
প্রদীপ রায়
বলা চলে আজকে প্রথম কেউ আমার শরীরে প্রবেশ করলো। ক্লান্ত লাগছে, কিছুটা বিষণ্ণ। সে আমার বন্ধু, কলেজ বেলা থেকে, খুব ভাল বন্ধু। প্রেমিক নয় কিন্তু আমার সকল গোপনীয়তার সাথী। সম লিঙ্গের প্রতি দৈহিক আকর্ষণ তার দিক থেকে পরীক্ষামূলক, নারীর বিকল্প হিসাবে পুরুষ দেহকে ব্যবহার করতে চেয়েছে সাময়িক উত্তেজনার বশে। আমিও সাড়া দিতে বাধ্য হই স্বেচ্ছায়, আমার চাহিদার তাড়নায়। সামান্য অস্বস্তি সবসময় থাকে, দুই পক্ষেই। কখনো আমি তাকে উত্তপ্ত করে তুলছি কখনো আমাকে সে, তবু আজকের আগে আমরা কেউ কারো দেহে প্রবেশের সাহস করিনি- পায়ু পথে। অনেক দিনের অবদমন আর আমার খুচরো অভিজ্ঞতা আমাকে দুঃসাহসী করে তুলেছে, তাই তার ঝুলন্ত লাঠিটাকে আমি আমার শরীরে ঢুকতে দিলাম। ব্যথার কয়েকটা স্তর পার হওয়ার পর আমার শরীর যুক্ত হয়ে গেল এমন এক ছন্দে যার নিয়ন্তা অন্য এক অপরিচিত আমি। আনন্দ ও ব্যথার একাকার মর্মরে আমি থ, আমার স্বাভাবিক চেতনাকে পোশাকের মত অবলীলায় খুলে ফেলে কী অচিন তৃষ্ণা নিয়ে নতুন এক আমির অভ্যুত্থান; আমি কি এই আমিকে অভিনন্দন জানাবো নাকি ভয় পাবো?
এখন সেই স্মৃতি ভালো করে আমার মনেও আসছে না, গুহ্যদ্বারে আরামপ্রদ ব্যথা, সারা শরীরে মিষ্টি এক অবসাদ, যেন লজ্জাবতীর মত আমি আরামে নিজের ভিতরে গুটিয়ে যাচ্ছি। তবে এই আনন্দ-বোধ অবাধ নয়, আমি ভয় পাচ্ছি নিজেকে হারিয়ে ফেলার এবং যে আনন্দের সকল উপাদান আমার হাতে নেই, যে আনন্দ আমাকে অন্যের মুখাপেক্ষী করে, অন্যের ইচ্ছাকে সফল ভাবে তৈরি করার উপর এই আনন্দের নির্ভরতা, তাকে আমি কি করে গ্রহণ করি নিজের জন্য? যদি আত্মসম্মান ভুলে যাওয়া এগ্রেসিভ গে’দের একজন হয়ে উঠি? নিজের এই অচেনা সত্ত্বাকে পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে যদি ভারসাম্যহীন আমি বিচ্যুতির পথে পিছলাই বারবার? সহজ ভাষায়- আমি কি এই আনন্দ আদৌ চাই?
সে ঘুমাচ্ছে। আমি অ-বোধগম্য অপরাধ-বোধ নিয়ে, বা বিরক্তি মিশ্রিত অভিনব ঘৃণায়, যখন তার শরীরে ঢুকতে চেয়েছি; তার পায়ু-দ্বারে আমার কাতর শিশ্ন, আর সামান্য ফাঁক করা তার দরজা; সে ব্যথার স্তরগুলো অতিক্রম করতে পারেনি, ভয়ে দরজায় তালা লাগিয়ে দিলো নিরুপায় অপরাধীর মতো। নিজের শরীরে অপরের লিঙ্গকে প্রবেশাধিকার দেওয়ার জন্য আমার দীর্ঘ দিনের প্রস্তুতি ছিল, তার সেই প্রস্তুতি নেই। এই প্রস্তুতি সে অর্জন করুক তাও আমি চাই না। আমার সাথে তার এই শারীরিক সম্পর্ক তার যৌন-জীবনে কিছু খুচরো সমস্যার জন্ম দিবে। সেই সমস্যা গভীর হোক তাও চাই না। সে আমার বন্ধু, প্রেমিক নয়। প্রেমিক হলে তার সমস্যাকে ভালবাসতাম, শুশ্রূষা করতাম। তাকে নিজের সাথে একাই বোঝাপড়া করতে হবে, যেমন আমি করছি এখানে। আমার বন্ধুত্বের পরিসীমা এতটুকুই।
জীবনের এই পর্যন্ত একটা যমজ মন খুঁজেছি, যেখানে নিজেকে দ্বিধাহীন ভাবে গচ্ছিত রাখতে পারব। পাইনি। এবং না পাওয়ারই সম্ভাবনা বেশী। শারীরিক উত্তেজনার সমাপ্তি ছাড়া আর কী দিতে পারে, যদিও তারও প্রয়োজন আছে। দেহ থেকে দেহে অভিযান বীরপুরুষের সাজে, আমাকে সাজে না। আমি বরং আরও ক্লান্ত হই, ক্ষত-বিক্ষত হই। সার্বভৌমত্বের কামনা আসলে তৃতীয় বিশ্বের স্বাধীন দেশের মত- সাম্রাজ্যবাদ যাকে কার্যত শাসন করে। তাই এই বিশ্রী স্বাধীনতা আমি স্বেচ্ছায় কারো কাছে নিবেদন করতে চাই। সে আমার যমজ মন, তারে কই পাই!
তারপরও দেহের চাহিদা নির্মম। একটা নিরাপদ সুযোগও কি আমি হাতছাড়া করতে পারি? আর দেহমনের কাছে আমার দাবি- পবিত্র আত্মার বিকাশ…
কি স্ববিরোধ!