
টিপটিপে বৃষ্টি আর স্যাঁতস্যাঁতে আশ্বিন বাতাস গায়ে মেখে আমরা গিয়েছিলাম শহরের শেষ প্রান্তে আমাদের প্রান্তিক যৌনকর্মী বোনদের বাড়িতে। তারা আমাদের আসন পেতে স্বাগতম জানিয়েছেন, কাছে টেনে নিয়েছেন এবং শুনিয়েছেন নিজেদের জীবনের গল্প। সেই গল্পই তুলে ধরছি আপনাদের জন্য। নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে সকলের জন্য ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে।
সম্পাদক: আমার নাম সুস্মিতা। আমি আইন পড়ি। দ্বিতীয় বর্ষ।
ভলিন্টিয়ার ১: আমিও আইন পড়ি। চতুর্থ বর্ষ।
ভলিন্টিয়ার ২: আমি ভলিন্টিয়ার ২। আমি বিবিএ পড়ি। চতুর্থ বর্ষ।
অ্যাডমিন: আমি এখন পরিবেশ বিজ্ঞান নিয়ে পড়ছি। মাস্টার্সে।
সম্পাদক: আমরা আমাদের এই বইয়ে কু ইয়ার নারীদের লেখা গল্প, কবিতা সবই দিচ্ছি। কিন্তু এই নারী পরিচয় থেকে যদি আমরা যৌনকর্মীদের বাদ দিয়ে দিই তাহলে নারী পরিচয় আসলে পূর্ণ হয় না। ওই চাহিদাটা থেকে আমরা চাচ্ছি কিছু যৌনকর্মীদের গল্প তাদের থেকে উঠে আসুক।আমরা সেটা বানোয়াট ভাবে না বলি। কল্পনা করে না বলি। আপনারা যা ফেইস করছেন সেটাই বলা হোক। আমরা যেহেতু একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে পেরেছি, আমরা চাই, আমাদের এই প্ল্যাটফর্মে আপনাদের স্ট্রাগল, আপনাদের এই কমিউনিটির সবাই যেটা ফেইস করে, সেরকম জিনিসই উঠে আসুক। আমরা যদি সমস্যা না বলতে পারি, সমাধানটা দিতে পারবো না। এজন্যই ওখান থেকে আসা।
শুরু করার আগে…নাম, ঠিকানা আমরা কিছু রেকর্ডে রাখছি না।আপনারা যদি ছোট করে কেউ বলেন আপনারা এই কাজে আসলেন কীভাবে
সূচনা: আমি বলি। কারণ, সত্য সত্যই। এইডা পরে কইয়া লাভ কী? পরে কইলেও যা, এহন কইলেও তা। ঠিক আছে না? কারণ, গরীব ফ্যামিলি।লেখাপড়া করাইছে অনেক কষ্টে। পরে লেখাপড়া বাবা-মা কোনকিছুভাবে চালাইতে পারে না। ভাইবোনও বেশি। নিজের খোরাক নিজে চালাইতে হয়।এমনও দিন গেছে ভাত না খাইয়া রইছি। কেউ আইসা ভাত দেয় না, জিগায় না যে খাইছি কিনা। অখন আমরা তো নারী। ওই ধাপ কিন্তু পিরোয়ে তারপর এইখানে আসছি, এই পর্যন্ত। পশমগুলি দাঁড়ায়ে গেছে। কেউ দেয় না, কী করব? বাধ্য হইয়া এই কাজে লিপ্ত হইছি। লিপ্ত হইয়াও শান্তি নাই।কাজে যাব? একজনের কথা কইয়া দশজন। কিছুমনে কইর না। একজনের কথা কইয়া দশজন যদি আমার গলা ধরে, দশজনের টাকা পাই না কিন্তু।
মাইরধর কইরা বিদায় করে। পুলিশের কাছে যাই। হেরাও কয়, আস। টাকা তো নাই! দুঃখের কথা কইয়া কোন লাভ আছে? কোন দিকে যাব? এহন তো তা-ও অবস্থা খারাপ। মহামারিতে কেউ খাইতে পারে না। কেউ খাইতে পারে না, আমাগো দিব কী? ঘরে বইসা বাড়িওয়ালারাও ক্যাটক্যাট করে ভাড়ার ট্যাকার লিগা। ভাড়ার টাকা দিতে পারি না। এখন বর্তমানে এমনও দিন আছে যে না খাইয়া থাকি। লবণ দিয়া চিটকায়া ভাত খাই। আমাগো কি ভাত-মাছ খাইতে ইচ্ছা করে না? আমাগো কি ভাল পোশাক পরতে ইচ্ছা করে না? আমাগো কি মনে চায় না আমাগো বিয়া হোক? কেউ এগুলা জানলে কি কেউ নিব? কেউ তো নিব না। হৃদয়বান ব্যক্তি কে যে আমাগো নিব? তাইলে তো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তাম। তিন বেলা পরে এক বেলা খাওয়াইত, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়াইত, হাঁইটা যাইতাম তার পিছনে। আর কোন কিছুতে আশা নাই। সত্য যেইডা, বুইন। আমাগো তো স্বর্ণ-অলংকার কোনকিছুর আশা নাই। বাড়িগাড়ি এগুলার আশা নাই। তিন বেলা পরে একবেলা খাওয়া আর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া। কেডা আসপি? নে! তাও তো নেয় না। কী করমু? তাই এহন আর কেউ জিগায়ও না।
সম্পাদক: আপনারা সবারই কি একইভাবে নিজের তাগিদে আসা?
সমস্বরে: এইভাবেই।
হুমায়রা: এইভাবে, সবাই-ই। উনি যেটা বলছে সেটাই। সংসারে অভাব ছিল। বাবা নাই।
সূচনা: কিন্তু, জোর কইরা কেউ কিন্তু আনে নাই। সোজা কথা। পেটের দায়ে ভুক্তভোগী হইয়া আইছি। জোর কইরা আসিনি। যে আরাকজনে পথ দেহায় দেব কেউ আনছে? এইডা দেহাইতে পারব না।
সম্পাদক: আচ্ছা। আপনাদের এই যে ইন্ডাস্ট্রি, এখানে তো এমনও হয়, অনেককে দেখা যায় অল্প বয়সে বিক্রি করে দেওয়া হয়…
রেহানা: হ্যাঁ , এইরকম আছে তো।
সূচনা: আছে না? কতজনে গল্প করেন, আমাগো বান্ধবীরাই তো আছে।
সম্পাদক: একদম ছোট বয়সে বিক্রি করে দেওয়া হয় পরিবার থেকেই?
সূচনা: হ। এহন দেখাসাক্ষাৎ নাই এরম চিনি দুইজন। এহন তো দেখা সাক্ষাৎ নাই।
সম্পাদক: কারো কি এমন হয়েছে যে, তাদের পাচার করে দেওয়া হয়েছে?
সূচনা: না, এরকম শুনি নাই। বিক্রি কইরা দিছে শুনছি। কিন্তু, পাচার হইছে কিনা এইডা শুনি নাই।
রেহানা: আমার পরিচিত কয়েকটারে চিনি তাদের পাচার করে দিছিল।ওদেরকে আটকায় রাখছিল শেখ যারা আছে। ওই শেখেরা দিনের পর দিন ওদের নির্যাতন করত। মনে করেন খাবার দিত না ঠিকমত। ওদের ঘুমাইতে দিত না। সারারাত আইসা ওদের সাথে সেক্সের কাজটা করত। আবার মনে করেন যে সকালে চইলা যাইত। ওইখানে আবার দালাল আছে। ওরাও আইসা সেক্স করত। মানে শেখেরা বিভিন্ন দেশেত্থেইকা আসত। পাকিস্তান আছে। তো, আমাদের তো ছোট্ট, ছোট্ট মেয়েরা। এটা সম্ভব? ওই মেয়েরা অনেক কান্নাকাটি করছে। একজন আত্মহত্যাও করছে ওইখানে। আর দুইজন পালায় আসছে। আমার পরিচিত আরকী।
সম্পাদক: সেক্ষেত্রে, আপনারা যে এখানে থাকেন, এখানে বা যেখানেই যখন থাকেন…
সূচনা: শুনলে তো ঘরভাড়া দিতে চায় না। লুকায়া থাকা লাগে।
সম্পাদক: নিজের আইডেন্টিটি দিয়ে তো আর ঘরভাড়া নিতে পারতেছেন না?
সূচনা: না! বাইরে তো ভাল গেটআপ না হইলে বাইরে যাওয়া যায় না। কেউ তো চেহারা দেখব না। একটু হাইট্টা গেলে মানুষ টিটকারি করে।চুলডা একটু ভাল…এই যে কালার করছি…আমার তো চুল কালার করা… কয়, কালার করছ দেহ…এইডা কোন কথা?
সম্পাদক: দুইদিকেই সমস্যা।
সূচনা: সবদিক দিয়া। কোনদিক বাদ নাই। দিন গেলে, রাইত আইলে বাড়িওয়ালা ভাড়া চায়। তার কাছে তো কইতে পারি না যে আমরা এই লোক। আমরা তো কই যে একটা চাকরি করি।
হুমায়রা: ছয় মাসের ভাড়া দেই নাই এহনও ঘরের…
সূচনা: …আমরা তো কই যে চাকরি করি। চাকরি কর তো…বেতন…. ভাড়া দিবা না, ঘরভাড়া? তোর তো ছয় মাসের। আমার নয় মাসের রানিং ভাড়া চলতেছে। এই মাস গেলেই নয় মাস হইয়া যাইব। এহনও দিতে পারি নাই।
রেহানা: টাকাপয়সা নাই। কাজ নাই। কী করব?
সম্পাদক: আপনারা যে এরকম থাকেন, আপনাদের কি আনসেফ লাগে? অল্পবয়সে হয়ত আরও এরকম ছিল যে, আপনারা থাকছেন, কিন্তু আপনাদেরও পাচার হয়ে যাওয়ার ভয়টা কাজ করছে?
সূচনা: ভেতরে তো একটা ভয় থাকেই সবসময়। ওই ভয়ডা না, আরও ভয় আছে। খালি এই একটা ভয় যে, কেউ যদি জানে! জানাজানির পাত্র হই! তখন তো আমরা হাসির পাত্র হয়ে যাব। যেমন এই যে, আমরা দেখতেছি জুসের বোতল সাজানো রইছে। যেই লোক রাস্তা দিয়া হাঁইটা যাইব, দেখব যে জুসের বোতলটা সাজানো রইছে। আমরা কিন্তু সাজান পাত্রর মত হইয়া যাব। যাব না? যে দেখ, এই কাজটা করে তারা এই জাগায়। ওই ভয়টা আরও বেশি কাজ করে।
আবার একটা জিনিস কী যখন একাকীত্ব কাটাই রাত্রে, তখন কিন্তু একটা আবেগ চইলা আসে যে, আমাদেরও জীবন, যারা সংসার করতেছে তাদেরও জীবন! আমাদের কি জীবন ওইরকম হইতে পারত না? কিন্তু, সেইরকম জীবন তো আল্লাহ আমাদের দেয় নাই। খাইতেই পারি না, সুখের জীবন কই! আমার কি স্বামীর মন চায় না? আরেকজনের গলা ধরি এইডা মন চায়? পেটের দায়ে! এক কেজি চাল তো দূরে থাক, একটা দানা কেউ দিব না। পুলিশের কাছে গেলে হাত ধরব। চিন্তা করছ? যে আইব বিচার করতে সে আরও বেশি খারাপ। নিয়া যায় দুইজনের কথা কইয়া, বিশ-বাইশ জন, পঞ্চাশ জন হাজির হইয়া যায়। টাকা পাই না, আরও মাইর খাইয়া আসি। কিছু কইতে পারি না। এইটার কোন প্রতিবাদ আছে?
হুমায়রা: কয়দিন আগে এই যে এইখান থেইকা একজন পলায় গেছে না? কইয়া নিয়া গেছে যে এত ট্যাকা দিব। ট্যাকার দেয় নাই, আরও হুমকি টুমকি দিয়া…হুমকির ভয়ে পলাইছে।
সূচনা: হুমকি! মানসম্মানের ভয়ে পলাইয়া…কয় ঘরভাড়া থাকতে পারব না। এলাকা জানবে আমরা এই কাজ করি। চুরি কইরা খাইলেও একটা পরিচয় আছে যে চোর! এই কাজের কোন পরিচয় নাই।
রেহানা: সেক্স ওয়ার্কারদের কোন পরিচয়ও নাই, স্বীকৃতিও নাই। তারা দেখা যায় যে, নিয়া কাজ করে, করে। তারপর নিয়া মাইরা ফালায়। টাকা চাইলেও মাইরা ফালাইব। গলা চাপা দিয়া মাইরা ফালাইব। কিচ্ছু করার নাই! কেউ তো নাই।
হুমায়রা: করার কিছু নাই। পরিচয়ই নাই। কোথাও গেলে কী পরিচয় দিব?
রেহানা: এদের কোন জীবনই নাই। সেক্স ওয়ার্কারদের জীবন? মানে কোন জীবনের মধ্যেই পড়ে না! কুকুরেরও কিন্তু নিরাপত্তা আছে। সে কোন জায়গা শুইলে হয়ত বাড়িবুড়ি দিয়া খেদায় দিব, ধমক দিয়া দিব। কিন্তু, একটা সেক্স ওয়ার্কারের কাজে, টাকা চাইলে, দেখা যায় একজনের বেশি পাঁচজন কাজ করব, কিন্তু, বেশি কিছু কইলে তখন করব কী? একদম গলা চাইপে ধরে মাইরে ফেলাইব। কেউ নাই ওইখানে, তারে কেউ কিছু বলে না। এদের কোন জীবনই নাই।
সূচনা: সাংবাদিক না সত্যের পথে চলে? সারাজীবন শুনছি। কিয়ের? সাত-আটজন সাংবাদিক ধইরা কাম কইরা দিছে। একটা টাকা যদি দিত তাও শান্তি পাইতাম।
অ্যাডমিন: সাংবাদিকরাও…
সূচনা: মানুষ না, নরপশু। আগে তো তাও মনে জোর ছিল যে সাংবাদিকগর কাছে জাগা পামু। সেইখানেও জাগা নাই। সেই পথের পথিক আমি।
সম্পাদক: তাহলে আমরা যে ইন্টারভিউগুলা নিচ্ছি, এখানেও তো মনের মধ্যে একটা ভয় কাজ করার কথা…
সূচনা: এই যে ভয় কাজ করতেছে যে, এই ছবিগুলা গেল কিনা। কথা শুনুকগা। কথা কত মানুষে কইয়া থাকে। কিন্তু গেল কিনা…ভিডিও গেল কিনা, এই ভয়ডাও কিন্তু কাজ করবে। তারপরও কিন্তু মনোবল নিয়া কাজ করতেছি। কিয়ের লাইগা? যদি একটু সুখের সন্ধান পাই। তিন বেলা পর এক বেলা যদি খাইতে পারি। যদি একটা কর্ম মানে চাকরিতেও ঢুকতে পারি। তাও একটা পরিচয় দিতে পারব, গর্ব করতে পারব।
রেহানা: এখন ওদিকের জাগা নাই, ওদিকেও নাই, ওদিকেও নাই।কোনদিকেই নাই।
সূচনা: যেই জাগায় আমরা চুলায় জ্বাল দেব, ভাত রান্না করব, বইসা থাকব, স্বামী কোনসময় আসব, ভাত খাইব এই টেনশন…এহন আর সেই টেনশন নাই। এহন টেনশন, কোনসময় অমুক ব্যাডায় টাকা দেব, টাকা দেয় না। খালি মুখে ফেরত আসি। মাইরও খাই, টাকা দেয় না। ঘরে আইসা আবার না খাইয়াও থাকি। তহন কীরকম লাগে? মনে হয় যে এই জীবন না রাখি।
সম্পাদক: আবার যাদের কাছে এই কথাগুলা বলবেন বা ইন্টারভিউ দিবেন, নিজের কথা বলবেন, তারাও সেখানেও এক্সপ্লয়েট করছে। তারা সেখানেও আপনার সুবিধা নিচ্ছে।
সূচনা: তারাও সুবিধা নিচ্ছে। কইলাম ত, সাংবাদিক আইছে। কয়, কী হইছে? সরো, সরো, সরো, দেখি! আইছে, সাত-আটজন খাড়া! কী কমু? যদি দুইটা টাকা দিত তাও মনেরে বুঝ দিতাম। দিছে তো! যদি কয়টা বাজার কইরা খাই। ভাড়া দিতে পারি না পরে বাড়িওয়ালারে কইছি, ভাড়া নাই, হারায় গেছে। মিথ্যা কথা কইছি। পরে ওই বাজার থেইকা শেষে কানতে কানতে হাঁইট্টা আইছি। আইসা কানতে কানতে ঘুমায় গেছি।
সম্পাদক: আপনাদের কারও বাচ্চা নাই?
সূচনা: ওই যে ওর (হুমায়রা) একটা বাচ্চা হইছে। দিন ভইরা খালি বিস্কুট বিস্কুট খাইতে মন চায়! বিস্কুটের লাইগা কান্দে। দিতে পারে না। সে মারে তিনবেলা। ধইরা আইনা মারে। ও কী দোষ করছে? এই বাচ্চার খাওন খাইতে পারে না।
হুমায়রা: প্রথম যহন লকডাউন হইছে মুড়ি ভিজায় খাওয়াইছি।
সম্পাদক: ভাতের বদলে?
সূচনা: তয়?
সম্পাদক: আপনার বাচ্চার বয়স কত?
হুমায়রা: নভেম্বরের তেইশ তারিখে গেলে তিন বছর হইব।
সম্পাদক: তিন বছর ধরে ওকে নিয়ে আপনাকে এভাবে কষ্ট করতে হচ্ছে?
সূচনা: এই নিচতালায় একজন ছাগল পালে। উই কোণায় একজন আছে। এক-দুইদিন আগে, ভাতের মাড় কয় ছাগলরে দিব। আমি কই, দিয়া আসি। ছাগলের মুখে না দিয়া আমি ঘরে নিয়া গেছি। আমি খাইছি। সত্য কথা কইলে কী হইছে?
সম্পাদক: এখন তো মনে করেন করোনার জন্য কারোরই ওরকম ভাবে কাজ নাই, তাই না? যখন থাকে তখন কি এই কাজ দিয়ে পোষায়?
সূচনা: না!
সম্পাদক: যখন কাজ থাকে? বা মনে করেন, কাজ পাচ্ছেন…
হুমায়রা: একদিন, দুইদিন। এরকম।
রেহানা: ভয় তে তো কেউ ওরকম বাইরের সাইডেই যায় না। কারণ, মাইরা ফালাইব! এর জীবনটাই শেষ। এলাকার মধ্যেই থাকে।
সূচনা: দূরে যাই না। এলাকার ভিতরে না। ঢাকা, উত্তরা এই। গাজীপুর তো ভয়তে যাই না। কয়দিন আগে না মাইরা ফালাইল আমাগো সাথের একজন? গাজীপুর…উত্তরা ১২ নাম্বার, গেছে। মাইরা ফালাইল!
রেহানা: আপা, সেক্স ওয়ার্কারদের কোন এলাকা নাই, কোন জায়গা নাই। তারা সব এলাকার। তাদের কোন নির্ষ্ট জায়গা নাই। তারা সব জায়গায় যায়।
সম্পাদক: আচ্ছা, যখন আপনারা কাজও করেন, ধরেন, কাজের সূত্রে এখান থেকে গুলশান যদি যাইতে হয়…এখান থেকে গুলশান তো বহুদ্দূর! ওইদিনের কাজ দিয়ে, এই যাতায়াত দিয়ে পোষায়?
সূচনা: না। ওই যে পঞ্চাশ টাকা, একশ টাকা উনা থাকল। ওই একশ টাকার এই আশায় যায়। অনেক সময় তো টাকা পাই, অনেক সময় পাই না।বেশির ভাগই পাই না। বেশির ভাগ মারে। তারপর চিন্তা করি, থাকগা। যদি মাইরা ফালায়! জানডা নিয়া চইল্লা আসি। …(বাচ্চাকে দেখিয়ে) খেলতাছে।এই যে এইরম তোতা পাখির মত। মায়া লাগে না? খাওয়ার জন্য বেশিরভাগ শইল উঠে না। কান্দে সেন ধইরা মারে!
সম্পাদক: ওকে তো মনে হয় স্কুলে দিতে পারবেন না।
সূচনা: না। কী কইরা? পেটে ভাত জোগাইতে পারে না, ইস্কুল! কত না খাইয়া থাকে, শেষে কান্দে।
সম্পাদক: আপনি এই যে একটা বাচ্চা নিয়ে বাসা ভাড়া নিয়েছেন। আপনাকে বাসা ভাড়া নিয়ে ঝামেলা দেয় না যে একটা বাচ্চা নিয়ে আপনি কেন থাকেন, একা?
হুমায়রা: বাচ্চা রাখতে হইলে তো করতে হইব।
সম্পাদক: বাসা পান?
হুমায়রা: পাই না। মিথ্যা কথা বইলা…
সূচনা: পায় না। দুই মাস-তিন মাস পরপর বাসা পাল্টাইতে হয়। যখন এলাকায় জানাজানি হয় তহনই বাসা…
হুমায়রা: কয়দিন আগে একটা মেয়ে ছিল। এই এলাকায়, মনে করেন, দশ টাকা ভাড়া লাগে এতদূরে গেছে। কাজ করছে। কাজ করার পর আরেকজনের নাম বইলে, ট্যাকাও দেয় নাই, পয়সাও দেয় নাই। কইছে, তুই যদি এলাকায় থাকস তাইলে মাইরা ফালায় দিব তোর বাসায় যাইয়া।বাসা চিনে যে! লাস্টে সে আইসেই সকাল নয়টার আগেই, মনে করেন, সব গেছেগা। কই, কই যাইস? কয় এমন এমন হইছে। আমি কইছি, আরও কোন নাম বলছস? বলে, নামটাম কিছু বলি নাই। এইজন্য এখনও টিকে আছি। নইলে আমরাও…
রেহানা: সেক্স ওয়ার্কাররা প্রত্যেকটা জায়গায় বঞ্চিত। তারা যদি কোথাও চিকিৎসা নিতে যায়, যদি জানে তারা সেক্স ওয়ার্কার, কয়, তুই সর, ওইদিক যা। তখন “তুই” ভাষা করবে। বয়সে যদি ছোটও হয় কয়, তুই সর এনতে। গেল একটা। তারপর মনে করেন যে, কোন সমস্যায় রাস্তায় পড়ল। থানায় গেল। থানাআলারা বলব, তুই দাঁড়া। তোরটা পরে নিতেছি।ভিতরে চল। ভিতরে শুনব কী হইছে। ভিতরে কাজটাজ করে, ওই যা। পরে আহিস। পরে দেখা করিস, দেখমুনি। পরে এইটা। দেখা যায় কোন এক জায়গায় বাসা ভাড়া নিতে গেলে সেই জায়গায় যদি জানে সেক্স ওয়ার্কার, সে তো বাসা জীবনেও দেবে না। মিথ্যা কথার আশ্রয় নিয়ে তারপর বাসা নিতে হয়। যদি জানে তারপর এলাকার মানুষজন মাইরা বাইর করে। মাইরা বাইর করে! এরা তো কোন জায়গাতেই তাদের কোন জায়গা নাই। কোন জায়গায়ই তাদের কোন সম্মান নাই। কোন ইজ্জত নাই। কুকুরেরও দাম আছে। সেক্স ওয়ার্কারদের কোন দাম নাই।
সূচনা: সত্যি কথা। কু কুরেরে তো পানি দেয় না? তাগোরে খাবার দেয় না? তাগো দাম আছে কিন্তু আমাগো দাম নাই।
সম্পাদক: আপনারা এই যে হসপিটালের কথা বললেন, এরকম হসপিটালের মত আরও জায়গা, মনে করেন…
রেহানা: আপা, কোন একটা জায়গা নাই…সরকারি ক্ষেত্রে, মনে করেন যে, আমরা তো গরীব। আমরা তো পারব না কোন প্রাইভেট মেডিক্যালে যাইয়া ডাক্তার দেখাইতে। পারব না ভাল কোন জায়গায়, ওসি/ডিসির সাথে দেখা করার মত সক্ষমতা আমাদের নাই। তা আমরা কোন পর্যন্ত যাইতে পারি সে পর্যন্তই আমাদের ইয়ে নাই। একটা ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট করতে গেছি, জানে যদি সেক্স ওয়ার্কার, সে তো আমার জীবনেও হইব না। এইরকম প্রত্যেকটা সেক্টরে, আপা, আমরা একদম অবহেলিত।
সম্পাদক: যেরকম এখন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে আপনার সার্টিফিকেট দেখান লাগে কোথায় কাজ করেন…
রেহানা: সবকিছু চাওয়া হয়। তা আমরা কী দিব, আপা? আমাদের তো কিচ্ছু নাই। কোন জায়গায় আমাদের কোন মূল্যায়ন নাই। আমরা প্রত্যেকটা জায়গায় অবহেলিত।
সম্পাদক: আপনারা ভ্যাকসিন নিতে পেরেছেন কেউ?
সূচনা: না। ভ্যাকসিন দিতে গেলে ফর্মেতো জিগাইব না? কোন জাগায় চাকরি কর? ওই জাগায় তো সমস্যা। ভ্যাকসিন দিবার পারি নাই।
সম্পাদক: ভ্যাকসিনের রেজিস্ট্রেশনের সময় ওইখানে তো ওইটা নাই- ও যে আপনি যৌনকর্মী হিসেবে পরিচয় দিতে পারবেন। ফ্যাসিলিটিই নাই আপনাদের জন্য। ভ্যাকসিন নিতে গেলে বরং আরও আপনাদের সরায় দিবে।
সূচনা: সরায় দেবে মানে? দূরদূর করবে!
রেহানা: সাধারণ চিকিৎসা নিতে গেলে তা-ই দেয় না! এছাড়া, ওই যে সেক্স ওয়ার্কার দেখা যায় অনেক সময় রাস্তাঘাটে থাকে। তাদের কোন গোসলের জায়গা নাই। অনেকে রাস্তায় থাকে। আমরা তো ঘরে থাকি।অনেকে রাস্তায় থাকে। কোন ইনকাম নাই। তারা রাস্তায় থাকে। রাস্তায় থেকে অসুখবিসুখ অনেক হয়। দেখা যায় বিভিন্ন ধরণের রোগে আক্রান্ত হয়। তখন সে কী করবে? ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার চিকিৎসা দেবে না। ডাক্তার বলবে, তুই সর! তোর কাছ থেকে আমারও জীবাণু ছড়াইব। ঠিক আছে? তারপর সে কী করব? তো রাস্তায় ধুইক্কা গিয়া মরে। কিচ্ছু করার নাই। কত্ত মেয়েরা রাস্তাঘাটে, আপনারা তো চলাফেরা করেন দেখেন।তাদের কী আছে? না কোথাও গোসল করতে পারে, না একবেলা খাইতে পারে, না চিকিৎসা নিতে পারে, না বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে পারে।
সম্পাদক: তাদের তো দেখা যায় যে ওইজন্য তাদের বাসাবাড়ি নাই বা ওই চিকিৎসার সুযোগগুলো তারা পায় না, তারা দেখা যায় কাজও কম পায়।
রেহানা: কাজ না পায়া তো তারা না খায়াই মরে। কেউ পাগল হয়ে যায়, কেউ ভিক্ষা করে। দেহেন না?
সম্পাদক: আপনারা কে কেমন পড়াশোনা করছেন? আপনি (সূচনা) তো ইন্টার পাশ করছেন। আপনারা?
সূচনা: আমরা পইড়া লাভ কী? দাম আছে এই পড়ার?
রেহানা: আপু, আমি তো একবারেই জিরো পার্সেন্ট। আমি কোন লেখাপড়া করি নাই।
হুমায়রা: আমি করছি মাত্র ফাইভ পর্যন্ত।
অ্যাডমিন: (নাতাশাকে উদ্দেশ্য করে) আর তুমি কতদূর পর্যন্ত পড়াশোনা করেছ?
সম্পাদক: আপনি তো কথাই বললেন না আমার সাথে। আমি রাগ করলাম!
নাতাশা: আপনি তো আমাকে কিছু জিগাসা করেন নাই। এরজন্য বলি নাই।
সম্পাদক: এগুলা আসলে কমন কোশচেন। সবাই একটু কন্ট্রিবিউট করলে ভাল হয় আরকী। কারণ আমি তো বলেছি, আমি তো কথা দিয়েই দিয়েছি, আমি ব্যক্তিগত কোন প্রশ্ন করব না।
নাতাশা: আমি পড়াশোনা করছি মেইনলি টেন পর্যন্ত। তারপর আর পড়াশোনা করব না। বাদ দিয়ে দিছি।
সম্পাদক: কেন পড়াশোনা ভাল লাগত না?
নাতাশা: ভাল লাগত না বলতে…হ্যাঁ, ভাল লাগত। সমস্যা ছিল অনেক। এরজন্য ছাইড়া দিছি। এখন ব্যবসাট্যাবসা করতেছি। নিজের মত নিজে ইয়া করব। আর পড়াশোনা করলে কী হয়? এই পর্যন্তই এনাফ। আমি টেন পর্যন্ত পড়ছি। আমি দেখি কী করা যায়। নিজের মত কইরা এই যে ব্যবসা করতেছি। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য।এইটাই।
সম্পাদক: আপনাদের কি মানে অন্য কোন স্কিল আছে? এটা বাদে।যেটা ধরেন, আপনারা কাজ করে খাইতে পারতেন বা যেটা শিখছেন কখনও বা ইউজ করতে পারেন এভাবে? যেমন, দর্জি কাজ, হাতের কাজ…
হুমায়রা: হাতের কাজ সবই পারি।
সম্পাদক: ওইটা দিয়ে আপনাদের কোন সাইড ইনকাম হয়?
হুমায়রা: সব সময় তো থাকে না। আসে, বছরে একবার আসে। যেমন (এলাকার এক বাজার) একটা ফ্যাক্টরি থেইকা। ফ্যাক্টরির কিছু কাজ আইলে ওইটা করে। এক সপ্তাহ থাকে। পরে আর নাই। স্থায়ী কাম না।হাতের কাজ যত পদের আছে, যদি আমার ওই ধরণের লোক থাকে তাইলে আমি নিজে করতে পারব। কিন্তু, আমার তো লোক নাই।
সম্পাদক: আর আপনার হচ্ছে মেশিনই নাই। ওই যে ইনভেস্টমেন্টটা ওইটাই নাই।
সূচনা: কিন্তু, আমি কাজ জানি।
সম্পাদক: কাজ জানেন কিন্তু কাজটা খাটাতে পারছেন না।
সূচনা: মেশিন ছিল, বিক্রি কইরা দিছি। বড় লকডাউন হইছে।
সেইসময়কায় একদম কাজ বন্ধ। ওইসময় বিক্রি কইরা দিছি।
সম্পাদক: এখন আর মেশিন কিনতে গেলে যে টাকাটা দরকার ওইটা আর নাই।
সূচনা: খাইতেই পারি না!
সম্পাদক: যদি সুযোগ পাইতেন, যদি মনে করেন মেশিনও থাকত, তাইলে কি ওই কাজটাই আপনার মেইন ইনকাম সোর্স করে ফেলতেন?
সূচনা: মেইন তো আর হবে না। কারণ কী, কাজ আসপে আবার আসপে না।
সম্পাদক: যদি ওইরকম কাজ হইত?
সূচনা: হইলে তো সোনায় সোহাগা। আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকর।
সম্পাদক: যদি এরকম কোন ইনসটিটিউশন পান যারা আপনি সেক্স ওয়ার্কার কিনা এটা হয়ত দেখল না, তারা জাস্ট কাজের লোক চায়…
সূচনা: হ্যাঁ, তাইলে তো আমরা রাজি! কেডা চায় না? আমরা তো মনে মনে চাই ভালা পথে যাই। কেউ ইচ্ছা কইরা কি মনে চায়? হাতে ব্যথা পাব, পাথরের তলে হাত ছেঁচব, কেউ কি ইচ্ছা কইরা হাত দিব? হাতটা আরও সরামু নিরাপদে থাকার লেইগা যাতে ব্যথা না লাগে। আর এখন যেই রাস্তায় আছি পদে পদে, পায়ে পায়ে বিপদ।
সম্পাদক: আমি তো হেলথ কেয়ারের কথা বললাম, চিকিৎসা সেবার কথা বললাম, টাকার সমস্যা বললাম, কাজের সমস্যা বললাম। এছাড়া কি আপনাদের কি আর কোন সমস্যা আছে যেটা আমি হয়ত ধরতে পারি নাই, যেটা হয়ত আপনাদের প্রতিদিনই ফেইস করা লাগে?
সূচনা: এই যে যেমন, একজন সংসার করতেছে। এইডাই তো বড় সমস্যা। আমার মনে জাইগ্গা উঠতে পারে না? আপনি ধরেন ভাল একটা খাবার খাইলেন। আমি দূর থেইকা দেখলাম। আমার কিন্তু অনিচ্ছাসত্ত্বেও মনে পইড়া যায় যে ওই জিনিসটা যদি আমি খাইতে পারতাম! কিন্তু, আমি কিন্তু টাকার জন্য খাইতে পারতেছি না। এক টাকার জন্য গেলে আমার যাইতে হইব দশ ব্যাডার লগে ঠ্যাঙ্গাইতে। কিন্তু, দশ ব্যাডাও তো নাই। তাও তো পাই না, মাইর গুঁতা খাইয়া আসি। পরে জানডা নিয়া ফেরত আসি।
রেহানা: আপা, আমি আরেকটা কথা বলি। প্রথমত, সেক্স ওয়ার্কারদের জন্য যদি মাঝেমাঝে কিছু ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা যেত তারা একটু ডেভেলপ হত। তাদেরকে বিভিন্ন কাজের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া যেত তাহলে তারা আরও ডেভেলপ হত। মানে বিভিন্ন সভা, সেমিনারে যদি এরা যাতায়াত করতে পারত, তাদের যদি ওইরকম কথা বলতে দেওয়ার সুযোগ হত…দেখা যায় যে, আপনারা এখন মাত্র চারজন আসছেন, আমাদের কথাগুলো শুনতেছেন। কিন্তু, আপনাদের মত আরও চারজন আমাদের কথা শুনত! মানে, আমরাও একসাথে তাদের সাথে মিশতে পারতাম।আমরাও দেখতাম তারা আসলে আমাদের সাথে সুন্দর ব্যবহার করতেছে।আমাদের সাথে ভাল ব্যবহার এই পর্যন্ত কেউ করে না, আপা। একটা ছোট পোলাপান, সেও তুই-তাংকারি ব্যবহার করে। বুঝছেন? অখাদ্য ভাষায় কথা বলে যে, খানকি যাইতেছে। বিভিন্ন অখাদ্য ভাষায়, যেগুলা, মানে, বলা যায় না। সেক্ষেত্রে মনে করেন যে, আমরা চাই যদি, যারা সেক্স ওয়ার্কার আছে তাদেরকে বিভিন্ন ট্রেনিং দেওয়া যাইত, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া যাইত। মানসিক বিকাশের জন্য বিভিন্ন ধরণের সেমিনার হয়… এগুলা দেওয়া যাইত তাহলে…দেখা যায়, অনেক মেয়েরা কিন্তু আত্মহত্যাও করে। অনেকে বিষণ্নতার কারণে হাত কাটে। এই দেহেন, উনারও আছে।
আমারও আছে, আমি ওনারটা কেন টোকাই! এটা কেন হইছে জানেন? বিভিন্ন সময় মানসিক এমন চাপ আসে যার জন্য নিজের জীবনটাকেই মনে হয় যে শেষ করে দিই। এদিক দিয়ে একটু কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা যেত।বিভিন্ন যারা এগুলা নিয়ে কাজ করে তারা আমাদেরকে একটুহেলপ করত।মানে, কাউন্সেলিং করত যাতে আমরা নিজের প্রতি নিজে বিরক্ত না হই, আস্তে আস্তে ধৈর্য ধরি, আমরা যাতে বিভিন্ন সমাজের সাথে মিশতে পারি।এভাবে যদি ডেভেলপ করতে পারত আমাদেরকে। তাহলে আমাদের জন্য অনেকটা ভাল হত। কারণ, আমরা আইনের যে কয়টা ধারা আছে, আমি যে আদৌ আইনের সহায়তা পাওয়ার যোগ্য…মানে, আমি দেশের নাগরিক।
আমি যেহেতুদেশের ভোটার, আরেকজন মানুষ যা পাবে আমিও তা পাব।আইনের সহায়তা বলেন, চিকিৎসা সেবা বলেন, বাসস্থান বলেন, সব কিছু পাওয়ার অধিকার কিন্তু আমার আছে। সেক্ষেত্রে আমি কিন্তু জানিই না, আমার অধিকার কী আমি জানিই না। তাইলে আমি আপনার কাছে কী যাইয়া চাব? আমার অধিকার কী? কীভাবে চাব? সেই বিষয়ে আইনের সহায়তায় আমাদের কী কী অধিকার আছে, কী কী উপকারগুলা পাইতে পারি সেরকম ট্রেনিং, তারপর আমরা যাতে মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ি, সুইসাইড না করি, এই ধরণের হামালতীত না কাটি এজন্য কোন যারা বড় আছে যে, কাউন্সেলর, তারা আমাদের কিছু কাউন্সেলিং করত, আমাদের মেয়েদেরকে তারা…দেখা যায় যে আপা, এভাবে আস্তে আস্তে ডেভেলপ হইতে হইতে তারাও কিন্তু, নিজের ওপর নিজের টর্চারিংটাও কিন্তু কইমে আসত। ঠিক আছে? তারপর দেখা যায় অনেকে আত্মহত্যাও করে। টাকা নাই, পয়সা নাই কী করব? হতাশার কারণে আত্মহত্যা করে। এটাও হত না।আমরা চাই, বিভিন্ন ধরনের ট্রেনিংগুলি আমরা পাইতে পারতাম তাইলে আমাদের জন্য অনেক ডেভেলপ হইত। ভাল হইত।
সম্পাদক: আপনাদের কি এরকম কোন সমস্যা আছে যে নেশা করার…
রেহানা: আপা, নেশা প্রত্যেকজনেই করে। কারণ, আমার জীবনটা এখন বিতৃষ্ণায় ভরা। আমি কী করবে?
সূচনা: এক হিসেবে আমি বাঁচছি। আগে বিড়ি খাইতাম। টাকার অভাবে এখন বিড়ি খাওয়া বন্ধ হইছে।
রেহানা: হ্যাঁ, বিড়িটাই মূলত নেশা না। দেখা যায়, অনেক সময় মোটাতাজা করার জন্য ইনজেকশন দেয়…
সম্পাদক: স্টেরয়েড দেয়।
রেহানা: তারপর মনে করেন যে অনেক ধরনের বিভিন্ন বড়িটড়ি আছে।ওগুলাও অনেক সময় খাই। কারণ, ভিতরটা অশান্তি লাগে, তখন তো খাইতে হয়। দেখা যায় অনেক সময় কোন পার্টিতে গেলাম, তখন মদটদও খাই। সবই খাই, আপা, আমরা, বুঝছেন? কিন্তু, দেখা যায় যে, খুশিতে, অনেক সময় মন চায়, দুঃখেও খাই। ধরেন, যে একটা জায়গায় ভাল কিছু টাকা পাইলাম। তখন একটু খুশি লাগলে, যাহ, সবার সাথে একটু পার্টি করি। আবার দেখা যায়, অনেক কষ্ট যখন পাইলাম তখন ইচ্ছা কইরা বেশি কইরা নেশা করলাম। মইরাই যাব, বাঁচব না।এইরকম আরকী।
তারপরে আপা, দেখা যায় যে, সেক্স ওয়ার্কারদের বাচ্চারা স্কুলে পড়তে পারে না। যদি জানে তার মা সেক্স ওয়ার্কার, ওই বাচ্চাকে কখনোই স্কুলে থাকতে দিবে না। আপা, তাহলে এদের জন্য কিছু করা যেত। আমার চিন্তাভাবনা এরকম যে, সেক্স ওয়ার্কারদের বাচ্চারা জানি স্কুলে পড়ালেখা করতে পারে। তারা জানি কোন বৈষম্যের শিকার না হয়। তারা জানি চিকিৎসা পায়। সেক্স ওয়ার্কাররাও যেন চিকিৎসা পায়। প্রত্যেকটা জায়গায় আইনের সহায়তা পায়। আপা, এই ট্রেনিংগুলা, বিভিন্ন বিষয়ে আমরা যা না জানি, আমাদেরকে যদি একটু ডেভেলপ করা যাইত, তাহলে আমরা হয়ত বা অনেক কিছুফেইস করতে পারতাম যা এখন পারি না।
সম্পাদক: এখানে যদি সরকার এমন কিছু করে যে আপনাদের বাচ্চাগুলাকে ওভাবে যাতে ডেভেলপ হয় তাদেরকে একটা ফ্যাসিলিটিতে নিয়ে যাবে, সেক্ষেত্রে দেখা যাবে আপনার বাচ্চা আপনার থেকে নিয়ে গেল।
রেহানা: আপা, বাচ্চা তো কেউ দেবে না কাছে।
সূচনা: না! না! যেমন ও তো আমার পরিচিত। ওর গ্রামের বাড়িও আমি চিনি না, আমার গ্রামের বাড়িও ও চেনে না। ও যদি কাজে যায়, আমার কাছে থুইয়া যায় ওই বাচ্চা। আর আমি যদি কাজে যায়, তাইলে ওর মাইয়া তো ওর কাছেই থাকে। তো, একটা বিশ্বাসের ওপর থুইয়া গেল না? তারপরও তো ফেরত আইসা বাচ্চার মুখ দেখতে পারে। টাকা পয়সডা বড় কথা না, মুখ দেখলেও একটু শান্তি। হইয়া যহন গেছে। শয়তানের ব্যাটা গেছেগা। জন্ম দিতে পারছস, খাওয়াইতে পারস নাই? বিয়া কইরা গেছেগা।
রেহানা: আপা, কোন কোন সেক্স ওয়ার্কারদের সাথে মিষ্টি মিষ্টি কথা কইয়া… দেখা যায় অনেক সেক্স ওয়ার্কার আছে যারা সুন্দরমুন্দর দেখতে খুব, যারা মার্কেটে চলে বেশি…দেখা যায় যে, কোন এক ছেলে তারে পছন্দ করল। পছন্দ কেন করল? তার ইনকাম ভাল, সে আমাকে দীর্ঘদিন ইনকাম করে খাওয়াতে পারবে। তাহলে ওই মেয়েটার সাথে সুন্দর ভালবাসার অ্যাকটিং করে। করার পরে ওর বাবু হয়ে গেল। ঠিক আছে? মনে করেন যে, তার প্রেমিকা বলেন বা যাই বলেন, তো হয়ে গেল। সেক্ষেত্রে এখন কী করবে? সেই মেয়েটা যে দৈনিক টাকাডা ইনকাম করবে, সে এইডা কী করবে? সে ওই ছেলের হাতে আইনা দেবে। প্রতিদিন। দেখা যায় যে একসময় মেয়ে কামাই কইরা দিতে দিতে যখন তার, দেখা যায়, বড় একটা অসুখ হয়ে গেল বা কোন একটা বিপদ হয়ে গেল, তখন আস্তে আস্তে ওই ছেলেও কিন্তু আর পরিচয় দেবে না। তখন দেখা যায় যে সব টাকা পয়সা খাইয়া চলে যায়। এইটা বেশি হয় আমাদের ভেতরে। কারণ কী, এই সেক্স ওয়ার্কারদের ভেতরে দুর্বলতাটা আসলে কী, আমাদের ভালবাসার দুর্বলতা। কেউ যদি একটু ভালবাসে, তারে জীবনটাও দিতে পারি আমরা। এইরকম। সেইভাবে দেখা যায় যে অনেক সময় এইরকম ভুলগুলা হয় আমাদের দ্বারা যে, কোন একটা ছেলে আমাদেরকে অফার করল…কারণ, আমাদের তো কোন ঘর নাই, সংসার নাই, কোন স্বপ্নও নাই, হ্ যাঁ? সেখানে কোন ছেলে যদি অফার করে যে, ভাল লাগে, ভালবাসি তখন আমাদের আর কিছু থাকে না। মনে হয় যে সে-ই পৃথিবীর সব। সেক্ষেত্রে যা ইনকাম তার হাতে দিতে আমাদের খারাপ লাগে না। যখন দেখা যায় আর ইনকাম করতে পারে না, তখন আরেক মেয়ের পিছনে যায়। তখনই কিন্তু সমস্যাটা বাজে যখন আরেক মেয়ের পিছে যায় যে, “তোরে এতদিন ভাল্লাগছে, এখন লাগে না, তুই যা!” …কিছু আমার করার নাই। আমি কী করব, কিচ্ছু করার নাই।
হুমায়রা: এইরকম করলে তো তাও ভাল লাগে। ডাইরেক্ট তো কয়, “তুই তো খানকিগিরি করছ। তোরে নিয়া আমি কী করমু? যতদিন তোরে ভাল লাগছে, ততদিন তোর লগে ছিলাম। এখন ভাল লাগে না এখন আমি যাইগা।”
সম্পাদক: আচ্ছা, আপনারা এই যে কাজের ক্ষেত্রে ধরেন, বার্থ কন্ট্রোলের জন্যে কোন ধরনের সুযোগ সুবিধা কি আপনারা পান? যে বার্থ কন্ট্রোল পিল বা কনডম যাতে আপনারা এভাবে প্রেগনেন্সি পড়ে যান?
রেহানা: না, এইগুলা, আপা, আমরা এখনও এইরকম পাই না আরকী।পাই না।
সম্পাদক: ইভেন যখন আপনারা ক্লায়েন্টের কাছে যান তারা কি এভাবে…
রেহানা: কনডম পরতেও চায় না। তারা বলে টাকা দিয়ে কাজ করব আবার কনডম কিসের? এইগুলা পরব কেন? জোর করলে টাকাও দেবে না, মারধর করে জোর করে সেক্স করবে। সেক্ষেত্রে আর কিছু বলা যায় না।
সম্পাদক: সেক্ষেত্রে আপনাদের নিজেদের যা ব্যবস্থা নেওয়ার নিতে হবে এমন অবস্থা?
রেহানা: নিজেদেরই…আমরা কী ব্যবস্থা নিব, কন আপনারা? কী ব্যবস্থা নিব? দেখা যায় যে, বড়িটড়ি…এগুলাও তো সবসময় পাওয়া যায় না। বেশিরভাগ মানুষই রাস্তায় থাকি আমরা। এখানে ওষুধ কোথায় রাখব? আর, কোন ওষুধে কাজ হবে…মনে করেন, কোন পার্টিতে গেলাম। আসলাম কালকে বিকালে। আমার ওষুধটা নিতে ভুইলাই গেলাম। আমি ওষুধ পাব কই?
হুমায়রা: অনেক সময় তো ব্যাগেও রাখা যায় না। পুলিশ ধরে।
রেহানা: গায়ে তো আর লেখা নাই আমি সেক্স করতে যাইতেছি, সেক্স ওয়ার্কার। পুলিশে ডাক দিল, “এই, এদিকে আস। ব্যাগে কী আছে?” ব্যাগে তো এগুলা রাখলে এমন একদম…”তুমি এইটা?”
সূচনা: ফার্মেসিতে গেলেও শরম না যে মহিলা মানুষ এডি দিয়ে কী করবে? যাইতে পারি না। আগে তো ওই যে পরিবার পরিকল্পনার সরকারি যে হাসপাতালগুলি ছিল, ওইখানে থেকে ফ্রি এতগুলি দিয়ে যাইত। বাসায় আসত। হেরা তো জানত না আমার পরিচয়। হেরা ফ্রি এতগুলো দিয়ো যাইত। আর এহন তো তা-ও পাই না। এখন ফার্মেসিতে কিনতে যাই। যাও পাই কয়, এডা নিতাম না…ট্যাকা দিয়া করমু…মজা লাগে না বলে।
সম্পাদক: আপনাদের কি অ্যাবর্শনে র কখনও চেষ্টা করা লাগছে?
সূচনা: আমি দুইবার করছি।
রেহানা: কত! না হলেও দশবার করছি। কিচ্ছু করার নাই।
অ্যাডমিন: স্যরি!
সূচনা: না, ঠিক আছে। এ তো কম…নাকেমুখে লাত্থি মারে!
সম্পাদক: আরে! আমরা কি আর ওই জন্যে আসছি? আমরা আসছি ভালবাসার জায়গা থেকে।
সূচনা: যেইডা সত্য। এইখানে সালাম দিচ্ছে। একটা সম্মান। টাকা চাইতে গেলে…সত্য কথা যেইডা…একলা থাকলে কান্দি।
রেহানা: আপা, লাত্থি খাইতে খাইতে এমন অবস্থা, ভাল লোকও যদি আসে মনে হয় যে লাত্থি মারতে আসতেছে।এরকম ভিতরটা হয়ে গেছে।
সম্পাদক: এই অ্যাবর্শনগুলা আপনারা কী ধরনের ফ্যাসিলিটি থেকে করাইছেন? হাসপাতাল থেকে নাকি বাসায়?
রেহানা: আপা! এইগুলারে আগে ডাক্তার জোগাড় করতে হয়। জানে তো! একবার কী হইছে জানেন…আমার বান্ধবী। ওয় অ্যাবরশন করতে হইছে। টাকা দিতে হইছে, মনে করেন যে অনেক আগে, দুই হাজার। দুই হাজার টাকা ইনকাম করতেই তো ওর জীবন শেষ। বাড়িত্থেকে, দেশেত্থেকে টাকা আনাইছে। আইনা পরে অ্যাবর্শন করতে গেছে। পরে ওই ডাক্তার কী বলে জানেন? ভিতরে অর্ধেক রাইখা আর অর্ধেক ফালাইয়া কয় কি, ওই, টাকা আরও বাড়ায় দিবি? ওই মৃত্যুশয্যায় সে। কয়, টাকা আরও বাড়ায় দিবি? কয়, তাইলে নাইলে রাখ। উঠ। যাগা। তখন কয়, আপা, আপনার পায়ে ধরি। টাকা আরও বাড়ায় দিমু। কইত্থেকা দেব ও টাকা বাড়ায়া? ও তো দেশেত্থেকেই দুই হাজার টাকা আনাইছে। আপা, অনেক সময় তো দশ-বিশ হাজার টাকা চায়। পাঁচ-দশ হাজার। কয়, এগুলা করি না আমরা। কিন্তু, করতে তো হবেই। হয়ে গেছে। যার না ফালাইতে টাকা নাই, পয়সা নাই, বাচ্চা তো হয়ে যাচ্ছে। কী করবে?
সম্পাদক: তার ওপরে তো মনে করেন অ্যাবর্শন হচ্ছে ইলিগ্যাল আমাদের দেশে। লিগ্যাল হইলে কি ফ্যাসিলিটিগুলা হাসপাতাল থেকে নিতে পারতেন? আপনাদের মনে হয়?
রেহানা: কেমনে নিব? যেখানে ডাক্তার আমাদেরকে সাধারণ রোগ, যৌনরোগ এজন্যই তো আমাদেরকে ওইখানে যাইতে দেয় না। অ্যাবর্শন তো পরের বিষয়। আমরা তো ওখানে ওই ফ্যাসিলিটিটাই পাচ্ছি না। তাহলে?
সম্পাদক: আপনারা এভাবে পিরিয়ড ম্যানেজমেন্টের জন্য, যখন পিরিয়ড হয় তখন ম্যানেজমেন্টের জন্য কীভাবে কী…
রেহানা: আপা, ম্যানেজমেন্টের ওইটা আমরা কিছুই করি না। ত্যানাতুনা, ন্যাকড়ানুকরা যা পাই সেই হইলেই হয়। কারণ, আপা, একটা প্যাডের দাম একশ টাকা। একশ টাকা পামু কই?
সম্পাদক: আগে কিছু সংস্থা থেকে দেখা যাইত ফ্রি প্যাড দিত।
সমস্বরেঃ পাই নাই। শুনিও নাই। আপনার কাছেই শুনলাম। এই শুনলাম প্রথম।
সম্পাদক: অনেক সংস্থা থেকে দেখা যায় যে প্যাড দেয়, কাপ দেয়।
সূচনা: আপনার কাছেই শুনলাম। আবার বড়ি দেয় কত জায়গায়।আমরা তো বড়ি চোখেও দেখি নাই। কিনতে যাব, সবাইর তো মনে করেন জামাই নাই। জামাই নাই এডা প্রমাণ না? যে জামাই নাই না কিন্তু প্রমাণ! কয় কনডম লাগব ক্যা, বড়ি লাগব ক্যা? এইগুলি জিগায়। রিস্কের, কত রিস্কের। আবার যদি কই যে কনডম পরতে কয়, টাকা দিয়া করমু না? মজা লাগে না। এমনেই কাম করমু। আবার এহন তো যাও একটু চলি, কয়দিন পর তো চলমু না। কইব, বয়স হইছে। নিব কেউ? সেইসময় কী করমু? এইও একটা চিন্তা। তখন চলব কী কইরা?
সম্পাদক: বেশ কিছু এনজিও তো দেখা যায় যারা কাজ করে সেক্স ওয়ার্কারদের নিয়ে এবং হিজড়া আপাদের নিয়ে…
অ্যাডমিন: (এনজিওর নাম) তো আছে।
রেহানা: ওরা ব্রোথেল বেজ নিয়ে কাজ করে। ওরা স্ট্রিট বেজ নিয়ে কাজ করে না। বিভিন্ন জায়গায় ব্রোথেলে যেগুলা আছে তাদের নিয়ে কাজ করে। তারা এমনি বাইরের সেক্স ওয়ার্কার নিয়ে কাজ করে না।
সম্পাদক: তারা ইনডিপেনডেন্ট সেক্স ওয়ার্কারদের কোন ফান্ড দেয় না?
রেহানা: না না। ওদের শুধু ব্রোথেল বেজ।
সম্পাদক: আপনারা কি কখনও ব্রথেল বেসিসে কাজ করছেন? যে ওরকম ওই নেটওয়ার্কের ভেতরে?
রেহানা: না। আমরা স্ট্রিটস। আমরা ব্রোথেলে যাই নাই কখনও।
সূচনা: কয়েকদিন আগে একটা পাইছিলাম। ইমোতে। সেক্স করা লাগে।কয়, নাম্বার দেও, বিকাশ নাম্বার দেও, টেকা পাঠাই। কিয়ের? কোন টেকা দেয় নাই। দিছি বলক মাইরা। খালি ফোন দেয়। কয়, আস ময়না পাখি, তোতা পাখি।
তিতাশ: এনজিও গুলোর বড় একটা প্রবলেম হচ্ছে ওদের গণ্ডিতে, যেমন হচ্ছে ওদের খুব কাছের লোকজন ছাড়া…যেমন ধরেন, থাকে না? একটা মন্ত্রী, তার একটা ডানহাত থাকে, বামহাত থাকে। সেক্স ওয়ার্কার নেটওয়ার্কের বিষয়টা হচ্ছে ঠিক ওরকমই। সেক্স ওয়ার্কার নেটওয়ার্ক তাদের পরিচিত যে দশজন বা বিশজন আছে, তারা তাদের গণ্ডির বাহিরে কাউকে ডেভেলপ করতে চায় না। তারা অনেক ফান্ডিং আনে, তারা অনেক জায়গা থেকে ফান্ডিং আনে এই সেক্স ওয়ার্কার যারা একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে আছে তাদেরকে দেখায়া। কিন্ত, তারা কোনরকমের সহযোগিতা করে না। তারা শুধুমাত্র প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকু নই করে। হ্যাঁ , একটা পর্যায়ে কাজ হইছে। মিথ্যা বইলা কাজ নাই। কিন্তু, বর্তমান সময়ে যারা নেত্রী আছে ওদের দ্বারা শুধুমাত্র একটা সংগঠনের বা একটা কাঠামোগত যে বিষয় আছে যে, একটা সংগঠন পরিচালনা করে কারা? একটা সংগঠন পরিচালনা করবে যারা কার্যকরী নির্বাহী পরিচালক আছে তারা। কিন্তু, এই এনজিও গুলো শুধুমাত্র স্টাফদের হাতে বন্দি। কী কারণে বন্দি সেটাও বলি। সেক্স ওয়ার্কাররা শিক্ষিত না।তো, তারা যেই ওয়ার্কারগুলো রাখছে, তারা শিক্ষিত। তো ওয়ার্কারগুলি তাদের ভুল বুঝায়, ভাল বুঝায়। তা-ই। নেত্রী লেভেলে যারা আছে তারা চিন্তা করে কাজ দিয়া কথা। যেমন বড় একটা মিটিংয়ে যাবে, ওইখানে যিনি নেত্রী তিনি গেল, পাশে আরেকজন ওয়ার্কার গেল। সমন্বয়কারী যে আছে উনি গেল। কিন্তু, কথা বলতেছে সমন্বয়কারী। সমন্বয়কারী কিন্তু সেক্স ওয়ার্কার না। আমি একটা সেক্স ওয়ার্কার, আমার মনের যেই ক্ষোভ, আমার যেই দুঃখ সেটা কিন্তু একজন সমন্বয়কারী যে বাহিরের একজন লোক সে বলতে পারবে না। কিন্তু এটা চালাচ্ছে শুধুমাত্র কয়েকজন কর্মী।এই যে তৃণমূল পর্যায়ের সেক্স ওয়ার্কার তারা ওই পর্যায়ে যাইতেই পারে না।ওই যে হাতেগোণা দুই-একজন তোতা পাখি তাদেরকে বড় বড় মিটিংয়ে আনে। মিটিংয়ে আইনা শিখায় দেয় যে তোমরা এটা এটা বলবা। ত্রাণের ক্ষেত্রেও তাই। এবার ত্রাণের ক্ষেত্রেও তাই হইছে। এসব হচ্ছে আমার বাস্তব দেখা। আমি ২০০৭ সাল থেকে সেক্স ওয়ার্কার নেটওয়ার্কের ভলান্টিয়ারি কাজ করছি। আমি এই লাইনে কাজ করছি আজকে প্রায় ১২ বছর। তা আমার খুব কাছ থেকে এগুলো দেখা। ত্রাণের বিষয়টাও…বিভিন্ন জায়গা থেকে ত্রাণ আসতেছে। ত্রাণ পাচ্ছে কারা? ওই যে তোতা পাখি যারা কথা বলতে পারতেছে। আমার নিজের চোখে দেখা, একেকজনের ঘরে বিশটা পোটলা। মানে বিশটা ত্রাণ বিশজনরেই দেওয়ার কথা। কিন্তু, বিশটা ত্রাণ পাচ্ছে কারা? পাঁচটা জায়গা থেকে যদি বিশটা করে ত্রাণ আসে তাহলে ওই বিশজনই পাচ্ছে। কারণ ওই বিশজনই ভোকাল পারসন। মিডিয়ার সামনে কথা বলতে পারতেছে। বিশজনের ঘরে যায়া দেখি আমি একেবারে পরিপূর্ণ। বস্তায় বস্তায় ত্রাণ। ওই বিশজনের কোন টেনশন নাই। টেনশন সব সাধারণ যৌনকর্মী আছে তাদের। এই প্রথাটা ভাঙতে হবে। যারা ডোনার লেভেলে আছে তাদেরকেও বলতে হবে যে, না, আমরা তৃণমূল পর্যায়ের সংগঠনগুলি চাই।
সম্পাদক: ক্ষমতাটা একদম কুক্ষিগত হয়ে গেছে।
সূচনা: এমন একটা কিছু কইরা দেইক…তোমরা এই যে আইছ, কিছু তো কইতে পারি না…তোমরা আইছ। তোমাগো মাধ্যমে…যাতে আমরা কিছু করতে পারি। যা দিয়া আমাগে…কিচ্ছু লাগব না। আছে না, দৈহিক চাহিদা?
সেইডাও লাগব না। খালি পেটের একটা চাহিদা হইলেই হইব। দৈহিক যে চাহিদা হেইডাও লাগব না। পরাণ ভইরা গেছে। আর লাগবে না। কিন্তু, পেটের একটা চাহিদা, বাঁচতে হইলে ওইডা লাগবে। পানি খাইয়াও তো একটু জীবন বাঁচান লাগে? মানে যা একটু কর্ম কইরা খাইতে পারি। তাও আবার ভাল পথে। কারণ, মরার পরে তো একটা হিসাব আইব। আসব না? ওই চিন্তাও তো একটা করি। আমরা কি নামাজ পড়ি না? ভয়ে হইলেও তো… ফেরাউন যারা তারাও ভয়েও তো বুক কাঁপে। আমাগোরও তো কাঁপে কিন্তু কিছু করার নাই। খালি আছে কী? চোখের পানি।
সম্পাদক: আর দশটা মিনিট সময় দেন আমাকে। একটা বাজে। একটা দশে চলে যাবেন। আমার দুইটা কোশচেনই আছে।
অ্যাডমিন: আচ্ছা, তুমি দুইটা কোশচেন করে নাও তারপর আমরা শেষ করে দিচ্ছি।
সম্পাদক: আচ্ছা। আপনাদের এই গল্পকবিতা যে লেখা হচ্ছে, এই যে ইন্টারভিউটা নিলাম, এটাই ট্রানসক্রাইব করে হয়ত আরেকটু সুন্দর করে লিখে, আমিই লিখব, ছাপা হবে। আপনাদের কারও কি কিছু আলাদা করে অ্যাড করার ইচ্ছা আছে, আমি একটা কবিতা লিখতে চাই বা আমি একটা গল্প লিখতে চাই?
সূচনা: আমাগো জীবনই তো একটা গল্প!
সম্পাদক: হ্যাঁ! আলাদা করে ইচ্ছা আছে নিজের?
সূচনা: হ্যাঁ! আমি লেখমু। আমার লেখার ভেতরে যদি গীতিকাব্য ফুঁইটা ওঠে তাইলে তো আরও ভাল, আমি খুশি! কাগজকলম দিয়া যান। আমি একটা গল্প লেইখা দিমু। মানে, আমার জীবনের। এইডাই থাক। এইডাই কবিতা, এইডাই গল্প।
সম্পাদক: এখন ক্লোজিং লাইন হিসেবে আপনাদের কারোর কি আর কিছু বলার আছে? কাউকে, যে কাউকে?
সূচনা: খাইতে চাই, পিনতে চাই। এইডার পরিচয়ই আমরা দিতে চাই না।
হুমায়রা: আমাদেরকে একটা কাজের সন্ধান দেন যাতে আমরা কইরা খাইতে পারি। মানে কাজ কইরা খাইতে পারি। সেটা দশজনের সামনে আমি পরিচয় দিতে পারব, না আমি হাতের একটা কাজ করে খাইতে পারি বা একটা চাকরি করে খাইতে পারি। যেহেতু আমার একটা বাচ্চা আছে। বাচ্চা নিয়ে তো আর সম্ভব না। একটা কাজ দিলে, মানে আপনেগো দিয়াই, একটা কাজ, যেকোন বিষয়েই, যেকোন হাতের কাজ যেমন, শাড়িতে কাজ করা, থ্রি-পিসে কাজ করা, অ্যামব্রয়ডারি; যেভাবে হোক! সব কাজই করতে পারমু। কিন্তু, আমার হইছে মনে করেন লাইনঘাট করতে পারতাছি না। আমার কোন লোক নাই লাইনঘাট কইরা দিব ওই অনুযায়ী করব।বা পাঁচজন দিয়া আইনা করামু যে দুইটা টেকা থাকে। এই লাইনঘাট যদি আমাকে একটু কইরা দিতে পারেন তাইলে আমার আর কিছু লাগব না।
সম্পাদক: বুঝতে পারছি। আচ্ছা, আপু! আপনারা দুইজন অনেক সময় দিলেন। আপনাদের অনেক ধন্যবাদ।
সম্পাদক: আচ্ছা, এবার লেসবিয়ান স্পেসিফিক কিছুকোশচেন..
রেহানা: কী জানতে চান?
সম্পাদক: হ্যাঁ! এই যে আপনার ওম্যান অ্যাট্রাকশনটা আছে বা লেসবিয়ান অ্যাট্রাকশনটা আছে এটা কখন রিয়েলাইজ করলেন আপনি?
রেহানা: আপা, এটা আসলে যখন আমি ছোট, মনে করেন যে শরীরের চাহিদা, মনের চাহিদা হয় নাই, তখন থেকেই ভাল্লাগত। মানে ছেলে ছেলে ভাব। কিন্তু, সেক্সুয়ালি ওইসব কিছু আসেই নাই। বুঝতামও না। কিন্তু তখন থেকেই যে আমি ছেলে ভেতর থেকে ওরকম মনে হইছে। তো, যখন আস্তে আস্তে বয়সটা বাড়ল, মানে আরকী, মনে করেন যে শরীরের চাহিদা আসল তখন আস্তে আস্তে চিন্তা করলাম…সেক্স ওয়ার্কার। কিন্তু, আমার সেক্স কাজটা খুবই বিরক্ত লাগত। প্রথম প্রথম অসহ্য লাগত। কিন্তু, একটা মেয়েকে দেখলে খুব ভাল্লাগত। আপু, হাসেন আর যাই করেন, আমার হৃদয়ের কথা যেইটা। একটা মেয়ের সাথে সেক্স করলে মনে হয় যে আমার ভাল্লাগে। এইরকম। একটা ছেলের সাথে সেক্স কখনই ভাল্লাগে না। এখনও ভাল লাগে না। একটা মেয়ের সাথে করলে ভাল্লাগে। ওইটা মনের চাওয়া বলেন, আত্মার তৃপ্তি বলেন সবকিছুই। ওইখান থেকেই আমি বুঝলাম আমি তো আসলে অন্যজন। আমার ভেতরে যেহেতু একটা মেয়ের প্রতি আকর্ষণ, তাহলে আমি সমকামী। আমি মনে করলাম, আমি সমকামী। এই আরকী।সেক্ষেত্রে, আমি অনেক মেয়ের সাথে সেক্স করছি। সিরিয়াসলি। অনেক মেয়েদের সাথেই…কিন্তু আমি…পার্টনার আমার একজন ছিল। সে, মনে করেন যে, তার সাথে দীর্ঘ বারো বচ্ছর থাকছি একসাথে। তারপর সে মারা গেছে। তার থেকে আমি এখন আরকী…
সম্পাদক: তার কী হল? সে কীভাবে মারা গেছিল?
রেহানা: মারা গেছিল…স্ট্রোক করছিল। নেশা করত। স্ট্রোক করছে।
সম্পাদক: নেশা করত?
রেহানা: হুম। স্ট্রোক করছে। তারপর মারা গেছে।
সম্পাদক: অনেক অল্প বয়সে মারা গেছে?
রেহানা: নাহ। তার বয়স অল্প না। তার বয়স মোটামুটি ত্রিশ-পঁয়ত্রিশের মত ছিল।
ভলিন্টিয়ার ১: উনিও সেক্স ওয়ার্কার ছিলেন?
রেহানা: হ্যাঁ!
সম্পাদক: আপনাদের দুইজনের কি কাজের সঙ্গতিতে পরিচয়?
রেহানা: হ্যাঁ, কাজের সঙ্গতিতে পরিচয়। একটা এনজিওর কাজ করতাম। সে সেক্সের কাজ করত। তখন ওইখানে যাইতাম ফিল্ড পর্যায়ের কাজের জন্য অফিস থেকে। ওইভাবে দেখাশোনা, ভাল লাগা। কথাবার্তা ওইভাবে হইছে। তখন থেকেই আরকী দুইজনের একটা সম্পর্ক। ওর আরেকটা মেয়ের সাথে তখন রিলেশন ছিল। তো মেয়েটারে বিদেশ পাঠায় দিছে। মেয়েটার খুব বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। তো অনেকদিন…মেয়েটাও জানত…ওর সাথে আমার একটা রিলেশন হইছে। কিন্তু, সেইম রিলেশন ওর সাথেই ছিল। তো, মেয়েটা বলছে তুই এক কাজ কর…
সম্পাদক: ওনার একই সাথে দুইটা রিলেশনশিপ ছিল। পলিঅ্যামারাস রিলেশনশিপ।
রেহানা: হ্যাঁ! আমিও আরেকটা মেয়ের সাথেই থাকতাম। শুরুটাই ওই দিয়ে। তার সাথে ওভাবে আমার সম্পর্কটা ভাল ছিল না। ছিল এই সম্পর্কই কিন্তু, সম্পর্ক তার সাথে ভাল ছিল না। কারণ, ও আবার আরেকজনের প্রতি আসক্ত ছিল। সেক্ষেত্রে, ওই যে ওর সাথে আমি যখন ফিল্ডে যাইতাম, কথাবার্তা হইত। ভাল্লাগত। ওইভাবে তার সাথে আমার রিলেশনটাও হয়ে গেছে। ওর সাথে যেই মেয়েটা থাকত ওরে পরে টাকাটুকা দিয়ে বিদেশ পাঠাইছে। ও বিদেশ গেল। পরে দুইজন একসাথে থাকলাম। দীর্ঘ বারো বচ্ছর থাকছি ওর সাথে। তারপর সে মারা গেছে তখন থেকেই আমি আলাদা।
সম্পাদক: (নাতাশাকে) আপনার কথা বলেন।
নাতাশা: একদম ছোটকালেত্থেকে?
সম্পাদক: হুম।
নাতাশা: ছোটকালে যখন আমার সামনে মেয়েরা থাকত, ওইখান থেকে আমি আর হাঁটতে পারতাম না। অনেক লজ্জা লাগত। আমি জিনিসটা বুঝতে পারতাম না। আর যদি ছেলেরা থাকতো ওদেরকে একদম নরমালি বন্ধু মনে হতো। যত ছেলেদের খেলা আছে…মেয়েদের খেলা আমার টোটালি ভাল লাগত না। যত ছেলেদের খেলা আছে ছেলেদের সাথে খেলতে ভাল্লাগত। কিন্তু, ওই যে রিলেশনের ব্যাপারটা একদম ভাল্লাগত না।মানে সবসময় একটা মেয়ের প্রতি ইয়াটা ছিল। এখনও মার্কেটে গেলে যত টি-শার্ট, প্যান্ট…ওইগুলা। মেয়েদের যে একটা জামা দেখলে ভাল লাগবে? না। ওরকম কিছু ভাল লাগে না।
সম্পাদক: মানে আপনার নিজের প্রেজেন্টেশনে আপনার নিজেকে একটু ছেলেদের মত প্রেজেন্ট করতে ভাল লাগে।
নাতাশা: একটু না। আমি মানে মনে হয়, মাইন্ড করেন না, মনে হয় যে আল্লাহ ভুল করে এই শরীরটা দিয়ে দিছে আর মনটা টোটালি একটা ছেলের মত। এইটাই।
সম্পাদক: আপনি কি নিজেকে ট্রান্সজ্ন্ডার বলে আইডেন্টিফাই করেন?
নাতাশা: না, এইটা সম্ভব না। আমাকে ফ্যামিলি তো দূরেই থাক, সমাজ মানবে না। আর অপমান…
রেহানা: আপা, ওকে ক্লিয়ার করেন ট্রান্সজেন্ডারটা…
সম্পাদক: আচ্ছা, বলেন। বলে শেষ করেন।
নাতাশা: মানে, মানুষ কখনও এটা মানতে চায় না। আমি যখন থাকি এভাবে ছেলেদের মত, সবকিছু মেয়েদের মত, ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে খুব কথা আসে যে,”হিজলা নাকি। এটা কী? মাথায় সমস্যা নাকি?” মানে, অনেক কিছু শুনতে হয়।
সম্পাদক: না, আমাদের কমিউনিটিতে অনেকে আছে যারা বায়োলজিক্যালি বা জন্মগতভাবে একটা দেহে জন্মায় কিন্তু তারা আইডেন্টিফাই করে অন্যভাবে। মন থেকে কোন লিঙ্গ হিসেবে আমার পরিচয়, কোন জেন্ডারে আমি পরিচয় দিচ্ছি সেই হিসেবেই আমি নিজেকে ট্রান্সজেন্ডার বলতে পারি। আমার যদি মনে হত আমি একটা ছেলে, ভেতর থেকে, সেক্ষেত্রে আমি বলতে পারতাম আমি ট্রান্সজেন্ডার। আপনার কি কখনও মনে হয় ওরকম যে আপনি বলবেন যে আপনি ট্রান্সজেন্ডার ছেলে?
নাতাশা: অবশ্যই আমার এটা মনে হয়। আমি সবার সাথেই এটা বলি।আমাকে কে বলল না বলল আমার জানার দরকার নাই। আমি সবাইকে বলি আমি ছেলে। আমি টমবয়। এটা আমি সবাইকে বলি। কিন্তু, বলার ক্ষেত্রে অনেকে আমাকে পাগল ভাবে। আর যারা বুঝে তারা বুঝে।
সম্পাদক: এবং সেক্ষেত্রে আপনার সবসময় হচ্ছে মেয়েদের প্রতিই একটা সেক্সুয়াল আকর্ষণ ছিল?
নাতাশা: আকর্ষণ ছিল, এখনও আছে, জানি না মরার আগপর্যন্ত থাকবে কিনা।
সম্পাদক: ছেলেদের প্রতি আপনি কোন ধরনের আকর্ষণ বোধ করেন না?
নাতাশা: না, ওরকম কোন আকর্ষণ নাই।
সম্পাদক: কিন্তু ওইধরনের কমিউনিটিতে এক্সপোজার হয় নাই ওরকম আরও দেখছেন যারা মেয়ের শরীরে…
নাতাশা: হ্যাঁ, এটা একটা আসছিল। ছোটবেলায়। যখন আমার ভাল লাগার, চাহিদা…তখন ফার্স্টে যখন মেয়েদেরকে দেখতাম এরকম হইত…বাট তখন নিজেকে নিজে প্রশ্ন করতাম এটা কী? আমি তো বুঝতেছি না।তাহলে তো আমি পৃথিবীতে একজন ব্যক্তি, এরকম আমার…আমি খুব ভয়ে ছিলাম। দেন যখন সবার সাথে মিশলাম, একটু বড় হইলাম তখন বুঝলাম যে, না, আমার মত হাজারও এরকম মানুষ আছে। তখন থেকে আমার ভিতরে এই ভয়টা কাজ করে না আর আমি নিজের জাগায় নিজে স্টিল আছি যে, আমি এইটাই। আমি আর নরমাল হব না। আমি এইটাই। আর নরমাল হইতে চাইলেও আমি পারব না, সম্ভব না।
সম্পাদক: আপনি নরমালই। যারা অন্য কিছু বলে তারা অ্যাবনরমাল।আপনি নরমাল।
নাতাশা: রাইট, রাইট! থ্যাংক ইয়্যু!
সম্পাদক: আপনার এই যে এই অ্যাট্রাকশনটা মেয়েদের প্রতি বা আপনার নিজের প্রেজেন্স ছেলে হিসেবে, এইটা আপনার কখনও মনে হইছে যে আপনার কাজে বা আপনার লাইফস্টাইলে একটা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে? যেমন এই যে, আপনি এখন একটা দোকান চালাচ্ছেন, এটা কখনও মনে হইছে আপনি নিজেকে ছেলে হিসেবে প্রেজেন্ট করছেন বলে আপনার এই কাজটা করতে অনেক বাধা আসছে। যদি আপনি ট্রেডিশনালি একটা মেয়ের মত জামাকাপড় পরতেন, একটা ছেলের সাথে সম্পর্কে থাকতেন তাহলে হয়ত সমাজ আপনাকে আরেকটু ইজিভাবে মেনে নিত। আপনার দোকানে হয়ত কাস্টমার বেশি হইত। হয়ত মুরব্বিরা আসত। এরকম হয়?
নাতাশা: অবশ্যই এরকম হয়। আর হয় কী? মানে, এরকমই আসে।ফার্স্টে এরকম ভাইবাই আসে যে এ মেয়ে। এর সাথে হয়তবা একটু চান্স নেওয়া যাবে, রিলেশন করা যাবে। যখন আমার গেটআপ, আমার কথা বলার ল্যাংগুয়েজ দেখে তখন বুঝতে পারে যে, না, এরে দিয়ে হবে না। মানে আমার কাস্টমার কইমা যায়। এইক্ষেত্রে তো আমার পক্ষে সম্ভব না।
সম্পাদক: মেয়ে হিসেবে এক্সপ্লয়েট করতে এসে যখন বুঝে যে আসলে এখানে আমি এক্সপ্লয়েট করতে পারব না, হাত লাগাতে পারব না, তখন চলে যায়।
নাতাশা: আর তখনই যে বাহিরে খারাপ খারাপ কথাগুলা যে, না, এ অর্ধেক ছেলে, অর্ধেক মেয়ে। হিজলা। বা অন্যান্য রকমের অনেক কিছু বলে।
সম্পাদক: এই কথাগুলো তো বেশ অফেনসিভ লাগার কথা আপনার, আপনাকে এই যে হাফ-হাফ বলতেছে, অর্ধেক অর্ধেক বলতেছে…
নাতাশা: হ্যাঁ, খারাপ লাগে। বাট, এটা কিছু করার নাই। মানতে হবে।আমি চেঞ্জও হইতে পারতেছি না। আর মানুষ এইটাকে মানতে পারতেছে না। তো, এখন এইটা সহ্য করে নিতে হবে। আমাদের তো কোন অধিকার নাই। আমাদের তো সরকার থেকে কোন পরিচয় তো দিয়ে দেয় নাই যে এটার বিরুদ্ধে আমরা কিছু ইয়া করতে পারব। যেমন, ইন্ডিয়া; এটা কিন্তু স্বীকৃতি দিছে। আমাদের বাংলাদেশে এটা কিন্তু এখনও স্বীকৃতি দেশ নাই। হয়ত আমি জানি না, বাঁইচা থাকতে দেখতে পারব কিনা বাংলাদেশ এটা স্বীকৃতি দিছে।
রেহানা: মৌলবাদী দেশ। কখনই সম্ভব না।
সম্পাদক: আপুর ক্ষেত্রে বলেন। আপনার এই যে কাজের সেক্টরটা, এই যে আপনি বললেন সেক্স ছেলেদের সঙ্গে সবসময়ই আপনার খারাপ লাগছে। কিন্তু, এটাই তো আপনার মূল পেশা হিসেবে থেকে গেছে, তাই না?
রেহানা: মূল পেশা হিসেবে থাকছে কিন্তু নাহলে আমার পেট চলবে না। কিন্তু, মনের যে একটা চাহিদা, মনের চাওয়া পাওয়া, ভাল লাগা ওইটা আমার একটা মেয়ের প্রতি। কখনই একটা ছেলের প্রতি যাবে না।
সম্পাদক: কতবছর ধরে কাজ করতেছেন?
রেহানা: আমি তো, মনে করেন যে, তাও হবে পনের বছর।
সম্পাদক: এবং এই দশ-পনের বছর ধরেই আপনি এরকম রিপ্রেসডভাবে কাজ করতেছেন…আর (নাতাশা) আপুর কি কখনও কোন মেয়ের সাথে রিলেশনশিপ ছিল?
রেহানা: একজন নি? হাজার ছিল!
নাতাশা: অনেক ছিল।
সম্পাদক: অনেক ছিল?
রেহানা: একটা মেয়ে এর জন্য এইখানের তিনতালা থেকে লাফ দিছে।হ্যাঁ? ওর মা-বাপ সবাই জানত যে এর সাথে তার কী…ওরা তো বুঝে না
নাতাশা: বাট মানে এটা বুঝত যে এটা মেয়ে, এটা সম্ভব না। আর ও চাইত আমাকে বিয়ে করতে।
রেহানা: সোজা বিয়ে। এখনও সেটাই চায়।
নাতাশা: ও স্ট্রেইট ছিল। ও আমার মত ছিল না। ভালবাসার মায়ায় ইয়া হয়ে গেছে তো। ওর বাবা-মা আমার কাছে আসতে দিবে না আর ওর বাবা-মার কথা হচ্ছে, ধরে রাখবে ওকে। দেন ও কী করছে, ওর বাবা-মার কথা শোনে না। অনেক ঝামেলা করছে। তিনতালা থেকে লাফ দিয়া…
রেহানা: প্রতিদিন রাইতে ও আমাদের বাসায় ঘুমাইতে যাইত ওই মেয়ে।এখন ওরে রাইতে আসতে দিব না, ওর সাথে কথা কইতেও দিব না। এই একটা মানসিক চাপ দিছে না? ও তো ছোট। একদম তিনতালাত্থেকে পড়ছে লাফ দিয়ে।
নাতাশা: অতও ছোট না। সতের হবে।
রেহানা: বয়স আর কত হবে? সতের হয় নাই বা সতের।
নাতাশা: মানে সতের হবে, এরকম।
সম্পাদক: তুখোড় প্রেমকাহিনী!
অ্যাডমিন: এখন? এখন? এখন কী অবস্থা?
রেহানা: এখন ও গ্রামে গেছে।
নাতাশা: মানে এখন ওই ঝামেলা হওয়ার পর ওকে এখান থেকে সরায় দিছে। তাও ও এখনও আমার কাছে আসতে চায়। আমি তো জানি এটা সম্ভব না। আর ওর বাবা-মা আমাকে হুমকি দিছে। তার জন্য আমিও এখান থেকে টোটালি সরে আসছি।
সম্পাদক: এছাড়া, মনে করেন, আপনার এই অ্যাট্রাকশনটা আসলে চাইলেও ছেলেদের প্রতি আসে না। এটা তো সম্ভব না। তাহলে আপনারা পার্টনার পান কীভাবে?
রেহানা: আপা, পার্টনার একটুজোগাড় করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন, প্লিজ।
সমস্বরে: (হাসি!)
ভলিন্টিয়ার ১: আমাদেরও…
সম্পাদক: লজ্জা পাইছি আমি!
নাতাশা: না, একচুয়েলি পার্টনারের ব্যাপারটা হাসির না।
ভলিন্টিয়ার ১: না না না, ট্রু! এটা সিরিয়াস।
নাতাশা: হ্যাঁ। মনে করেন, একটা ফ্রেন্ড। একটা মেয়ে ফ্রেন্ড। মিশতে মিশতে বা কথা বলতে বলতে ওর শরীরে একটু হাত দেওয়া, আস্তে আস্তে যখন সেক্সের ব্যাপারটা হয়ে যায় তখনই মায়া ব্যাপারটা চইলা আসে আর তখনই রিয়েল লাভের মাঝে চইলা যাওয়ার পর বিয়েশাদি কিছু একটা… মানে হুট কইরা তো আর হইয়া যায় না। মিশতে মিশতে, চলতে ফিরতে এরকম মায়ার মধ্যে পড়ে যাই। এটাই।
সম্পাদক: আপনার তো হুট করে ছাদ থেকে লাফ দিয়ে দিছে। আপনি আবার কথা বলেন!
রেহানা: আপা, শুধু এইটা না! ওর পিছনে অনেক গুলা! আল্লাহরে!
সম্পাদক: ভাইয়া তো একদম সেই লাইফ লিড করছেন…আপনারা কখনও চিন্তা করছেন যে টিন্ডার বা বাম্বল এই টাইপের অ্যাপগুলা ইউজ করার?
নাতাশা: হ্যাঁ, টিন্ডার লাইটটা আমি একবার ইউজ করছিলাম।
অ্যাডমিন: ‘হার’ চলে এখন?
সম্পাদক: ‘হার’ এখন বোধহয় চলে না। এ ধরনের রিউরাল এরিয়ায় হার চলবে না।
অ্যাডমিন: ফেইসবুক গ্রুপগুলি? ফেইসবুক আইডি, ফেইসবুক গ্রুপগুলি? লেসবিয়ানদের গ্রুপ…
রেহানা: ভাইয়া, ওইটা একটা রিক্সি হয়ে যায়। আমার কাছে মনে হয় যে আতঙ্ক।
অ্যাডমিন: ফেইক আইডি?
রেহানা: ফেইক আইডি না। আমার একটা আইডিই আছে। আমি ফেইক টেক খুলি নাই।
সম্পাদক: ওইটার জন্য তো একটা সার্টেইন লেভেল অফ লিটারেসি দরকার।
নাতাশা: না, ফার্স্টে কী হয়…আমি ছেলেদের মতই কথা বলি। দেন, যখন বুঝতে পারে তখন তে ব্লক…
অ্যাডমিন: আচ্ছা, আচ্ছা!
রেহানা: আল্লাহ, ও এত মেয়েদের কীভাবে বিদায় করে আল্লাহই জানে।
তিতাশ: কন্যারাশি না আপনার?
সম্পাদক: কন্যারাশি! আহারে…
রেহানা: ও যখন মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয়…ও তো বড় বড় বাইকটাইক আরও চালাইতে পারে…সবই পারে…তখন সে এলাকার রাজা হয়ে যায়। একদম ওরে অন্যরকম লাগে।
নাতাশা: আসলে কী, আমার ভেতরে জিদটা কী থাকে? একটা ছেলে যেইটা পারে তার থেকে বেশি থাকব আমি। ছেলেরা যেটা পারে সেটা কি আমি পারব না? অবশ্যই, আমার ওইটা তার থেকে বেশি করতে হবে। আর আমার ছোটত্থেইকা, মেয়েদের কোন রান্নাবান্না, কাজটাজ একদম ভাল্লাগে না। একদম বাহিরে বাহিরের কাজ আমার খুব ভাল্লাগে। দোকানদারী বা রইদের মধ্যে টানাহেঁচড়া মানে পরিশ্রমের যে কাজটা, ওইটা ভাল্লাগে। ঘর মুছা, থালাবাটি ধোয়া, রান্নাবাড়া এগুলা ভাল্লাগে না।
সম্পাদক: এজন্য কি ফ্যামিলিতে আপনি অবস্ট্যাকল…
রেহানা: আপা, ওর ফ্যামিলিতে গে ও আছে, লেসবিয়ানও আছে। ওর ফ্যামিলিতেই একদম!
ভলিন্টিয়ার ১: আসলেই?
নাতাশা: হ্যাঁ। আমার ভাইগনা, আমার বড় বোনের ছেলে…ও আমার তিন মাসের বড়…ও এরকম। গে।
ভলিন্টিয়ার ১: ওপেন? মানে, আপনার সম্পর্কে জানেন উনি?
নাতাশা: আমরা সবাই ফ্রি। আমার একটা আছে বড় আপু, মাস্টার্স কমপ্লিট, শেষ। তিন বছর হয়ে গেছে। শেষ হয়ে গেছে। সে লেসবিয়ান।আমরা ওপেন। আমাদের ফ্যামিলিও এটা জানে, মাইনাও নিছে। মানে, মানতে তো সবাই একটু প্রবলেম হয়। তারপর এমনিই মাইনা নেয়। তখন মানে ইয়া করে। ফার্স্টে পাঁচ বছর একটু প্রবলেম হবেই।
সম্পাদক: এখন ফ্যামিলির সাথে আপনার বন্ডিং ঠিক আছে?
নাতাশা: হ্যাঁ, এখন অনেক ভাল। ঠিক আছে। এখন ফ্যামিলির থেকে বাহিরে।
অ্যাডমিন: তারা জানে ব্যাপারটা?
নাতাশা: হ্যাঁ, সব জানে তারা। টোটালি…মানে, প্রথম থিকা আমি আপনাকে বলি। আমার যখন তের বছর ছিল, আজ থেকে আরও পাঁচ-ছয় বছর আগে, আমার একটা বিয়ে দিছিল। বিয়ে ঠিক করছিল। ওইখান থেইকা আমি চইলা আসছি। তারপর থেইকা আমি একা একা, ওই একাই।তারপর এখন তো পাঁচ বছর হয়ে গেছে। এখন আমার তাদের সাথে খুব ভাল বন্ডিং।
রেহানা: মানে ওরা জোর করে দিবেই। ও পালায় আসছে।
নাতাশা: ওরা মাইনা নিছে যে, আমি এরকম, আমি এরকম থাকতেই পছন্দ করি, আমার আর ওইসবের মধ্যে নিবে না। তারা ভাবে যে আমি একটা ছেলে।
সম্পাদক: আপনি যে এই দোকান দিয়েছেন বা কাজ করছেন এর জন্যে আপনি ফান্ডিং পাইলেন কোথায়? ফ্যামিলি থেকে দিয়েছে?
নাতাশা: হ্যাঁ, ফ্যামিলি থেকে দিছে। কিছু ফ্যামিলির ছিল, কিছু আমার ছিল।
সম্পাদক: এছাড়া কি অন্য কোন কাজটাজ করেন আপনি?
নাতাশা: না, এছাড়া কোন কাজ করি না।
সম্পাদক: এটাই আপনার প্রাইমারি ইনকাম সোর্স?
নাতাশা: হ্যাঁ, এটাই।
সম্পাদক: যেটা আমি আপুদের আগে জিজ্ঞেস করলাম, এছাড়া যদি আপনার কোন স্কিল থাকত সেটাকে কি আপনি প্রাইমারি ইনকাম সোর্স বানানোর চেষ্টা করতেন?
নাতাশা: হ্যাঁ, অবশ্যই করতাম। এছাড়া যদি কোন ইয়ে থাকত।
সম্পাদক: কম্পিউটার স্কিল কখনও শেখার চেষ্টা করছেন?
নাতাশা: চেষ্টা করছিলাম। চেষ্টা করতে করতে মনে করেন যে যখনই যাই তখন আর হয় না।
সম্পাদক: আপনি কি এরকম অবসট্রাকশন ফিল করেন যে আপনি কোথাও কিছুশিখতে গেলে আপনাকে ওরকম বাদ দিয়ে বাদ দিয়ে করছে কারণ ওরকম ট্রেডিশনালি মেয়ে মেয়ে ভাব নেই আপনার মধ্যে।
নাতাশা: হ্যাঁ, এরকম অনেকটা হয়। যখন আমি যাই, যেকোন একটা মিডিয়া হোক বা অন্য কোন ইয়া হোক, ওরা তো আমাকে নেয়ই যে আমি একটা মেয়ে। যখন দেখে যে না আমার ভাবটা একটু অন্য রকম তখন আমাকে ওইখান থেইকা অ্যাভয়েড করা হয়।
সম্পাদক: আমার সাথে কথা বলার সময় একদম শুরুতেই বললেন, “কিছুমনে কইরেন না। মনে হয় আল্লাহ আমাকে ভুল শরীরে তৈরি করছে।” তো, আপনাদের সাথে ধর্মের সম্পর্কটা কেমন?
রেহানা: না, ধর্ম যে যার মত, ওইটা কোন ইয়া নাই।
নাতাশা: যে ধর্ম আমি গ্রহণ করছি ওইটাই ঠিক আছে। আমার মনে হয় না যে এর থিকা অন্য জায়গায় গেলে ভাল হইত। ইসলাম ধর্ম এটা ঠিক আছ। এর কোন ইয়া নাই।
সম্পাদক: কিন্তু, ইসলাম ধর্মে তো বলে সমকামিতা হারাম।
রেহানা: আপা, সে তো বলতে বলতে তো ওহী আসছে…একটা ডকুমেন্টারি দেখছি আমি সেটা হচ্ছে হয়ত বা আফ্রিকাতে হবে, সে একজন গে। কিন্তু মসজিদের ইমাম। আপনারা দেখছেন কিনা জানি না। তার একটা সাক্ষাৎকার নেওয়া হইছিল। সে সেখানে বলছিল যে, আমি তো ইমাম ঠিক আছে। কিন্তু আমার মনটার ভিতর তো আমি যা, আমি তাই-ই বলতেছি।
তাইলে তো আমার কোন দোষ না। হ্যাঁ? এটা আমার কোন দোষ না। এটা আমার মনে চাচ্ছে। এটা আমার মনের চাহিদা। এখন আমি কী করব? আমার তো মনের বিরুদ্ধে আমি জোর করে কিছু করতে পারতেছি না।অথচ তার ছেলে দেখা যায়, দুইটা ছেলেমেয়, বউ আছে। আবার ওই যে মাদ্রাসায় পড়ত সে ওইখানে তার ওই ফ্রেন্ডটা ছিল। তার ফ্রেন্ডের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক আছে, তার দুইটা ছেলেমেয়ে আছে, বউ আছে। কিন্তু, দেখা যায় এখানে সামাজিকতাও সে রক্ষা করল, তার যে চাহিদাটা সেটাও সে রক্ষা করল। এরকমই, আপা।
সম্পাদক: আপনার (নাতাশা) ক্ষেত্রে?
নাতাশা: আমার কাছে মনে হয় কি যে আল্লাহ, আল্লাহ আমাকে বানাইছে। তারপরে আর কী লেখছে সেটা আমি জানি না। আমি এরকম এটা জানি, আমি আল্লাহকে মানি এইটা জানি। জাস্ট আর কিছু না।
তিতাশ: আল্লাহকে বিশ্বাস করে।
নাতাশা: হ্যাঁ, এরকমই।
সম্পাদক: ওই ধর্মের জায়গাটা থেকে আপনার জীবনের চয়েসগুলার সাথে কোন ধরনের দন্দ্ব হয় না?
নাতাশা: দ্বন্দ্ব হয় না বলতে যে মানুষ বলে যে এইটা হারাম, এইটা, ওইটা…আমার কাছে মনে হয় যে যদি হারাম হয় তো হারাম হোক সমস্যা নাই। আমি আল্লাহ মানতেছি। আমার জায়গা থেকে আমি আল্লাহ মানতেছি। এখন আল্লাহ যদি আমাকে না মানে কী করব আমি? যখনই মানুষ আমাকে এগুলা বলে তখনই আমি কী বলি? যে আমার…যত যাই বলি না কেন…এই যে এই জিনিসটা এটা আমি খাব। এই মনটা কে দিছে আমাকে? আমি এইটা খাব না এইটা খাব…আমার এই মনটা আল্লাহ দিছে না? তাইলে এই মনটা যদি আল্লাহ দেয় আল্লাহ কেন মানতে পারবে না?
সম্পাদক: সুন্দর করে বলছেন। এই তো। আমার কোশচেন শেষ। ওই যে “আমার গল্প ফুরোল, নটে গাছটি মুড়োল”
প্রথম প্রকাশিত
আসর
বাংলাদেশের প্রথম ও ভিন্ন ঘরানার বহুমাত্রিক ক্যুইয়ার নারী সংকলন