মর্গ বিলাপ

Mondro blog

নিশো

আজ মর্গে রাত ১২টা থেকে তপন কুমারের ডিউটি শুরু।

তপন একটা চেয়ার পেতে বসে আছে।
চারিদিকে কেমন জানি নীরবতা, কোন সাড়াশব্দ নেই। অবশ্য সাড়া না থাকারই কথা। মর্গে এখন তপন ছাড়া আর কেউ নেই। আর যারা আছে তাদের কারো প্রাণ নেই। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, মানুষের প্রাণ থাকলে সে মানুষ, আর প্রাণ হারালে সে লাশ। মানে শরীর একটা, তবে নাম দু’টো।
তপনের পাশেই একটা মদের খালি বোতল পড়ে আছে। এই মাত্র বোতলে শেষ চুমুক দিয়ে শূন্য করা হয়েছে বোতলটাকে।
তার মোবাইলে অনেক সময় ধরে বাংলা পুরনো গান বেজে চলেছে। আজ অদ্ভুতভাবে নিজেকে একা মনে হচ্ছে তার। পৃথিবীর মানুষগুলো বড্ড অভিমানী, সামান্য অভিমানেই তারা চলে যায় সবাইকে ছেড়ে।
তপন তার মোবাইলের গান বন্ধ করে চিন্তা করলো লাশ রাখার ঘরে চলে যাবে। সেখানে অনেক লাশের ভেতর হয়তো নিজেকে আর একা মনে হবে না।
তপন একটা টর্চ হাতে লাশ রাখা ঘরের দিকে রওনা হলো।
লাশ রাখা ঘরের দরজায় বড় একটা তালা ঝুলছে।
তপন দরজার সামনে এসে পকেট থেকে চাবির গোছা বের করে দরজা খুলতেই তার চোখে রাশি রাশি আলো এসে পড়লো, কয়েক মুহূর্তের জন্য তার চোখের সামনে সব কিছু ধবধবে সাদা মনে হলো।
তারপর আস্তে সব কিছু স্পষ্ট হতে লাগলো।
সে দেখতে পেলো লাশ রাখা ঘরে প্রচুর মানুষের ভিড়।
সবাই যে যার মতো ব্যস্ত। তপন কিছুই বুঝতে পারছে না, এখানে আসলে কী হচ্ছে?
সে কিছুটা সামনে এগিয়ে যেতেই অনেকগুলো খোলা দরজা দেখতে পেলো। সব দরজার উপরে খোদাই করে কিছু নম্বর লেখা আছে।
তপন একটা দরজার ভেতরে প্রবেশ করলো। সে সেখানে প্রবেশ করতেই দেখতে পেলো একটা বড় আয়নার সামনে একটা কেউ বসে আছে।
সে আর একটু এগিয়ে যেতেই দেখতে পেলো আয়নার সামনে একটা ছেলে বসে আছে, ছেলেটার মুখের মেকআপের রংগুলো সে প্রাণপণে মোছার চেষ্টা করে যাচ্ছে, কিন্তু সেগুলো কিছুতেই সে মুছতে পারছে না।
তপন ছেলেটার পেছনে দাঁড়িয়ে বলল, কে তুমি?
ছেলেটা মলিন মুখে পেছনে তাকিয়ে বলল, আমি, আমি নবীন।

– মেকআপগুলো মুছছো কেন? তোমাকে তো এমনই ভালো লাগছে।

– কিন্তু ওরা যে মানছে না। ওরা যে বড্ড হাসে, আমি রাস্তায় বের হতেও ভয় পেতাম।

– কিন্তু কেন?

– কারণ আমার শরীরটা পুরুষের আর ভেতরটা নারীর বলে।

– তোমাকে তো নারী রূপেই সুন্দর লাগছে, কিন্তু এমন হলো কেন?

– সেই প্রশ্নটা সৃষ্টিকর্তার কাছে করবো বলে আজ আমি এখানে।
নবীন আবার আয়নার দিকে তাকিয়ে মেকআপগুলো মোছার চেষ্টা করতে লাগলো।
তপন বের হয়ে আর একটা দরজা পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো।
সে ভেতরে প্রবেশ করতেই পাঞ্জাবি টুপি পরা একটা ছোট্ট ছেলেকে দেখতে পেলো।
ছেলেটা বল নিয়ে খেলা করছে।
ছেলেটা তপনকে দেখতে পেয়েই একটা টেবিলের আড়ালে লুকিয়ে পড়লো।
তপন বলল, আমাকে ভয় পাচ্ছ কেন?
ছেলেটা ভয়ে ভয়ে বলল, আমাকে ছেড়ে দিন, আমি আর লেখাপড়া করতে চাই না।

– কিন্তু কেন, লেখাপড়া তো করতেই হবে।

– কিন্তু ওরা খুব খারাপ, আমাকে খুব মারে। আবার আমাকে একা পেলে আদর করবে বলে খুব কষ্ট দিয়ে আদর করে।

– ওরা কারা?
ছেলেটা এবার তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে চিৎকার করে বলতে লাগলো, আমি বলতে পারবো না, আমি যা বলার ঐ সৃষ্টিকর্তার কাছে বলবো। আপনি চলে যান, আপনি চলে যান।
তপন খুব অবাক হয়ে সেই ঘর থেকে বেরিয়ে আর একটা ঘরে প্রবেশ করলো।
সে ঘরে প্রবেশ করতেই ইন করা শার্ট-টাই পরা একটা লোককে দেখতে পেলো।
তপনকে দেখেই লোকটা দ্রুত ছুটে এসে বলল, আমার কি ছুটি হয়েছে?
তপন বলল, কিসের ছুটি?
লোকটা মন খারাপ করে বলল, জানেন বাড়িতে বউ-বাচ্চা বসে আছে, সেদিন আমার বাচ্চাটা খুব বায়না করেছিল, আইসক্রিম খাবে বলে। আমি বড় একটা আইসক্রিম কিনেও নিয়েছিলাম। কিন্তু আমার আর বাসায় ফেরা হয়নি। আমি তো কোন ধর্ম মানতাম না। সবাই আমাকে বলতো, আমি নাকি নাস্তিক। তবে কেন আমাকে ঐদিন ধর্ম যুদ্ধে মরতে হলো? কেন ঐদিন হিন্দু-মুসলিমের যুদ্ধে বোমাটা আমার গায়ে এসে পড়লো?
লোকটা কান্না করতে লাগলো। তপন তাকে তার কোন প্রশ্নর উত্তর দিতে পারলো না, সে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে আসলো।
তপন ঘামতে লাগলো, কী হচ্ছে সে বুঝতে পারছে না।
হঠাৎ অন্য একটা দরজার ওপাশ থেকে হাসির শব্দ ভেসে আসলো।
তপন কৌতূহল নিয়ে দরজা অতিক্রম করতেই একটা বিমর্ষ মুখের মেয়ে তার দিকে ফিরে তাকালো।
মেয়েটা বলল, চিনতে পেরেছেন আমাকে?

– না, কে তুমি?
মেয়েটা তার হাতের চুড়িগুলো ঝুনঝুন করে বাজিয়ে মুচকি হেসে বলল, আমি গো, ললিতা। ঐ যৌন পল্লীর ললিতা।
তপন কুমার অবাক হয়ে ললিতার দিকে তাকিয়ে রইলো।
ললিতা একটা বেঞ্চের উপর তার এক পা ঝুলিয়ে আর এক পা তুলে বসে বলল, পছন্দ হয় নাই, তাই না? শালার সব পুরুষই এক, সবাই সুন্দর খোঁজে। আরে এক সময় আমিও সুন্দর ছিলাম। বড়লোকের ছেলেরা সব আমার দরজার সামনে লাইন দিয়া দাঁড়াইয়া থাকতো। আমাগো পাড়ার বাকি মেয়েরা আমারে দেইখা হিংসা করতো।

– তাহলে আপনার এই অবস্থা কেন?
ললিতা এবার মন খারাপ করে বলল, ভদ্র সমাজে বাঁচতে চাইছিলাম। আমগো এই সমাজে তো কোন সম্মান নাই। রাইত হইলে শুধু আদর আর আদর।
ললিতা এবার মুচকি হেসে বলল, তয় আমারও প্রেম হইছিল। একজন বড় লেকের ব্যাটা আমারে ভালোবাইসা ভদ্র সমাজে নিয়া গেছিল, বিয়াও করছিল। আমিও আর না করি নাই, সম্মান নিয়া সবাই বাঁচতে চায়। তয় শ্বশুর বাড়ির লোকেরা যহন জানতে পারলো আমি আগে পতিতা ছিলাম, তহন তারাই আমারে পুড়াইয়া মারলো। আমি না পাইলাম ঘর, না পাইলাম আর দেহ বেচবার কাস্টমার।
ললিতা কাঁদতে লাগলো।
তপনের খুব মায়া লাগলো ললিতার জন্য। সে মনে মনে ভাবতে লাগলো, আসলেই সমাজ আমাদের কিচ্ছু দেয় না। না হলে একটা মেয়ে, যে কি না অন্ধকার জগত থেকে বেরিয়ে আর পাঁচটা মেয়ের মতো বাঁচতে চেয়েছিল, তাকেই আমরা মেরে ফেললাম।
তপন বাইরে বেরিয়ে এলো। তার নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে, কারণ সে ও তো সমাজেরই মানুষ।
হঠাৎ পাশের ঘর থেকে ঘুঙুরের শব্দ ভেসে আসতে লাগলো। মনে হচ্ছে পাশের ঘরে কেউ একজন নৃত্য করছে।
তপন পাশের দরজা খুলে ভেতরে চোখ রাখতেই দেখতে পেলো দেবী রূপের একটা মেয়ে নৃত্য করে চলছে। এটা নিশ্চয়ই স্বর্গ নয়, তাহলে কে এই মেয়ে?
মেয়েটা হঠাৎ তপনকে দেখে নৃত্য বন্ধ করে চুপ করে বসে রইলো।
তপন বলল, কে তুমি?
মেয়েটা মাথা নিচু করে বলল, আমি দেবদাসী। ভগবানের সেবায় নিয়োজিত।

মেয়েরাই তো দেবীর রূপ, তারা কী করে দেবদাসী হয়? কী নাম তোমার?

আমার কোন নাম নেই। যখন বুঝতে শিখি তখন থেকেই মন্দিরে। তবে আমি যখন মন্দিরের ঠাকুর মশাইয়ের বিছানায় থাকতাম, তখন তিনি সোহাগ করে আমাকে অনেক নামেই ডাকতো। ছোট বেলায় বুঝতাম না জানেন। তারপর যখন বড় হলাম, তখন খুব লজ্জা লাগতো। আমার কী দোষ ছিল? আমি কেন দেব-দেবীর দাসী হয়েও যোগ্য সম্মান পাইনি? কেন আমাকে সেই ছোট বেলা থেকে লজ্জা বিসর্জন দিতে হয়েছে?

– তাই বলে নিজের প্রাণ বিসর্জন দেবে?

– হ্যাঁ, আমার যে আর দেরি সহ্য হচ্ছিল না। এখন ওপারে গিয়ে দেবতার কাছে জিজ্ঞেস করবো, আমার কী দোষ ছিল, কেন আমি দেব-দেবীর উপাসনা করেও নিজের লজ্জা, নিজের সতীত্ব নিয়ে বাঁচতে পারিনি?
তপন কিছু সময় চুপচাপ দাড়িয়ে ঐ ঘর থেকে বেরিয়ে আবার পাশের ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইলো।
মৃত্যুর পর মানুষগুলো আরও বেশি কৌতূহলী হয়ে ওঠে। হয়তো তাদের মনে অনেক চাপা কষ্ট , লুকানো কথাগুলো অপ্রকাশিতই থেকে যায়। কেউ কেউ আবার তাদের না বলা কথাগুলো নিজের মতো করে ব্যাখ্যা দেয়।
এখানে হয়তো আরও গল্প লুকিয়ে আছে।
সেই কৌতূহল নিয়েই আবার তপন পাশের ঘরের দরজা খুলল। পুরো ঘর অন্ধকার, শুধু একটা বড় আয়নার সামনে সামান্য আলোর মাঝে একটা লোক বসে আছে। তার মাথার উপরেই একটা ফাঁসির দড়ি ঝুলে আছে। লোকটা আয়নার দিকে তাকিয়ে বারবার হাসার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু তার হাসিটা কিছুতেই হাসি মাখা মনে হচ্ছে না।
তপন তার পেছনে দাঁড়িয়ে বলল, আপনি এখানে কী করছেন?
লোকটা স্বাভাবিক ভাবে পেছনে তাকিয়ে বলল, অভিনয় করার চেষ্টা করছি।

– আপনি কি সিনেমায় কাজ করতেন?

– সিনেমা! হ্যাঁ সিনেমাই বটে। কিন্তু আমার জীবনের অভিনয়টা শেষ হতো না। সিনেমা বা থিয়েটারে এক সময় দর্শকের হাততালির পর পর্দা নামিয়ে দেওয়া হয়, চেয়ারগুলো ফাঁকা হয়ে যায়, আলোও নিভিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আমার অভিনয়টার শেষ হয়তো ছিল না। তাই নিজেই নিজের থিয়েটারের আলো নিভিয়ে দিলাম।

– আপনাকে দেখে একজন সফল মানুষ মনে হচ্ছে, তবুও কেন! আমি কি কারণটা জানতে পারি?

– কারণটা আমি। আমি আসলে সমকামী, কোন অদ্ভুত কারণে, আমি কেন জানি পুরুষের মাঝেই আমার কামনা বাসনা খুঁজে পাই। তবুও সামাজিকতা আর পরিবারের কথা চিন্তা করেই বিয়েটা অবশেষে করতেই হলো। সকাল থেকে শুরু হতো আমার অভিনয়, একটা মানুষকে ভালো না বেসেও তাকে বুকে জড়িয়ে ধরা, তার প্রতি দায়িত্ব পালন করা; এসব করতে করতেই দিন চলে যেতো। কিন্তু একটা সম্পর্কের মাঝে ভালোবাসা বা দায়িত্বটাই সব কিছু না। আমি সব সময় পাশে সুন্দরী বউকে নিয়ে বিছানায় নিস্তেজ হয়ে পড়ে রইতাম, অথচ তার পরিবর্তে যদি একটা পুরুষ আমার বিছানায় শুয়ে থাকতো! তাহলে আমি হয়তো নিজেকে ঠিক রাখতে পারতাম না।

– তার জন্য সুইসাইড করার তো কোন মানে নেই।

– মানে ছিল। শারীরিক সম্পর্ক ছাড়া একটা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা সম্ভব কখনোই ছিল না। তারপর একসময় বিচ্ছেদ। বিচ্ছেদের কারণটা সবার কাছে অস্পষ্ট ছিল, এমনকি আমার স্ত্রীর কাছেও। তাই একেকজন মানুষ নিজেদের মতো করে আমার বিচ্ছেদের কারণ বর্ণনা করতে লাগলো। কেউ কেউ আমার পুরুষত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলল। কিন্তু তাদের কী করে বোঝাবো, নারী শরীরের প্রতি আমার কোন আসক্তি নেই। তাই আমি আর অভিনয় করতে পারলাম না। খুব সহজেই নিজের থিয়েটারের আলোটা নিভিয়ে দিলাম।
হঠাৎ ঘরের আলো নিভে গেলো।
তপন ঐ ঘর থেকে বেরিয়ে আসলো। রাতের গভীরতা এখন বোঝার কোন উপায় নেই।
হঠাৎ পাশের ঘর থেকে গুনগুন করে কবিতা আবৃত্তির আওয়াজ ভেসে আসতে লাগলো।
এই কণ্ঠটা তপনের খুব পরিচিত।
তপন ছুটে গিয়ে পাশের দরজাটা খুলতেই কবিতা আবৃত্তি বন্ধ হয়ে গেলো।
সে ভেতরে ঢুকেই দেখতে পেলো একটা চেয়ারে পেছন ঘুরে কেউ একটা বসে আছে। তার একটা হাত চেয়ারের হাতলের উপর দিয়ে নিচে ঝুলে আছে। ঝুলে থাকা হাত দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত গড়িয়ে পড়ছে মেঝেতে।
ছেলেটা হঠাৎ করে বলে উঠলো, আমি জানতাম, তোমার সাথে আমার এখানেই দেখা হবে। ছেলেটা ঘুরে তাকাল। তপন ছেলেটার মুখ দেখে বিচলিত হয়ে বলল, দীপ্ত, তুমি এখানে কেন? কী করেছো তুমি?
দীপ্ত হাসতে হাসতে বলল, সত্যিটা জেনে গিয়েছি।

– কোনটা সত্যি?

– কেন এমন করলে তুমি?

– আমি কী করেছি? আমি তো তোমাকে খুব ভালবাসতাম।

– আমার ভালোবাসা ছাড়া তোমার জীবনে আরও একটা সত্যি ছিল তপন। তোমার ঘরে স্ত্রী সহ একটা বাচ্চা আছে। কই, এ কথা তো তুমি আমাকে কখনো বলোনি!
তপন চমকে উঠে বলল, একথা তোমাকে কে বলল?

– আমি জানি।

– তাই বলে তুমি নিজের জীবনটাকে শেষ করে দেবে?

– তপন বাবু, আমি ভালোবাসাটা ভাগ করতে পারবো না, আর পারিওনি।

– এখানে আমার কি দোষ বলো? আমার অনুভূতিটা তো দুই দিকেই কাজ করে। আমি যেমন নারীর স্পর্শে উষ্ণতা পাই, তেমনি পুরুষের স্পর্শেও পাই। এটা তো আমার দোষ নয়।

– হ্যাঁ তোমার এই সত্যিটাই আমি মানতে পারিনি।
তপন চেঁচিয়ে উঠে বলতে লাগলো, এটা অসম্ভব, আমরা কথা দিয়েছিলাম এক সাথে থাকবো। তুমি আমায় এভাবে ছেড়ে যেতে পার না!
মর্গের ভেতর থেকে চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে আশেপাশে থেকে লোক ছুটে আসলো। এত সময়ে ভোরের আলো চারিদিকে ফুটে উঠেছে।
মর্গে কাজ করা একটা লোক এসে তপনের দুই কাঁধ শক্ত করে ধরে বলল, কী হয়েছে তপন, এভাবে চেঁচাচ্ছিস কেন?
তপন এবার স্বাভাবিক মস্তিষ্কে ফিরে এসে দেখল মর্গের জানালা দিয়ে ভোরের আলো প্রবেশ করেছে। গত রাতে সে যাদের সাথে কথা বলেছে সবাই লাশ রূপে শুয়ে আছে লাশ রাখার ঘরে। কারো কোন সাড়াশব্দ নেই।
শুধু দীপ্তর মরা দেহের পাশে তপন বসে আছে।
সদা চঞ্চল ছেলেটার মুখে কোন কথা নেই, সাদা শরীর থেকে রক্ত ঝরে আরও ধবধবে সাদা হয়ে গেছে।

বেলা বাড়তেই মর্গে কান্নার আওয়াজ বাড়তে লাগলো। স্বজনরা আত্মীয়র লাশ নিয়ে যাচ্ছে এক এক করে।
তপন চুপচাপ মর্গের এক কোনায় বসে আছে। তার এখন নিজেকে অনুভূতিহীন মনে হচ্ছে। লাশেরও হয়তো কোন অনুভূতি থাকে না।


তপনের নিজেকে আজ জীবন্ত লাশের মতো মনে হচ্ছে।


মৃত্যুতে মানুষের মুক্তি হয়, কিন্তু তার কোন মুক্তি নেই।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.