বয়ঃসন্ধিকালে প্রথম সমকামী হওয়ার অনুভূতি এবং শারীরিক-মানসিক দ্বন্দ্ব

ঙা

আমরা এমন একটি দেশে থাকি যেখানে এলজিবিটিকিউ কমিউনিটির প্রতিটি সদস্য কোন না কোন ধর্মের অনুসারী৷ তাই আমরা চাইলেও আমাদের জীবন থেকে ধর্মের প্রভাবকে অস্বীকার করতে পারি না। আজ আলোচনা করব আমাদের জীবনের সেই অধ্যায়টি নিয়ে যেই সময়টাতে আমাদের প্রথম উপলব্ধি হয় যে আমরা সমকামী এবং এর ফলস্বরূপ আমাদের একটা মানসিক যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

আমরা সবাই জীবনের একটা সময় বয়ঃসন্ধিকালের মধ্য দিয়ে যাই৷ বয়ঃসন্ধির একেবারে শুরুর দিকে আমাদের মধ্যে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন শুরু হয়৷ শারীরিক-মানসিক পরিবর্তনের ফলে অনেককেই ভালো লাগে তখন৷ এই সময়টাতে অনেকে তো বুঝেও না যে এটা একটা অন্য রকম ভালো লাগা৷ অনেকে এটাও বুঝে না যে এটি আদতে যৌন আকর্ষণ৷ বা একেই সমকামিতা বলে৷ বয়ঃসন্ধিকাল যত এগোতে থাকে পারিবারিক, সামাজিক বা ধর্মীয়, কোন না কোনোভাবে একটা সময় উপলব্ধি ঘটে নিজের সমকামী হওয়ার ব্যাপারে৷ সাথে এটাও জানতে পারি পরিবার, সমাজ বা ধর্ম কোনটাতেই এর কোন স্বীকৃতি নেই৷ ফলে উপলব্ধির সাথে সাথে শুরু হয় একটা অস্তিত্বের লড়াই৷ নিজের সাথে নিজেরই যুদ্ধ৷ 

এই যুদ্ধ যত দীর্ঘস্থায়ী হয় ততই হয়ে ওঠে ভয়ঙ্কর৷ এই সময়টাতে মোটামুটিভাবে তিন প্রকারের মানসিকতা দেখা যায় সমকামী মানুষদের থাকে৷ প্রথম পক্ষ হয় প্রচণ্ড ধার্মিক, দ্বিতীয় পক্ষ মধ্যপন্থি ধার্মিক আর তৃতীয় পক্ষ ধর্মের প্রতিই উদাসীন৷ এই তিন প্রকারের সমকামীদের মধ্যে মানসিক যুদ্ধটাও ভিন্ন রকম হয়ে থাকে৷

প্রথমেই আসি যারা প্রচণ্ড ধার্মিক এবং যাদের পরিবারও বেশ রক্ষণশীল৷ এরাই মূলত সবচেয়ে বেশি কঠিন মানসিক পরিস্থিতির স্বীকার হয়৷ তাদের সামনে একদিকে পরিবার, সমাজ ও পবিত্রতম ধর্ম আর অন্যদিকে থাকে নিজস্ব সত্ত্বা৷ সনাতন চিন্তা-ভাবনা ছেড়ে পরিবার, সমাজ, ধর্মকে অস্বীকার করে নিজের সত্ত্বাকে আপন করা খুব সোজা একটা কাজ মোটেও না৷ এমন পরিস্থিতিতে মোট তিনটা রাস্তা খোলা থাকে৷ প্রথমত নিজের সত্ত্বাকে অস্বীকার করে সমকামিতার বীজ অঙ্কুরিত হওয়ার আগেই তার বৃদ্ধি বন্ধ করে দেওয়া৷ দ্বিতীয়ত মধ্যপন্থি হয়ে নিজের ও পরিবার, সমাজ, ধর্ম উভয়েরই চাওয়া পূর্ণ করা৷ আর নয়তো একেবারে সংশয়বাদী বা নাস্তিক হয়ে যাওয়া৷ 

সমকামীদের মধ্যে খুব কম পরিমাণ মানুষই স্বেচ্ছায় ধর্মকে নির্বাচন করে৷ এরা সারাজীবন নিজের সত্ত্বাকে দমিয়ে রেখে জীবন্ত লাশের মতো বাঁচে৷ সাথে থাকে কেবল একটাই সান্ত্বনা, “আমি ধর্মের পথে আছি৷” মধ্যপন্থি পথ অধিকাংশ সমকামীই নির্বাচন করে৷ নিজের ও সমাজ দুইটার চাওয়াই পূরণ করে৷ কিন্তু দিনশেষে নিজের নৈতিকতার মানদণ্ডে তারা হেরে যায়৷ জীবনের প্রতিটা মুহূর্তেই অনুশোচনা হয়। জীবনটাকে অসহ্য বোধ হয়। এই অনুশোচনা বোধ অবশ্য ব্যক্তি-ভেদে ভিন্ন রকম হতে পারে৷

নাস্তিক হওয়ার পথটাও খুব কম সংখ্যক মানুষ বেছে নেয় যদিও৷ নাস্তিক হওয়ার আগে অনেকেই সংশয়বাদী হয়৷ পরে অনেকে সংশয়ের মধ্যেই থেকে যায় আবার অনেকেই হয়ে যায় নাস্তিক৷ 

যারা প্রথম থেকেই মধ্যপন্থি তাদের জন্য মধ্যপন্থি রয়ে যাওয়া বা পুরোপুরি ধর্ম ত্যাগ করাটা কিছুটা সোজা বটে৷ কিন্তু তারপরও নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে যথেষ্ট ভাবতে হয় তাদেরকেও৷ 

যারা আগে থেকেই ধর্মের প্রতি উদাসীন তারা ধর্ম ত্যাগের সিদ্ধান্তই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নেয়৷ তাদের মতে ভণ্ড ধার্মিকের চেয়ে নাস্তিক হওয়াটাও অনেক ভালো।

বয়ঃসন্ধির এই সময়টা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ আমাদের তাই অবশ্যই খুব ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত৷ প্রকাশকে রুদ্ধ করতে গেলে যে ফাঁকাতলে বিকাশও স্থবির হয়ে যায়, সেটা ভুলে গেলে কিন্তু মোটেও চলবে না।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.