
অন্যস্বর
কেইরা বেল একজন ব্রিটিশ কিশোরী, প্রাক বয়ঃসন্ধিকালে যে নিজেকে ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে আবিষ্কার করে। অর্থাৎ শারীরিক ভাবে সে মেয়ে হলেও মানসিকভাবে সে নিজেকে ছেলে হিসেবে শনাক্ত করে। একসময় তার মনে হওয়া শুরু করে এই শরীরটা তার নিজের নয়। নিজের শরীরের লৈঙ্গিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে এই যে অস্বস্তিভরা অসন্তুষ্টি, এটাই অধুনা প্রচলিত “জেন্ডার ডিসফোরিয়া”।
মোটাদাগে ট্রান্সজেন্ডাররা জেন্ডার ইউফোরিয়ার শিকার হলেও, সব ট্রান্সজেন্ডার এই ইউফোরিয়ার ভোগে তা কিন্তু নয়। আবার বয়ঃসন্ধির আগেই শুধু নয়, যেমনটা কাইরা বেলের বেলাতে হয়েছিল, যে কোন বয়সে জেন্ডার ইউফোরিয়া শুরু হতে পারে। সম্প্রতি চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে সেক্স চেঞ্জ করার নির্ভরয�োগ্য প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হয়েছে। ব্যয়বহুল হলেও এইসব প্রযুক্তির উপর জেন্ডার ডিসফোরিয়ায় থাকা মানুষের নির্ভরশীলতা ক্রমেই বাড়ছে। এই ট্রিটমেন্টগুলো সাধারণত শুরু হয় পিউবার্টি ব্লকার (বয়ঃসন্ধি-রোধক) দিয়ে। পিউবার্টি ব্লকার ব্যবহারে বয়ঃসন্ধির ফলে শরীরের যে লিঙ্গভিত্তিক পরিবর্তন আসে যেমন মেয়েদের বেলায় স্তন ও রজচক্রের উপস্থিতি, ছেলেদের বেলায় দাড়ি গজানো ও কণ্ঠস্বর ভেঙে যাওয়া এইসবের আগমন বিলম্বিত হয়। ফলে সেক্স পরিবর্তন সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণে আরো কিছু সময় পাওয়া যায়।
তারপর দেওয়া হয় ক্রস সেক্স হরমোন। লিঙ্গভেদে এই দাওয়া ভিন্ন—মেয়েদের দেওয়া হয় oestrogen হরমোন, যেটা স্তন উন্নত করে এবং ছেলেদের দেওয়া হয় testosterone হরমোন যা পুরুষালি শারীরিক বৈশিষ্ট্য প্রকট করে। এর পরের ধাপে অনেকে জেন্ডার সার্জারি করে। এইসব ট্রিটমেন্টের ফলে যেসব পরিবর্তন আসে তা পরবর্তীতে বদলানো যায় না। পিউবার্টি ব্লকার ব্যবহারের ফলে অনেক সময় বন্ধ্যত্ব দেখা দেয়। স্তন অপসারণের পর তা আর গজানো যায় না। এমনকি অর্গাজম অনুভব না করার সম্ভাবনাও নাকচ করা যায় না।
এইবার কেইরা বেলের ঘটনায় ফেরত আসি। মিস বেল ১৬ বছর বয়সে বিউবার্টি ব্লকার নেওয়া শুরু করে এবং বিশ বছর বয়সে স্তন অপসারণ করে। কয়েক বছর নিয়মিত নেওয়ার পর সে ২২ বছর বয়সে টেস্টস্টেরন হরমোন নেওয়া বন্ধ করে। কারণ সে অনুভব করা শুরু করে নিজের নারী শরীর নিয়ে যে অস্বস্তি তার আগে ছিল সেটি প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পরে আর নাই। কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। তার অপসৃত স্তন আর গজাবে না, পুরুষালি যেসব বৈশিষ্ট্য তার শরীরে প্রস্ফুটি ত হচ্ছিল হরমোন নেওয়ার ফলে সেগুলো এড়ানোর সুযোগ নেই। ফলে সে ব্রিটেনের tavistock Centre যেখানে সে উল্লেখিত চিকিৎসাগুলো নিয়েছিল তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা ঠুকে। গেল বছরে কোর্ট ১৫ বা ১৬ বছর বয়সের কোন কিশোরী সেক্স চেঞ্জ করার মত সিদ্ধান্ত নেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে না জানিয়ে Tavistock centre-কে দোষী সাব্যস্ত করে। ফলে এখন থেকে অপ্রাপ্তবয়স্ক কেউ সেক্স চেঞ্জ করার জন্য ট্রিটমেন্ট শুরু করতে চাইলে আগে আদালতের অনুমতি প্রার্থনা করতে হবে। কেইরা বেলের কেসটি বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়। জেন্ডার ডিসফোরিয়া একটি সামাজিক বাস্তবতা। সাথে এটাও মাথায় রাখতে হবে লিঙ্গ সম্পর্কিত যে খচখচানি, বয়ঃসন্ধি নির্বিঘ্নে হতে দিলে তার অনেকটাই (কিছুগবেষণা অনুযায়ী এই হার ৬১-৯৮ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে) পরবর্তী জীবনে উবে যায়। অনেকে পরবর্তীতে নিজেদের একজন সাধারণ সমকামী হিসেবে আবিষ্কার করে।
প্রথম সংখ্যা
ঠাহর (দ্বিতীয় সংখ্যা)
মন্দ্র থেকে প্রকাশিত জেন্ডার, সেক্সুয়ালিটি এবং কুইয়্যার বিষয়ক ম্যাগাজিন