্পাদনা এবং প্রথম ক্যুইয়ার চিঠির বইয়ের সহ-সম্পাদনা করেছি। ছোটগল্প সংকলনের খায়েশ দিনদিন আরও প্রগাঢ় হতে শুরু করল। মাঝেমধ্যে আমি প্রায়ই শুনি “এইসব বই করে কোন লাভ নেই”, “ইউজলেস”, “যারা লেখালেখি পারে না তারাই লেখে ছোটগল্প”, “কমিউনিটির মানুষজন গল্প লিখতে জানে না তাই ছোটগল্প বই ছাপার কোন মানে নেই”— ইত্যাদি। লেখালেখি করি বলেই ছোটগল্পের প্রতি আমার মোহ থেকেই ছোটগল্পের সংকলনের প্রকাশ তা বললে খুব ভুল হবে। কমিউনিটিতে ছোটগল্পের প্রভাব কোনোভাবেই উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। ২০১১ থেকে বাংলাদেশে ফেইসবুকের ব্যবহার বাড়তে শুরু করে। যারা নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে চিন্তিত, যারা নিজেদের যৌনতা নিয়ে দ্বিধায় দিন কাটাচ্ছে— সেধরণের কিছু মানুষ ছদ্মনাম দিয়ে, পরিচয় গোপন রেখে ফেইসবুক প্রোফাইল তৈরি করে। ধীরে ধীরে একজন আরেকজনের সঙ্গে যোগাযোগ, তারপর বন্ধুত্ব, এরপর কিছু পেইজ ও গ্রুপ চালু হয়। মানুষ নিজেকে প্রকাশ না করতে পেরে কবিতা, গল্প বা ছোট লেখা লিখে মনের কথাগুলো জাহির করতো, অন্য কাউকে বলতে না পারলেও ফেইসবুকে তা সম্ভব হচ্ছে। প্রণয়, স্বাধীনতা, নিসর্গ, যৌন অভিলাষ, অস্তিত্ব, সমাজ, রাজনীতি, পরিবার, সম্পর্ক, লিঙ্গ বৈচিত্র্যতা, সুখ-দুঃখ, কামনা-যাতনা, স্বপ্ন-দুঃস্বপ্ন— কল্পনায় রঙবেরঙের কালিতে শব্দ দিয়ে একেকটি লেখা উন্মেষিত হয়েছে। গতানুগতিক সাহিত্যের বইগুলোতে নিজেদের না দেখতে পেরে, হতাশায় জর্জরিত হয়ে লিখেছে। আবার অনেকে কোনো মান অভিমানের তোয়াক্কা না করে, লিখেছে প্রশান্তির জন্য।

বিচ্ছিন্ন কয়েকটি উদ্যোগ থেকেই, পরবর্তীতে বড়সড়ভাবে পেইজগুলো সাহিত্যপাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা শুরু করে। নতুন নতুন ছোট গল্প প্রতিদিনই প্রকাশ হতে থাকে অনলাইনে। কিছু কিছু লেখক দারুণ জনপ্রিয়তা লাভ করেন এবং সে হিসেবে এক বিশাল পাঠকচক্র তৈরি হয়। যতই বাড়তে থাকে, ততই মান নিয়ে কাদা ছুঁড়াছুঁড়ি চলতে থাকে। আমিও লেখালেখির মাধ্যমে নিজেকে এই বিশাল বলয়ের মধ্যে হামাগুড়ি দিয়ে এপাশ-ওপাশ করেছি তবে সাহিত্যিক সার্টিফিকেট দেয়নি সেই সাহিত্য সমাজ। বিভিন্ন পেইজের মধ্যে এক ধরণের প্রতিযোগিতা লেগেই থাকে, কে কতো মানসম্পন্ন গল্প প্রকাশ করছে, বড় বড় লেখকদের নিজেদের পেইজে রাখার নিয়ে লড়াই— আর কতো কি। কোনোভাবেই এই বিরাট প্রভাব অস্বীকার করা যায়না। ২০১৬ তে জুলহাজ-তনয় হত্যাকাণ্ডের পর এক সুনসান নীরবতা চলে আসে, অনেক প্রভাবশালী লেখক প্রোফাইল বন্ধ করে দেয় ও পেইজগুলো গল্প প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকে। সেই ঘটনার রেশ যদিও এখনও কাটেনি, ছোটগল্পের দাপট একটু ম্লান হলেও— কিছু মানুষজন চালিয়ে যাচ্ছে তাদের শখের চান্দের গাড়ি। 

ছোটগল্প লেখালেখির মাধ্যমে প্রান্তিক লিঙ্গ ও যৌন বৈচিত্র্য জনগোষ্ঠীর মানুষজন এক বিপ্লব শুরু করে, এর মাধ্যমে অনেকেই আত্মপ্রকাশ করে এবং অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রামে যোগদান করে। তারমধ্যে আমি একজন। যদিও লেখালেখি করে সাড়াশব্দ করতে পারিনি বা মানুষের ভূয়সী প্রশংসা পাইনি— তবে যারা প্রকাশ হতে চায় কিন্তু পারে না তাদেরকে জন্য অন্তত কিছু করার চেষ্টা করেছি। কবিতা, চিঠির পর এই গল্প সংকলনও হারিয়ে যাওয়া, রুদ্ধ হওয়া, খাঁচায় বন্দী আওয়াজগুলোর বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে। মান যাচাইয়ের এক ভুল আবরণের মধ্যে অনেকেই বাস করে, আর সেখান থেকে আসে এক ধরণের অদৃশ্য অজ্ঞতা। ছোটগল্পের মাধ্যমেই বাংলাদেশের ক্যুইয়ার সাহিত্য প্রসারিত হয়েছে, কিন্তু আজ প্রায় দশ বছর পর আত্মপ্রকাশ ঘটলো প্রথম ক্যুইয়ার ছোটগল্প সংকলন ‘সমারূঢ়’ – এর। 

(২)

‘In medias res’ (in the midst of things)— এর আক্ষরিক বাংলা ‘জিনিসগুলোর মধ্যে’ বুঝালেও সাহিত্যে এর ব্যবহার ভিন্ন। মূলত সাংঘাতিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাসমূহ ঘটতে থাকার মাঝখানেই একটি ন্যারেটিভ যাত্রা শুরু— মহাকাব্যগুলোতে এধরণের কাঠামো দেখা যায়। আমার সঙ্গে অনেকেই দ্বিমত পোষণ করতে পারেন, তবে ‘In medias res’ বলতে আমি তাই বুঝতে পারি। জন মিল্টনের ‘প্যারাডাইস লস্ট’, আর আমাদের মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘মেঘনাদবধ কাব্য’— দুটোই সেই ধাঁচ অনুসরণ করেছে। সে অনেক পুরানো ধাঁচ। হোমার এর ‘ইলিয়াড’ আর ভার্জিলের ‘ঈনিড’ এ তা লক্ষ্য করা যায়। আর দান্তের ‘ডিভাইন কমেডি’ এর কথা নাই বললাম। লিখতে শুরু করলে, পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লেখা যাবে। বুঝার সুবিধার্তে, যাদের ‘হ্যামলেট’ পড়া আছে, তারা কাঠামোটি আন্দাজ করতে পারবেন। সাধারণত কথাসাহিত্যিকরা এই টোটকা খুব সানন্দে ব্যবহার করে। হঠাৎ করেই কাহিনি শুরু, আর যতই অগ্রসর হয় ততই অতীতের কথামালা প্রয়োজন অনুযায়ী পরিপাটি করে তীরের মতো ছুঁড়ে দেওয়া হয়। ‘সমারূঢ়’-এর বিভাগ বন্টন সেই আলোকেই করার প্রচেষ্টা করা হয়েছে। 

বিভক্তকরণের সিংহভাগ অনুপ্রেরণা এসেছে ‘ডিভাইন কমেডি’ ও ‘প্যারাডাইস লস্ট’ থেকে। বইটি দিনের চারটি বিভাগ — পূর্বাহ্ণ, মধ্যাহ্ন, অপরাহ্ণ ও সায়াহ্ন এ বিভক্ত, তবে শুরু মধ্যাহ্ন থেকে। বিভাগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ক্রমাগত ভাবছিলাম কিভাবে এই বইটির ভিন্ন ভিন্ন গল্পগুলো সাজানো যায়। প্রত্যেক গল্পের ধাঁচ আলাদা, আশা-প্রত্যাশা ভিন্ন; কিভাবে একটি কনসেপ্টের আদলে পুরো বইটিকে একটি সম্পূর্ণ ন্যারেটিভে প্রকাশ করা যায়। বিভাগের ব্যাখ্যা দাঁড়ায় এরূপ— ‘মধ্যাহ্ন’ এ বিশৃঙ্খলা-হানাহানি, ‘অপরাহ্ণ’ এ হানাহানির পর অন্ধকার নামার আগে একটু প্রশান্তির বাতাস; ‘সায়াহ্ন’ এ ঘুটঘুটে অন্ধকারের সুনসান নীরবতা এবং ‘পূর্বাহ্ণ’ তে তিমিরের কুয়াশাতে ধীরে ধীরে মিটে গিয়ে আশা দেখা দেয়। হয়তো গল্পগুলো পুরোপুরি পাঠকদের এই ন্যারেটিভ গাঢ়ভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করবে না, যদিও দান্তে  আশা ভরসা গ্লানি নিয়ে ‘ইনফার্নো’তে তার যাত্রা শুরু করে ‘প্যারাডিসো’ পর্যন্ত ঠেলে নিয়ে গিয়েছেন— আপনাকেও সেই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে তা বলা হচ্ছে না, তবে অল্প খানি প্রচেষ্টা কাম্য।

প্রয়োজনীয় সম্পাদনা ব্যতীত গল্পগুলোতে সব লেখকদের সৃষ্টি অক্ষত রাখা হয়েছে। বিভিন্ন লিঙ্গ ও যৌন পরিচয়ের তিরিশজন লেখকের সৃষ্টি স্থান পেয়েছে। দুই-তিনজন বাদে বেশীরভাগ লেখকের এই প্রথম ছাপা অক্ষরে ছোটগল্প প্রকাশ পেয়েছে। সংকলনের জন্য প্রায় ছয়মাসের অধিক সময় গল্প সংগ্রহ করা হয়। বাছাই কার্যক্রম বেশ জটিল ছিল, চেষ্টা করা হয়েছে শুধু মান নয় গল্পের সবধরনের আঙ্গিক বিবেচনা করে সঠিকভাবে স্থান দেওয়া। নিখুঁতভাবে কাজ করা সম্ভব নয়, তবুও যথা সাধ্য চেষ্টা করা হয়েছে। স্থান  না পাওয়া গল্পগুলোর লেখকদের কাছে দুঃখিত। বইয়ের কাজে যুক্ত সকল মানুষজনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সবধরনের ভুল অনুগ্রহ করে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। বইয়ের অর্থায়নে নানা ধরণের অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছে, এই যাত্রায় যারা গাছের মতো ছায়া দিয়ে সব ঝামেলা দূর করে বইয়ের প্রকাশনার চাকা সচল রেখেছেন তাদেরকে কোনো ভাষায় ধন্যবাদ দেওয়া শেষ করা যাবে না। তারপরও, অসংখ্য ধন্যবাদ। 

বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষার গল্প রাখা হয়েছে। বাকবিতণ্ডা হতে পারে এই ব্যাপার নিয়ে এবং যুক্তিগুলো একইসাথে গ্রহণযোগ্য কিন্তু খণ্ডানোর যোগ্যতা রাখে। ভাষার ব্যবহারের স্বাধীনতায় আমরা বিশ্বাসী এবং ভবিষ্যতে একাধিক ভাষার লেখাসমূহ বইগুলোর মধ্যে রাখার ব্যবস্থা করা হবে। 

সঠিক উপস্থাপনা ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার দৃঢ় পণ থাকলেও, পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় আমাদের পক্ষে বাংলাদেশের সকল প্রান্তিক ধর্ম, জাতি, শ্রেণির লিঙ্গ ও যৌন বৈচিত্র্য জনগোষ্ঠীর সমান উপস্থাপন সম্ভব হয়নি। যদিও আমরা সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছি এবং পরবর্তীতে সে ক্ষেত্রে কাজ করার উদ্যোগ নিচ্ছি। যদিও সংকলনে সমকামী পুরুষ লেখকদের গল্প আধিপত্য বিস্তার করছে, তবুও সমকামী নারী, নন-বাইনারী, হিজড়া, রুপান্তরকামী নারীপুরুষ, ক্যুইয়ার, উভকামীসহ — সকল বৈচিত্র্যের লেখা আমরা নিশ্চিত করেছি। আমরা অবাকভাবে লক্ষ্য করেছি যে, হিজড়া সাহিত্যিকদের সংখ্যা নেই বললেই চলে। আদিবাসী ক্যুইয়ার লেখকদের সংখ্যাও খুব সীমিত। দায় আমাদেরকেই নিতে হবে, এবং সে উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে এই অসমতা দূরীকরণে সোচ্চার হতে হবে। 

(৩)

‘প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রে কবিদের রাখেননি’— সাহিত্যিকদের উস্কানোর জন্য এই এক বাক্যই যথেষ্ট। বিশেষ করে কবিরা এই এক কথা শুনতে শুনতে আর জবাব দিতে দিতে হয়রান। এক নামীদামী প্রাবন্ধিকের বিস্তর ডিফেন্স মাথা ঝিমঝিম করেছিলো অনেকক্ষণ। বুঝতে বাকি নেই দার্শনিক বন্ধুরা তাকে বেশ ক্ষেপাত। কবি হোক আর সাহিত্যিক হোক সমাজে তাদের নিয়ে উচ্চবাচ্যের পরিমাণ ঢের। প্রায়ই শুনি, এতো গল্প, উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ লিখে লাভ কি? কোনো উন্নতি আসবে কি? সঠিক প্রত্যুত্তর কিন্তু গুছিয়ে বলা সম্ভব নয়, কারণ সেটি এক বিশাল প্যাঁচানো আলোচনা। শতাব্দীর পর শতাব্দী অগণিত আন্দোলনে, সংগ্রামে সাহিত্য পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সাহিত্যকে হেয় করার ইতিহাস আজকের নয়। তবে সাহিত্যের ধারা নিয়ে সমালোচনা একদম ভিত্তিহীন বললে ডাহা মিথ্যানামা যে হয়ে যাবে। বাংলাদেশে প্রান্তিক লিঙ্গ ও যৌন বৈচিত্র্য জনগোষ্ঠীর সাহিত্যধারা খুব কৌশলে চলছে তা নয়। বিক্ষিপ্ত এক বাঁকহীন নদীর মতো তার চলন। সংশোধনীর জন্য আরও সাহিত্যচর্চা বাড়ানোর চেয়ে সাহিত্যকে সঠিক মর্যাদা দেওয়া অধিক দরকারি। হেয় না করে, উদ্দীপনা শ্রেয়। 

একুশে বইমেলা হয়। আগে যাও কয়েকটা বইয়ে আমাদেরকে তুলে ধরা হতো সেও পথ রাষ্ট্র, সমাজ বন্ধ করে দিয়েছে। পুরো সিস্টেম আমাদের বিপক্ষে। আমাদের কথা কেউ বলতে চাইলেও নিরাপত্তার ভয়ে কলমের কালি শুকিয়ে যায়। দিনের পর দিন অবহেলা, অবজ্ঞা আর উপেক্ষার গ্লানি শক্তিতে পরিণত করে আমরাই নিজেদের বই নিজেরাই বের করছি। যেভাবে সম্ভব, আমাদের কণ্ঠস্বর রুদ্ধ করতে দিব না, লেখার কালি কেড়ে নিতে দিব না। গতানুগতিক সাহিত্যে স্থান না পেলেও, এই ছোটগল্প সংকলনে যথাসম্ভব চেষ্টা করা হয়েছে। অস্তিত্ব বারবার মুছে ফেলার শত প্রচেষ্টা বৃথা যাবে, যদি আমরা সংঘবদ্ধভাবে টিকে থাকার সংগ্রামকে ভালোভাবে বাঁচিয়ে রাখি। দায়িত্ব সবারই। 

‘সমারূঢ়’ শব্দের অর্থ বিশেষভাবে অধিষ্ঠিত। আমরা নিজেরাই আমাদের জায়গা বিশেষভাবে করে নিয়েছি, আমাদের শক্তি ও মনোবলের জোরেই। কবিতার নামে একটি ছোটগল্প সংকলনের নামকরণ করা হয়েছে, যদিও সেই কবি বনাম কথাসাহিত্যিক বিতর্ককে ত্বরান্বিত করবে, তবুও বলতে চাই – 

 ‘বরং নিজেই তুমি লেখোনাকো একটি কবিতা—’

ঢাকা       

২৮শে মাঘ, ১৪২৭                

মন্দ্রসমগ্র এক “সমারূঢ়” হল বাংলাদেশের প্রথম কুইয়ার ছোটগল্প সংকলন

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.