
কোমলগান্ধার
সেই প্রথম বুঝতে পারা আমি ছেলে না মেয়ে, একটা ভুল শরীরে ভুল ভাবে বড় হচ্ছি। একদিন জানতে পারলাম ঈশ্বর নামক এক বুড়োর কাছে প্রার্থনা করে কিছু চাইলে সে তা দেয়। তারপরই শুরু হলো সেই বুড়ো ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা। সবসময় ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতাম আমাকে মেয়ে বানিয়ে দাও ঠাকুর, আমিও অপাদি, বুনি আর বুনুর মতো করে ওড়না দিয়ে মিথ্যে মিথ্যে শাড়ি পরে সংসার সংসার খেলতে চাই।
আমি ভ্রমর। সঙ্গত কারণেই ছদ্মনামে লেখা। জন্মের কথা যদি বলতেই হয় তবে এটুকুই জানি এক ছত্রিশ বয়সের লোকের ভীষ্মের পণ ভাঙার মধ্য দিয়ে তার সূচনা হয়েছিল। আর ছোটবেলার কথা বলতে যতটুকু মনে পড়ে আমি আমার ছোট জেঠাত বোনকে বলেছিলাম আমাকে দাদা না দিদি বলে ডাকতে, সেখান থেকেই শুরু হলো একটা ছয় বছরের ছেলের শরীরে একটা বাচ্চা মেয়ের বেড়ে ওঠা। সেই প্রথম বুঝতে পারা আমি ছেলে না মেয়ে, একটা ভুল শরীরে ভুল ভাবে বড় হচ্ছি। একদিন জানতে পারলাম ঈশ্বর নামক এক বুড়োর কাছে প্রার্থনা করে কিছু চাইলে সে তা দেয়। তারপরই শুরু হলো সেই বুড়ো ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা।
সবসময় ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতাম আমাকে মেয়ে বানিয়ে দাও ঠাকুর, আমিও অপাদি, বুনি আর বুনুর মতো করে ওড়না দিয়ে মিথ্যে মিথ্যে শাড়ী পরে সংসার সংসার খেলতে চাই। আমিও ওদের মতো আমার বাচ্চা মেয়ের (পুতুলের) বিয়ে দিতে চাই। কিন্তু বুড়ো হয়ত কানে কম শুনো, কিংবা আমাদের মতো মানুষদের কথা শুনত না। তাই ভ্রমরের আর মেয়ে হয়ে ওঠা হলো না। সে এখন তার ছেলে শরীরে কিভাবে ভ্রমরের পরিচয়টা লুকিয়ে বাঁচতে হয় তা শিখে গেছে। কিভাবে কষ্টগুলো লুকিয়ে বাঁচতে হয় শিখে গেছে।
তবে ভ্রমর একসময় ফ্রক ওড়ার স্বপ্ন দেখত, এখন শাড়ি পড়ার স্বপ্ন দেখে, এখন সে বড় চুল খুলে, শাড়ির আঁচল উড়িয়ে, হিল পায়ে গট গট করে হাঁটার স্বপ্ন দেখে। ভ্রমরেরা এখনও স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখে।
চোখে কাজল এঁকে, মুখে হালকা মেকআপ, লিপস্টিক, এক গাছা চুড়ি, কানে কানবালি, নাকে নাকফুল,গলায় সাতনরীহার, চন্দ্রহার, কোমরে বিছা হাতে পায়ে আলতা নূপুর, গতরে গরদ চাপিয়ে ঘরের বাইরে, খোলামাঠে দাপিয়ে বেড়াবে। প্রেমিক পুরুষটির গলা চেপে জড়িয়ে ধরবে, প্রেমিক পুরুষও দুবাহুতে আবদ্ধ করে ঠোঁটে একে দিবে চন্দ্রমল্লিকা।
ভ্রমর এখনো স্বপ্ন দেখে আবদ্ধ দম বন্ধ ঘরের প্রেমিকের প্রেম নয়, অস্তগামী সূর্যের সাথে সৈকতের বালুতে প্রেমিকের আদর খাবে। ভীড় বাসে, লোকারণ্যে প্রেমিকের ওষ্ঠের আদর তারও চাই। গোধূলি আবছা আলোতে তারও তার প্রেমিকের আদরের কথা মনে করে, মন খারাপ হয়।
প্রথম প্রকাশ
ঠাহর (দ্বিতীয় সংখ্যা)
মন্দ্র থেকে প্রকাশিত জেন্ডার, সেক্সুয়ালিটি এবং কুইয়্যার বিষয়ক ম্যাগাজিন