হিজড়া আপাদের সাথে আলাপ

আমরা কাউকে বাদ দিতে চাইনি আমাদের আসর থেকে। সবাইকে দিতে চেয়েছি একটা করে আসন, সেই চাওয়া থেকে কোনো এক তপ্ত দুপুরে হাজির হয়েছিলাম হিজড়া আপাদের দ্বারে। সেই আলাপই এখানে তুলে ধরছি- বরাবরের মতো সবার নাম বদলে ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে এবং ব্যক্তিগত তথ্য পরিমার্জনা করে হয়েছে।

সম্পাদক: আমারটা দিয়েই শুরু করি। আমার নাম…আপনাদের নাম-ঠিকানা কোথাও যাবে না। শুধু যাতে আমাদের আলাপটা ভাল হয় সেটার সূত্রে বলতেছি যে, আমার নাম সুস্মিতা। আমি আইন পড়ি, দ্বিতীয় বর্ষ।আর এরা আমার ভলান্টিয়ার…

ভলিন্টিয়ার ০১: আমি আসরের ভলিন্টিয়ার। আমিও আইন পড়ি। চতুর্থ বর্ষে।

অ্যাডমিন অ্যাসিস্টেন্ট: আমি মন্দ্রতে আছি পাবলিকেশন ও কমিউনিকেশন কোঅর্ডিনেটর হিসেবে। আর এই প্রজেক্টে আমি অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাসিস্টেন্ট হিসেবে আছি।

হিমি: আসসালামু আলাইকুম। আমি হিমি। আমি “ক” হিজড়া অর্গানাইজেশনের একজন সদস্য।

কবিতা: সবাইকে শুভেচ্ছা। আমি কবিতা। ক অর্গানাইজেশনের সভানেত্রী। পাশাপাশি কাজ করছি বিভিন্ন হিজড়াদের, যৌনকর্মীদের এবং যৌনকর্মীদের বাচ্চাদের শিক্ষা সুনিশ্চিতে করতে, পাচাররোধে, এসিডদগ্ধ নারী, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ, নারী নির্যাতন রোধে।

মালিহা: সবাইকে শুভেচ্ছা। স্লামালিকুম। আমি মালিহা। আর সংগঠনের একজন সদস্য।

মালতী: আসসালামু আলাইকুম। আমি মালতী মির্জা। আমি সংগঠনের একজন সদস্য।

সম্পাদক: আচ্ছা, আপনাদের নামগুলি যদি পরিবর্তন করে আমি ছদ্মনাম দেই ছাপানোর সময়, কারও তো কোন আপত্তি নাই?

সমস্বরে: না।

সম্পাদকঃ আচ্ছা, আপনারা যে আসলে এই কমিউনিটির পার্ট হয়ে যে আসলেন, এতটা পরে যে এখানে আসলেন, এভাবে তো সবার শুরু হয়নি।কিন্তু, এই কমিউনিটির পার্টটা হলেন কীভাবে? একদম শুরু থেকে যদি একটু বলতেন।

মালিহা: আপনার প্রশ্নটা কী? একটু যদি বুঝিয়ে বলতেন-

সম্পাদক: প্রশ্নটা হল আপনারা এই কমিউনিটিতে যে এখন আছেন, এখন যে একটা পার্ট হিসেবে আছেন, শুধুমাত্র এই সংগঠন বলে না, অন্য আর যাদের সঙ্গে আপনাদের যোগাযোগ আছে, এখন যেই নেটওয়ার্কটা আছে, এখানে আপনারা আসলেন কীভাবে?

মালিহা: আসলে একদিনে তো সব হয়ে যায় না। আমার আরও দুইটা ভাই আছে, তারা তো এমন হয় নাই! তো একসময় কি…বড় ভাইয়ের কাছে বকা শুনি, বাবার কাছে বকা শুনি, তুই মাইগ্গার মত করিস। মাকে বকে যে, ছেলেকে সামলাতে পার না। ছেলে মেয়েদের মত করে, শাড়ি পরে, সাজে।তখন তো পরিবারের গণ্ডির ভিতরে ছিলাম। যখন পরিবারের গণ্ডি থেকে বের হলাম তখন দেখলাম, না, আমার মত তো আরও আছে! তখন আমি আস্তে আস্তে এলাকায় চললাম, একটু বাহিরের এলাকায় গেলাম, একটু পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর জন্য বিভিন্ন জায়গায় গেলাম।যেমন: রমনা পার্ক। বিভিন্ন পার্ক আছে। তো তখন পার্কে এই শুক্রবার, বিভিন্ন সময় যে অফ ডে থাকে, অফ ডেতে আমরা যখন যাই তখন দেখি যে, না, আমার মত অনেকে আছে। তো সেখানে যখন আমি কবিতা আপার সাথে কথা বললাম। তখন দেখা গেল, কবিতা আপা বলল কি, আমার একটা সংগঠন আছে, তুমি এসো। তোমার মত আরও আছে। তখন ওইখান থেকে তার সাথে আসলাম যোগাযোগ

অ্যাডমিন অ্যাসিস্টেন্ট: আচ্ছা, আপা, এটা কোন সময়ের ঘটনা বলতে পারবেন? কত সালের ঘটনা?

কবিতা: নাইন্টিনাইনের বারোই ডিসেম্বর সহিংসতার পর দিয়ে, যৌন নির্যাতনের পর দিয়ে। আর এর আগে যে আমরা একটু পরিচিত ছিলাম, যেমন আপনার কথাতে একটু বুঝতে পারলাম, আমাদের স্পেসিফিক ওয়ান টু ওয়ান যেভাবে বলার সেটা হল গিয়ে, সবাই জন্মের পর থেকে একটু বুঝতে পারে যে আমি আমার ভাইয়ের মতও না, বোনের মতও না।আমার চলনবলন, আচরণ এগুলো একটুকেমন মনে হয়। সেইজন্য আমি কিন্তু একটু পিছিয়ে পড়ি। কারণ কী? আমার ভাই এসে আমার মায়ের কাছে বিচার দিতে থাকে যে, এই তোমার ছেলেটা কী মাইগ্গা মার্কা! আমার বন্ধুদের সামনে মুখ দেখাতে পারি না। বোনটা আবার বলে কি, মা, তুমি যে আমাকে বিয়ে দিবা, একটা ভাল জায়গায় তো বিয়ে দিতে পারবা না! তুমি একটা কী সন্তান জন্ম দিছ? এই যে সামাজিক বা ফ্যামিলি সব কিছু থেকে আমরা যখন নাকি নিজেকে এক্কেবারে আলাদা করে ফেলি, তখন আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখি আমি একা, আমার পেছনে কেউ নেই! আবার কখনও যদি রোডে বের হই তখন দেখি একটু এলোমেলোভাবে চলতেছে বা একটুহেলেদুলে চলছে মেয়েলি আচরণ নিয়ে। এই জিনিসটা যখন দেখি তখন আমাদের কাছে ভাল লাগে যে, ওই মানুষটাকে যদি পাই, আমার মনের মত মন হবে। তো সেইভাবেই একটা কাছে ধীরে ধীরে যাওয়া। আমি বৃহস্পতিবারে একসময় গিয়েছিলাম হাইকোর্ট মাজারে, তখন গিয়ে দেখি আমার মত মানুষরা কত! আমার যে কেমন মিলনমেলা মনে হত! তখন আমি প্রতি বৃহস্পতিবারে কাপড় কিনতাম। নতুন কাপড় কিনে পরে যেতাম একেক মডেল করে। মাইকেল জ্যাকসনকে নকল করতাম। এটা করতাম, সেটা করতাম। বয় জন, জর্জ মাইকেল, নিউ কিডস অন দ্য ব্লক…আমি বাইরের কান্ট্রির মানুষদেরকে পছন্দ করতাম। তো আমি সেই ড্রেসগুলো পরে আবার হিজড়াদের, আমাদের কমিউনিটির বোনদের ফ্যাশনটা দেখাতাম।সেইজন্য আমি নিজেকে খুব পরিপূর্ণ মনে করতাম এই কমিউনিটির সাথে মিশতে পারলে। এইটাই আরকী।

মালিহা: আরেকটা কথা হচ্ছে যে, আমরা যাকে বয়ঃসন্ধিকাল বলি যে, আমাদের ১২ থেকে ১৮ পর্যন্ত বয়ঃসন্ধিকাল। কিন্তু, আমরা যারা তৃতীয় লিঙ্গের, যারা হিজড়ারা আছি, তাদের পরিবর্তনটা কী হয়? একটা ছেলের মতই পরিবর্তন হয় কিন্তু মানসিকতা, আমাদের মেন্টালিটি অন্যরকম।একটা মেয়ের মত হয়। একটা ছেলে সাধারণত একটা মেয়েকে পছন্দ করে।বাট আমার কিন্তু একটা মেয়ে পছন্দ হয় না। আমার কিন্তু একটা ছেলে দেখলে ভাল লাগে। আমি আস্তে আস্তে মেয়ে সাজের প্রতি আকৃষ্ট হই।নিজেকে মেয়ে ভাবি। কিন্তু, আমি নিজের দেহটাকে দেখি ছেলে। বাট আমার মেন্টালিটিটা হচ্ছে মেয়ে। আমি তখন ভাবি আমি এমন কেন?

যখন পরিবারের ভিতরে থাকি তখন হিজড়া দেখে আমি নিজেই ভয় পেয়েছি। হিজড়া দেখে আমি লুকায় ছিলাম যে, আল্লাহ, হিজড়া যদি আমাকে নিয়ে যায়? তখন আমি নিজেই ভয় পাইছি। কিন্তু, আজ আমি হিজড়া।

মালতী: আর আমার কথা বলতে কী, একদমই ভিন্ন। যে, একটা ভাইও নাই, একটা বোনও নাই। আমি মইরা যাওয়া মানেই আমার বংশের নামটা চইলা যাওয়া। তারপরও আমার বাড়িতে আরেক চাচা, সেও বিয়ে করেন নাই। ছোট চাচাকে দিয়েই বংশবিস্তার আছে। কিন্তু, সে বিয়ে করে নাই বলে সে হিজড়া না। সে মাইগ্গাও না। তাহলে তো আমি বুঝতে পারতাম যে, না, আমার চাচা একটাই পদ। কিন্তু না, সে এই পদই না। তারপরও সে বিয়েশাদি করল না। তাকে এক্কেবারে ইয়াং থেকে এই পর্যন্ত এইভাবেই দেখলাম। তা ভাবি, তাকে নিয়াও একটা কষ্ট ফিল হয়। তারপরও এই সমাজের দেওয়া নামটা দিয়ে আমি এখনও যে বেঁচে আছি…সবার দেওয়া এই নামটা যে, হিজড়া, মাইগ্গা…আমার কিন্তু অনেক জায়গায়, ওখান থেকে আসার পরে আমার দুঃখের কষ্টের কোন শেষ ছিল না। যখন আমার মা মরে গেল তখন থেকে আমার মনে হয় ঝড়ের কোন শেষ ছিল না। কারণ তখনকার সময়টা আমার একটা কিশোরকালের সময়। তখনকার সময় একটা কাজ দেওয়ার মতনও না। কিন্তু, যেখানে যাব তারা করবে যৌননির্যাতন। তখন শুনতে পারলাম আমরা কী, একটা ক্লাব আছে। ওইখানে নাচগান হয়। কোথায়? গেলাম ওইখানে। দেখলাম আমার মত অনেক লোক আছে। তার আগেও ছিলাম অনেক দিন পলায়া। আমার পারিবারিক সমস্যার কারণে। যদি আমার ফ্যামিলির থেইকা কেউ আইসা ধইরা নিয়া যায়? মারধর করে? কী করব আমি? এখান থেইকা চইলা গেলাম কই? চিটাগাং পাহাড়তলি।পাহাড়তলি ছিলাম কিছুদিন প্রায় বছর-দুই বছরের মতন। ওইখান থেইকা থাইকা, হিজড়াগিরি কইরা তারপর আসলাম। একটা হিজড়ার ঘরে যাওয়া মানেই দশটা হিজড়াকে চেনা। আর দশটা হিজড়ার পরিচয়, তার বাড়িঘর, বায়োডাটা, পরিচয় জানা। আমারে ওইখানে তাদের শিষ্য বানাইল।

তারপর বুঝতে পারলাম, নিজের উল্লাসে চলতে পারলাম। এভাবে এভাবে সবার সাথে মিশতে পারলাম। এখানে হিজড়াদের সাথে চলতেছি, ফিরতেছি অনেকদিন যাবৎ। তারপরও জানি না এই নামের ভিতরে কী আছে। এমন একটা রহস্যময়ী নাম, এই নামের ভিতরে আমি কিছুই পাই না। হিজড়া নামটার ভিতরে কী আছে আমি বুঝতেই পারি না।

সম্পাদক: আপনাদের সাথে কথা বলে আমি যতদূর বুঝলাম যে আপনারা সবাই হচ্ছে…কিছুটা ফর্মাল এডুকেশন আপনাদের আছে। স্কুল, কলেজ, বা আপনি (হিমি) যেমন জগন্নাথে ছিলেন। কিন্তু, কমিউনিটির সবাই কি এরকম? এটা কি বলবেন যে মেজরিটি মানুষ বা অনেক বেশি মানুষই পড়াশোনা থেকে আসে?

কবিতা: একেবারেই পড়াশোনা অনেকের নাই।

হাসনা: একশর মধ্যে আশি পার্সেন্টেরই লেখাপড়া নাই, বর্তমানে বিশ পার্সেন্টের লেখাপড়া আছে।

হিমি: বেশির ভাগই…একশর মধ্যে নব্বই পার্সেন্টই মুরুক্ষ। মুরুক্ষ বলতে কী? ক্লাস ওয়ান, টু, থ্রি…যারা সিনিয়র আমাদের হিজড়া আছেন, পুরনো দিনের তারা বেশির ভাগই শিক্ষার সুযোগ তো পায়ই নাই। আর আমাদের মত দশ পার্সেন্ট কিছু আছে যারা ভাল ফ্যামিলি থেকে উঠে আসছে, শিক্ষিত ফ্যামিলি থেকে উঠে আসছে। তারা মোটামুটি ধইরাবাইন্ধা হয়ত ফ্যামিলি পড়াশোনা করাইতে পারছে কিছুটা। তারপরও আসলে হিজড়া নামটার সাথে সবসময় তো খারাপই মনে হয়। সেজন্য ঘুরেফিরে আবার এখানেই আসতে হইছে। একটা হিজড়া, সে পড়াশোনা করা, সে শিক্ষা অর্জনের আগেই হিজড়া অঙ্গনে চইলা আসে। তার মাথার মধ্যে শুধু হিজড়ার রীতিনীতি চালচলন। এমনও আপনি হিজড়া পাবেন যে বাইরের জগৎটা বলতে পারবে না। সে ছোটবেলা থেকেই, মনে করেন, নয় বৎসর, সাত বৎসর, আট বৎসর থেকেই মেবি হিজড়ার সেবাতেই নিয়োগ। সে বলতেই পারে না বাহিরে যে এতবড় একটা জগৎ আছে। তাকে জিজ্ঞেস করলে সে বলবে কী, গুরুনাম, গুরুসেবা করাই আমার ধর্ম। আর কোন কিছুই না। এই এক কথা বইলা সে বোবা হইয়া থাকবে।

মালিহা: লেখাপড়ার কথা যেহেতু বললেন, আমাদের বেশির ভাগ হিজড়াই লেখাপড়া করে না। কারণ, সেই সুযোগটা তারা হারায় ফেলে।ওই যে বললাম না, বয়ঃসন্ধিকালে সময়। কারণ, দেখা যায়, অনেকে বের হয়ে যায়। অনেককে বের করে দেয় বাবা-মা। সমাজ থেকে বিতাড়িত হয়।আমাদের অনেকের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেকে লেখাপড়া করতে পারে না।

হিমি: এরকমও হয়…আমার নিজের দেখা, আমি নিজে শিকার

হয়েছি….আমি ইন্টার কমপ্লিট করেছি, এক টিচারের কাছে গেছি কোচিং ক্লাসে। টিচার আমাকে দেখে বলতেছে, আসলে এই ব্যাচে তোমাকে নেওয়া যাবে না। আমি বললাম, কেন নেওয়া যাবে না? আপনার বেতন ছয়শ টাকা আপনি পাইলেই তো হইল প্রতি মাসে? বলল না, তুমি যদি এখানে ব্যাচে পড়তে আসো তাহলে সবাই তোমার দিকে তাকিয়ে থাকবে। একটা ছেলেমেয়েরও পড়াশোনা হবে না। এই একটা কথার শিকার হলাম। এখানে আরেকটা উষ্টা খেলাম, বড় একটা ধাক্কা খেলাম যে, টিচাররাও মনে করে অন্যান্য ছাত্র আমাকে দেখলে পড়াশোনা হবে না। ওইখান থেকে আবার গেলাম অন্য টিচারের কাছে। ওনাদের নাম আমি বলতে চাই না। ওনারা সবাই ভাল ভাল কলেজের টিচার। ওইখানে বলল, দুইটা মেয়ে ভয় পাইছে আমাকে দেখে। মেয়ে দুইটা বসা, চেয়ার থেকে উঠে সরে গেছে। টিচার বলল, দেখ, তুমি যদি এখানে থাক মেয়েরা তোমাকে দেখে ভয় পাবে। এটা কেমন পরিস্থিতি যে মেয়েরা আমাকে দেখে ভয় পাবে, ছেলেরা আমাকে দেখলে তাকিয়ে থাকবে? ছেলেরা কেন তাকিয়ে থেকে তাদের পড়াশোনা হবে না? মেয়েরা কেন ভয় পায়, আমাদের পড়াশোনা হবে না? কই আমি তো ওদেরকে দেখে ভয় পাই না? আমি তো কোন ছেলেমেয়েকে দেখে ভয় পাচ্ছি না? আমাকে দেখে কেন এত ভয়ভীতির শিকার? যদি আমাকে এভাবে বারবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রতারণার শিকার হতে হয়, বারবার যদি এভাবে ধাক্কা দেওয়া হয় তাহলে আমি কীভাবে পড়াশোনা করব?

কবিতা: আসলে আমি যেটা বলব, হিজড়া শুধু না। আচরণটা সবচেয়ে বড় ব্যাপার। আমরা জন্ম থেকে জানি না যে আমরা হিজড়া কিনা। আচরণটা আমাদের একটু মেয়েলি, মেয়েদের মত। কারণ, আমরা ছেলে হয়ে জন্মেছি মেয়েলিভাবে চলব কেন? এটা সমাজ, সংসার, পরিবার, রাষ্ট্র সবজায়গাতেই একটা বাধা। এইটা একটা দিক। আরেকটা দিক, এই আচরণের জন্য শিক্ষায় এগিয়ে যাওয়া যায় না। আর বিভিন্ন আদার্স যে জানতে পারলাম এখন যে সেক্সুয়া ল হ্যারেজমেন্ট, এগুলো একটু পরের ব্যাপার। কারণ, প্রাথমিক শিক্ষাটার দিকে কিন্তু আমাদের ওইভাবে হয় না।প্রাথমিক শিক্ষায় হল, টিচার বলে, “এই! তুমি সামনে বসছ কেন? পিছনে যাও!” “আমার অপরাধ কী?” “তোমার অপরাধ হল তোমার মেয়েলি আচরণ। তুমি মেয়েদের মত চল। অন্যান্য ছাত্রছাত্রীর বাবা-মারা সবসময় তোমার নামে ক্লেইম করে যে তুমি একটা মেয়েলি আচরণের ছেলেকে কেন নিছ? তোমাকে বাদ দিতে বলে। তুমি কি চলে যেতে চাও নাকি পড়াশোনা করতে চাও? পড়াশোনা করতে চাইলে পিছনে যাও।” এই যে এইভাবে ধাপে ধাপে ওরা পিছিয়ে পড়ে। এবং, আরেকটা বিষয়। আমরা বারবারই বলছি হিজড়া-হিজড়া। হিজড়াটা কিন্তু আট-দশ বছরের আগে হই না।কারণ আমরা যখন চলনবলন শুধু না, আমাদের হল গিয়া, গুরু-চ্যালা-পরম্পরায়ন যারা আছি, তারপর সে রাস্তাঘাটে-হাটে-মাঠে ঢোল নিয়ে হাঁটে যারা একটা আচরণ আছে সেই আচরণটা হল গিয়ে আমাদের বাংলার সংস্কৃতি । যে, তারা ঢোল নিয়ে যাবে…ওই যে, কতগুলি হিজড়া যাচ্ছে। এই জায়গাটাতে কিন্তু আমরা শুরুতে যেতে চাই না। যেমন, মালিহা বলছে, আমি ভয় পেতাম! আমার ভয় লাগত!

আবার দেখবেন আপনি, শিক্ষিত, অনেক শিক্ষিত হয়ে একটা মানুষ আর্ট করে বা লেখে বা কবি হয়ে গেছে। সে সুন্দর করে একটা শাল নিয়ে বলে, “কেমন আছ তুমি? ভাল আছ?” এই আচরণটা দেখে আরেকজন বলে, শালা! হিজড়া দেখি! কথা কয় কেম্নে, হিজড়া একটা! এই যে হিজড়াটা এমন করে মানুষদেরকে ঝুকিয়ে ফেলত এই জায়গাটায়। এখন আমরা দুইটা জায়গা কিন্তু মিশায় ফেলতেছি শিক্ষাক্ষেত্রে। সো শিক্ষাক্ষেত্রটা… মা-বাবা সবসময়ই আমাদের ধাক্কা দিয়ে স্কুলে পাঠিয়ে দেয়। সেইখান থেকে আমরা ফিরে আসি দুই-তিনটা কারণ। একটা হল গিয়ে, টিচাররাও আমাদেরকে রাগান্তি দেয় আমার চলনবলনের জন্য। বন্ধুরাও বলে। আর দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, হিজড়ার ডেরার মধ্যে শিক্ষিত হওয়ার তো কোন প্রশ্নই ওঠে না। অনেক ধরণের কমিউনিটি আছে, সেখানে কিন্তু এলজিবিটিকিউ কমিউনিটি পর্যন্ত আছে। কিন্তু তারপরও আমরা সেই কমিউনিটিকে চিনি না। কারণ কী? শিক্ষার জন্য। এবং এই শিক্ষার সাথে আমরা ঝরে পড়ছি আমাদের আচরণের জন্য। পাশাপাশি আমরা যেই হিজড়ার ডেরাতে থাকি সেই জায়গাতে কিন্তু আমাদের একটা জায়গা আছে। একটা গাইডলাইন আছে। তো সেই জায়গাটাকে আমরা মাখিয়ে ফেলতে চাই না।

এই পর্যন্ত আমার ষাট বছর হতে চলেছে। এখনও আমি চলছি একা করে। তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি ২০১৩ তে দিয়েছে বলে সেখানে একটা নাম শুধু আসছে। তৃতীয় লিঙ্গের হিজড়াদের স্বীকৃতি দিয়েছে। এবং জেন্ডারেও কিন্তু ওই জায়গায় অনেক তর্কবিতর্কের পরে জেন্ডারেও হিজড়া দিয়েছে।এটা নিয়ে আমাদের অনেক আন্দোলন আছে। তো সেটা একটা ব্যাপার।

তারপর আমি চিন্তা করব, এটা দেয়ার পরে অনেকে আমরা শিক্ষায় শিক্ষিত হতে চাচ্ছি। কিছুক্ষণ আগে হিমি বলছিল, “আমি শিক্ষিত হতে গেছি। আমাকে ধাক্কা দিয়ে দোকানে পাঠিয়েছে। কেন পাঠিয়েছে?” ওই বিদ্যাটা সে ভিতরে নিয়েছে। যে, আমি পেট চালাতে পারব। চলতে পারব। টাকাপয়সা হবে। কিন্তু, এই যে এখন যেটা হচ্ছে সেটা হল, আমি শিক্ষার আলো কীভাবে ধরাব? আমি হিজড়া। হ্যাঁ, পড়াশোনা করব।আমি কলেজে যাব, আমার সুবিধা আছে। কারণ, ওইদিকে দেখা যাচ্ছে কী? আমার মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য আমি কিন্তু আইনে পরিণত।সো, এই যে তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি। এখানে একটা জায়গা। এই জায়গাগুলো ছিল না বলে এই এতদিন আরও মুরুক্ষ হয়েই আছি। তো, এই জায়গাটায় পড়ে আছি।

সম্পাদক: আপনি যেই কথা বললেন সেই কথার সূত্র ধরে বলি। এই যে ২০১৪ সালের গেজেটটার কথা বলতে চাচ্ছিলাম, এই গেজেটটায় যে আপনাদের স্বীকৃতিটা দেওয়া হল তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজড়া, এর কোন ডেফিনিশন নাই। হিজড়ার আওতায়…

হিমি: এটা নিয়ে অনেক কথা আছে। আমি এটা নিয়ে অনেক কথা বলতে চাই।

কবিতা: আচ্ছা, প্রশ্নটা করুক! প্রশ্নটা শোন?

সম্পাদক: না, প্রশ্ন বলতে আমি আপনাদের মতামতটাই জানতে চাই।এই যে একটা আমব্রেলা টার্ম দেওয়া হইল, আপনাদের তো তৃতীয় লিঙ্গও বলছে না। বলছে, আপনাদের সেক্সটাই হইল হিজড়া। এখন এই যে এর কোন গাইডলাইনস নাই। বা এখানে ডিটারমাইন কীভাবে করছে যে আসলে হিজড়া কে? তারপর একটা কন্ট্রোভার্সি যে ছিল, মেডিকেল টেস্টগুলা দিচ্ছিল। এবং মেডিকেল টেস্ট করার পর বলছিল, “আরে, এগুলা তো ছেলে! এগুলা তো ছেলে, এরা নাটক করে মানুষদেরকে এক্সপ্লয়েট করার জন্য।“ এরপরে যে জনগণের একটা লার্জ স্কেল, আরও বেশি দেখা যাচ্ছে, আপনাদের দেখে ছিঃ ছিঃ করা শুরু করল, হিজড়া কমিউনিটির প্রতি।এটা ২০১৪-১৫র দিকে যেটা হল, এই কন্ট্রোভার্সিটা। আমার দেখে যেটা মনে হল যে, যত আন্দোলন ছিল আপনাদের অধিকারের জন্যে, বেসিক হিউম্যান রাইটের জন্য যে আন্দোলন ছিল সেটা পিছায় গেল। তারপর সরকারি চাকরির সুযোগটাও ওইভাবে চলে গেল। আপনাদের মতামত কী? এটা কমিউনিটির ভেতর থেকে আপনারা কীভাবে দেখছেন?

কবিতা: আমি বিশেষ করে হিজড়া কমিনিউনিটিতে বিলং করি।

কিন্তু, আমি সমাজে থাকার জন্য, মূল স্রোতধারায় যাওয়ার জন্য নিজেকে একজন মানুষ হিসেবে মনে করি। সেদিক থেকে আমি মনে করি আসলে হিজড়াটা যে জেন্ডারটা আমাদের দিয়েছে সেটা সম্পূর্ণটাই ভুল। বারোতে মুন্নি সাহার সাথে একটা টক শো হয়েছিল, সেখানে কিন্তু শুরুতে আমাদের তেরোতে নিয়ে স্বীকৃতি দিল। তখন তারা বলেছিল, আমি তাদের কাছ থেকে শুনেছিলাম একটা কথা যে, আমরা হিজড়াদেরকে তো একটা ভাল জায়গায় দাঁড় করাতে পারি। মানে এটা হল তাদের কর্ম থেকে আরেক জায়গায় তুলে আনার জন্য। এবং আমাদের চোখের মধ্যে সাট করে পড়ে কোনকিছু না…একজন সমকামী পুরুষকে আমরা কিন্তু চিনব না, একটা লেসবিয়ানকে চিনব না, একটা কু ইয়্যারকে চিনব না। কিন্তু, একনজরেই কাকে চিনি? আমাদের প্রান্তিক পিছিয়ে পড়া মানুষ। সে হল হিজড়া, বেদে,দলিত। এরা। এদের মধ্য থেকে স্বীকৃতিটা শুরু হচ্ছিল। আমরা এটা জানি বারো থেকে যখন আন্দোলন করছিলাম।

হিজড়া একটা পেশা আছে। মূল আরেকটা জায়গা আছে। গুরু-চ্যালা পরম্পরায়ন আছে। তাদের একটা ভাষা আছে। আমাদের একটা ভাষা আছে।তো সবকিছুনিয়েই কিন্তু আমাদের একটা জায়গা আছে। যেমন, বেদেদের নারী পুরুষ দুইটার মধ্যেই। সেইজন্যই সরকার যখন বলল যে আপনারা কী চান? এই স্বীকৃতির মধ্যে আমরা জেন্ডারে কী দেব? তখন কিন্তু হিজড়ারা চেঁচিয়ে উঠছে যে, না! আমগোই দিতে হইব, আমগোই দিতে হইব!

আমি আমার নিজেকে পরিচয় দিতাম। আমি বলতাম, নারী পুরুষের মিশ্র। সবাই যতকিছুই বলুক না কেন, আমি লেডি বয়, লেডি হার্ট। লেডি হার্ট বলতে কী বুঝায়? তখন তাদেরকে কিন্তু বুঝাতে পারতাম না। আমি স্বপ্নে দেখি, আমি নারী, নারী, নারী! স্বপ্নটাকে পূরণ করতেছি আমি নারী হয়েই থাকব। এইভাবে হতে হতে আমাদের কালচারাল লাইনে চলে গেল।

আপনাদের যেইটা বললেন যে, স্বীকৃতির এই জায়গাটাকে আমরা কীভাবে দেখি। আমরা অবশ্যই আমাদের সুশীল চোখেই দেখি। এখন তো সুশীল আর প্রান্তিক দুইটা বলে! সো, আমি ওই সুশীল মানুষের চোখ দিয়েই দেখি।যদি বলে এই সকল মানুষের একটা প্ল্যাটফর্ম দিতে পারে তাহলেই স্বীকৃতি পূর্ণতা পাবে। নাহয় তো, আমরা যেমন ঝরে গিয়ে উঠে গেলাম, আবার আরও মানুষ কিন্তু ঝরে যাচ্ছে। আবার আমরা, ওরা কিন্তু বুঝে উঠতেছি।আমরা হিজড়া পেশাটাকে অতভাবে ধরে রাখব না। আমরা আমাদের মেয়েদেরকে আরও ভাল ই করব। আমরা যেমন ডেভেলপ সেন্ট্রিক যেতে চেষ্টা করছি। আমরা যেমন মোবাইল নিয়ে ঘুরি। এইখানে আমাদের অনেক কিছু আছে। সেই জায়গাগুলোকে পূরণ করার জন্য আমরা কিন্তু ওইভাবে পাব না। এটাই হল গিয়ে আমার স্বীকৃতির জায়গা থেকে কথা।

হিমি: আসলে আমি হিজড়াগিরি করেই খাই। আমি হিজড়াগিরি ট্রেডিশনালের মধ্যে আছি। গুরু পরম্পরাই ধরে আছি। ঢাকঢোল বাজাচ্ছি।দোকানে দোকানে কালেকশন করি। আসলে স্বীকৃতিটা কী? এর অর্থটা কী? স্বীকৃতি তো হচ্ছে বৈধতা। স্বীকৃতি দিয়েছে ভাল কথা কিন্তু স্বীকৃতিটার কার্যকারিতা হচ্ছে না আমরা দেখতেছি। শুধু আমি বৈধতা পেলাম, আমার বৈধতার কোন কার্যক্রম হচ্ছে না। এই বৈধতার কোন মানেই আসে না।এইটা হল আরেকটা হ্যারেজমেন্টের শিকার। যারা আমরা দোকানে কালেকশন করি বা রাস্তাঘাটে হাত পেতে খাই বা বাচ্চা নাচাই, আমরা এখনও গেলে বলে তোমাদেরকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তোমরা কেন আসছ? আমাদেরকে কাগজে কলমে গর্ভমেন্ট বৈধতা দিয়েছে, আমাদের পেটের বৈধতা দেয়নি। আমাদের পেট চালানোর জন্য, খেয়ে বাঁচানোর জন্য বৈধতা দেয়নি। আমাকে শুধু দিয়েছে কাগজে কলমে বৈধতা আমি তৃতীয় লিঙ্গ হিসাবে এক জায়গায় পরিচয় দিতে পারব আমি তৃতীয় লিঙ্গ।বাট আমাদের কোত্থাও কোন জায়গা সুবিধা দেয়নি। একটা গর্ভমেন্টের চাকরির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধি কোটা আছে, উপজাতি কোটা আছে, সামনে হয়ত রোহিঙ্গা কোটাও হয়ে যাবে বাট হিজড়াদের কোন কোটা দেওয়া হয় না। আজও হয়নি, মনে হয় হবেও না। এমনিই দেখতে দেখতে মরে যাব।আর কত যুদ্ধ করব? যুদ্ধেরও একটা বয়স থাকে। সময় শেষ হয় আসছে, অনেক দূর চলে গেছি। মনে হয় না সামনে এটা নিয়ে কেউ লড়বে।ঠিক না?

সম্পাদক: তার মানে একদিকে আপনাদের স্বীকৃতি দিয়ে আপনাদের আগের ইনকাম সোর্সটা কেড়ে নেওয়া হল?

হিমি: হ্যাঁ। দেখা যায় একজন কোটিপতি যার বাড়ি আছে, গাড়ি আছে তার কাছে আমরা আবদার করে, হয়তবা তার একটা ছেলের বিয়ে পাঁচ হাজার টাকাও নিতে পারি। একটা ছেলে হলে দুই হাজার টাকাও নিতে পারি। সে তো কোটিপতি তার তো অনেক টাকা। সে একটা বিয়ের খরচা করতেছে দশ লক্ষ টাকা। এখান থেকে আমাকে দুই হাজার দিলে কমবে না।তার বাড়িতে বিয়ে একবারই করে মানুষ, বারবার করে না। কিন্তু সেক্ষেত্রে গেলেও বলে কী, তোমাদের স্বীকৃতি দিছে, তোমরা কেন আসছ? যাও যাও, গর্ভমেন্টের কাছে যাও! তোমাদের প্রধানমন্ত্রী দিছে না? খাবারদাবার দিতেছে, টাকা দিতেছে? আসলে কোথায় দিতেছে আমাকে দেখান? আমি তো পাচ্ছি না। একটা হিজড়া ভাতা করছে মাসে তিনশ টাকা। দুই মাস পরপর ছয়শ টাকা। এখন করেছে পাঁচশ টাকা। প্রথম তিনশ ছিল। এখন অনেক লড়াই ঝগড়া করে এখন পাঁচশ টাকা। পাঁচশ টাকায় কীভাবে হবে বলেন? আমার ঘরভাড়া, আমার থাকাখাওয়া, আমার অসুস্থতা, আমার বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করতে হয়, আমার বেঁচে থাকার জন্য অনেক কিছুর প্রয়োজন হয়। আমি তো নিজের প্রয়োজনীয় যা সেগুলাই তো পাচ্ছি না। আমার পাঁচশ টাকায় কী হবে বলেন? এই জিনিসগুলা কেউ দেখে না।

কবিতা: কিন্তু এখন আবার ভুক্তভোগী ওই শিক্ষিত যারা আসছে অন্যান্য কমিউনিটি থেকে। এই যে বললাম, এলজিবিটি। এখান থেকেও কিন্তু বেশ ভাল ভাল কাজ করতে পারছে। কারণ ওরা বাসায় ছিল চিরকালই। চুপ করে ঢেকেঢেকে ছিল। লেখাপড়া করেছে, মানুষ হয়েছে।কিন্তু ওরা আবার কিন্তু বিমানবালাও হইতো পারবে সামনে। সবই হইতে পারবে।

হিমি: যারা আমরা পুরাতন, যারা আমরা হিজড়াগিরিতে একবারে ঝুঁকে গেছি, আমরা হিজড়া নিয়েই থাকি। আমরা তো বাবা-মার হাত, পা টিপি নাই। আমরা গুরুর হাত, পা টিপছি। গুরুর লাত্থি উষ্টা খাইয়া বড় হইছি। আমাদের কী হবে? আমার গুরু আর আমি সমাজসেবায় (অধিদপ্তরের) মিটিংয়ে গিয়েছিলাম। আমি বলেছিলাম, আমার গুরুর প্রতি মাসের ওষুধের খরচা ছয় হাজার টাকা। তাকে হিজড়া ভাতা দিলে সে ওষুধ খাবে কোত্থেকে বলেন? তখন কিন্তু কোন উত্তর দিতে পারে নাই সমাজসেবা অফিসার। আর আরেকটা কথা হচ্ছে আমাকে স্বীকৃতি দিচ্ছে, ঠিক আছে। আমি কর্ম করে খাব, আমি হাত পেতে খাব, আমি ভিক্ষা করে খাব। এটা আমার জীবন থেকে আল্লাহ উপরওয়ালা লেখে দিছে, এইটা আমি মাইনা নিলাম উপরওয়ালার দান মনে করে। আরেকটা কথা হচ্ছে, স্বীকৃতি দিয়েছে কিন্তু কোথাও ওই স্বীকৃতিটা আমি ব্যবহার করতে পারছি না তো। যেমন ইমিডিয়েটলি বলি, আমি করোনার টিকা দিতে গেছি।ওইখানে যাওয়ার পরে আমি দেখলাম অনেক লম্বা লাইন। লাইন ধরছি।মহিলারা বলতেছে, আপনি এখানে লাইন ধরছেন? ছেলেরা গেলে বলে, আপনি এখানে লাইন ধরছেন? তা আমি কোথায় যাব? আমি হিজড়া।

ছেলেদের এখানে দাঁড়াইলে ছেলেরা বলতেছে যে, মেয়েদের এখানে দাঁড়ান।মেয়েদের এখানে দাঁড়ালে মেয়েরা সংকোচ ফিল করতেছে। তো আমি কোথায় যাব? বাধ্যতামূলক না পেরে যেহেতু আমি শিক্ষিত আমি বুঝি, আমি উত্তর দিয়ে বসলাম, আমার জন্য আলাদা লাইন করে দেন। আমাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। নয়ত আমি খুব হৈচৈ করব। তখন সে কী করল? আমাকে লাইন করে দিল। কেন করে দিল? আমি তাকে প্রশ্ন করার কারণে। হয়ত আমার মত অনেক হিজড়া যারা হ্যারেজমেন্টের শিকার হয়ে আসবে তারা প্রশ্নও করতে পারে না। তারা ভয় পায় একটা লোকের সাথে কথা বলতে।সেক্ষেত্রে সে কোথায় যাবে? সে টিকাটা দিবে না। সে চলে যাবে বাসায়।ঠিক না?

কবিতা: আর আরেকটা কথা হল, গর্ভমেন্ট প্রচার করেছে, দশ হাজার সামথিং। সেই দশ হাজার সামথিংকে যদি টেনে এনে একটা…এত বড় বড় অ্যাপার্টমেন্টগুলো হচ্ছে, সরকারি দালানকোঠা হচ্ছে, এটার মধ্যে এই দশ হাজারকে নিয়ে যেকোন মুহূর্তে…পেট চালানোর মত সুবিধা হয়ে যেত। এবং আমরা বলতাম না আমার গুরু খাইয়া ফালাইল, অমুক কইরা ফেলল।এগুলি কিছু বলতাম না। তার সিরিয়াল মেইনটেইন করেই সুন্দরভাবে হয়ে যেত। হ্যাঁ, আমার মনে হচ্ছে যেভাবে আমি কাজ করছি, দেখছি, যাচ্ছি… কিছু কিছু ই আছে যেটা হল গিয়ে ফরম্যাটের মধ্যে কিছু কিছু জায়গা আছে এখন পূরণ করতেছে সমাজসেবা থেকে। সেই ফরম্যাট হয়তবা কখনও কাছে…কিন্তু, এতদিনে হয়তবা এতদিনে আমরা না খেয়ো মরে যাব।

হাসনা: আসসালামু আলাইকুম। আমি হাসনা। একচুয়েলি স্বীকৃতির বিষয়ে অনেক কথাই বলছে আমাদের যারা ছিলেন সিনিয়র কবিতা আপা, হিমি আপা। ওরা অনেক কিছুই বলে গেছে। আমি বেশি কিছু বলব না।একটা কথাই বলব যে, স্বীকৃতি মানে কী? আমি একটা বৈধ নাগরিক বাংলাদেশের। এইজন্য আমাকে স্বীকৃতি দেওয়া হইছে। এজন্য বাংলাদেশের মূলত নাগরিক। বা আমি যখন আগে দেশে চলাফেরা করতাম তখন আমার কোন আইডি ছিল না বা আমার কোন আইডেন্টিটি ছিল না। সেক্ষেত্রে আমাদের সরকার আমাদের দয়া করে হোক বা আমাদের সেটা আল্লাহ তায়ালার শিক্ষায় হোক, আমাদের ২০১৩ সালে স্বীকৃতি দিয়েছে। বা একজন দেশে মানুষ হিসাবে, আমি একজন তৃতীয় লিঙ্গ হিসাবে না, ছেলে হিসাবে না, মেয়ে হিসাবে না, একজন মানুষ হিসাবে সরকারের কর্তব্য কী ছিল? আমার যেই মৌলিক চাহিদাগুলা ছিল, আমার বাসস্থান প্রয়োজন, সবার আগে আমার যে একটা বাসস্থান প্রয়োজন, এই বাসস্থানটাই সরকার আজ পর্যন্ত কিলিয়ার করতে পারে নাই। আমরা তো রাস্তায় থাকতেছি।আমরা ভাল ব্যবহার করতে চাচ্ছি কিন্তু আসতেছে না। পারতেছি না। সেটা কেন? এই যে আমি রাস্তায় থাকতেছি, না আমার গোসল করার, না আমি খেতে পারতেছি। আমার মত এরকম অনেকেই আছে যারা দশজন-বিশজন করে একটা রুমে থাকতেছে। তারা কেন থাকতেছে। বর্তমান সময়ে আমার মত একজন কাজ করে বা যেটা করেই দুই হাজার-তিন হাজার টাকা দিয়ে একটা রুম নিয়ে থাকতে পারি। কিন্তু, সেইক্ষেত্রে আমাকে দেওয়া হচ্ছে না রুম ভাড়াটা। আমি বলি না যে সরকার আমাকে দেউক। ফ্রি না, আমি ভাড়া দিয়েই থাকব। কিন্তু, সেই জায়গাটা অন্তত তৈরি করে দেউক। আমি এইটা চাচ্ছিলাম।

সম্পাদক: আমরা আসরের জন্য বেশ কিছু এফজিডি করেছিলাম এবং ওইখানে (এফজিডিতে) আমাকে বলা হল যে প্রত্যেক বছর এইডস ডে-তে হিজড়া সম্প্রদায় থেকে একটা ব্যালি যায়। এটা নিয়ে আমাদের যদি একটু বলতে পারেন। কারণ, আমরা এত খঁজেছি কিন্তু পরিষ্কার তথ্য পাচ্ছি না… আমাদের মিডিয়া জিনিসটা এতটাই সাপ্রেস করে দিয়েছে!

হিমি: আসলে এখন করোনার জন্য হয়তবা হচ্ছে না। প্রতিবছর এইডস ডে-তে আমরা সাংগঠনিক যারা যারা আছি…শুধু সাংগঠনিক, হিজড়াগিরির না…সাংগঠনিক পর্যায়ে যারা এইচআইভি নিয়ে কাজ করে তাদের মধ্যে যত যৌনকর্মী, হিজড়া আছে তারা যায়।

কবিতা: আমি আটানব্বই থেকে শুরু করেছি। একটা অর্গা নাইজেশন ছিল। ওখানে আমি জব করতাম। পাশাপাশি কি ওইটা হল এরকম… ঝুঁকি পূর্ণ আচরণে যারা আছে তারাই। তাদের মধ্যে আছেন যেমন, যৌনপেশায় আছে যারা। যারা কনডম ইউজ করে বা করে না। এই ধরনের একটা সূত্র। এরপর হচ্ছে রক্তদান কর্মসূচী। যারা রক্ত দেয়, নেয়। এভাবে। আরেকটা হল গিয়ে, একটা কমিউনিটি যেমন, ড্রাগস ইউজ করে। তারা।আরেকটা আছে গিয়ে পজিটিভ। পজিটিভ কমিউনিটি। আর হল গিয়ে পাশপাশি আমরাও সেই ঝুঁকি র মধ্যে ছিলাম তখন সেই সময়ে। আমরা তো যৌনপেশাও করি। সেই ক্ষেত্রে আমরা ওইভাবে কাজ করতাম। বাংলাদেশ সরকারের একেবারে মেইন একটা র্যালি ছিল এটা। এখন অনেক ব্যালি হয় গাছ নিয়ে, এটা নিয়ে, সেটা নিয়ে দিবস পালন। সেই দিবস পালনের মধ্যে প্রথম প্রায়োরিটি দেওয়া হচ্ছিল এইডস ডে কে। পয়লা ডিসেম্বর এইডস দিবস। ওই এইডস ডে তে যারা যাবে। কিন্তু তখন তাদের একটা কৌশল ছিল। সবাইকে তো বের করে আনা যাচ্ছে না। এই যে যারা এই ভালনারেবল কমিউনিটি। আমাকে বললে আমিই বলি যে, আমাকে হিজড়া-মাইগ্গা-ছাইয়া-ছাক্কা বল আবার এইডস রোগী বলবা কেন? আমার দরকার নাই, আমি যাব না। তো সেই জায়গাটাকে ভাঙার জন্য একটা পলিসি তৈরি হচ্ছিল যে এই দিবস যে যেভাবে সাজিয়ে গুজিয়ে, আনন্দ উল্লাস করে যেতে পারি ততই মজা। সরকারি এই উদ্যোগটার সাথে সবাই হা, হা করল। তখন আমার সংগঠন হল। নাইন্টি নাইনের সেই সংগঠনকে নিয়ে আমি আবার শুরু করলাম…আমি সবার বাসায় বাসায় গিয়ে বললাম, তোমরা আইসো।আমরা সারারাত্র গল্প করব, মজা করব। সকালে আমরা এইডস ডে তে… সাড়ে তিনটা বাজে গিয়েও আমরা র্যালির প্রথম লাইন খোঁজার জন্য চেষ্টা করেছি।

মালিহা: আরেকটা কথা হইতেছে এইডস দিবস যেটা হচ্ছে পহেলা ডিসেম্বর। এটা আমাদের দেশে, সারা বিশ্বেই পালিত হয়।এইটা হচ্ছে অ্যাওয়ারনেস করা এইডস সম্পর্কে। তো যেই সংস্থাগুলি এইচআইভি নিয়ে কাজ করে, মানুষকে অ্যাওয়ারনেসমূলক কাজ করে সেই সংস্থাগুলোই এই এইচআইভি র্যালিতে অংশগ্রহণ করে। এবং আমরাও তো এইচআইভি ঝুঁকিতে আছি যেহেতু, তাই বিভিন্ন সংস্থা থেকে আমরাও র্যালিতে যাই।মানুষকে অ্যাওয়ারনেস করার জন্য।

হিমি: আর আরেকটা কথা হচ্ছে, এইচআইভি প্রিভেনশন নিয়ে যারা যারা কাজ করে শুধু তারাই না, আমি মনে করি, প্রতিটা হিজড়াই যৌনকর্মী।হয়ত কেউ ফিল্ডে নেমে যৌনকাজ করে, কেউ বাসায় বসে করে। দেখা যায় যারা ট্রেডিশনাল হিজড়া তারা যৌনকর্মী না…অনেকে বলে আমি যৌনকর্মী না কিন্তু আসলে দেখা যায় তারা কিন্তু রাস্তাঘাটে চলার ক্ষেত্রে কোন একটা ছেলেকে ভাল লাগলে তাকে আইনা বাসায় বিনা কনডমেই সেক্স করে। এটাও তো একটা যৌন কাজ করা। এটাও যৌনকাজ। বিনা পয়সায় করল বা পয়সায় নিয়াও করে। আদানপ্রদানও থাকে, গিফটের মাধ্যমেও হয়। তো, আমি মনে করি প্রতিটা হিজড়াই যৌনকর্মী কোন না কোনভাবে। কেউ প্রকাশিত, কেউ অপ্রকাশিত।

সম্পাদক: আপনাদের মধ্যে (হিমি) আপা যেমন বললেন, সবাই যৌনকর্মীর বা সবাই এক পর্যায়ে যেয়ে যৌনকর্ম করে। আমি আসরের জন্য এর আগের ইন্টারভিউটা ইনডিপেনডেন্ট সেক্স ওয়ার্কারদের নিয়ে করছি যারা আরকী কোন ব্রথেল সিস্টেমের মধ্যে নাই। কোন পতিতালয় না, যারা নিজের ইচ্ছায় করে। একভাবে যৌনকাজে ঢুকে গেছে এখন বের হতে পারছে না। তারা আমাকে যেটা বলল, তাদের সোসাইটাল কিছু জিনিস আছে যেমন বাসা ভাড়া নিতে পারে না। বা তাদের কারও একটা বাচ্চা আছে, বাচ্চাটাকে কখনও স্কুলে দিতে পারবে না কারণ বাবার পরিচয় নাই। হিজড়া কমিউনিটির ক্ষেত্রে সেক্স ওয়ার্কটা কীভাবে প্রভাব ফেলছে?

হিমি: একেবারে সেম, আমি যেটা মনে করি। হিজড়াদের ক্ষেত্রে বাসা নিতে গেলে আগে যেটা বলে, ছেলে আসতে পারবে না তোমাদের বাসায় কোনো।

কবিতা: আহা, ওইটা বলে নাই। বাসা ভাড়া দিতে পারে না বলেই যৌন পেশা করে। এটা হল একটা নারীর নিড। সে হল গিয়া বাচ্চাকে পালবে।

মালিহা: আমি একটা কথা বলি। আমি কিন্তু প্রথমেই বলেছি বয়ঃসন্ধিকালে আমাদের যখন মেন্টালিটি চেঞ্জ হয়, আমার চাহিদা কিন্তু একটা ছেলের প্রতি আসে, আমার পছন্দ। সেটা তো আমার নিজস্ব একটা নিড। প্রয়োজন। এখন এটাকে যৌননকাজ বল আর সেক্স বল, আমরা তো সবাই প্রতিনিয়ত করতেছিই। কেউ টাকার বিনিময়ে, কেউ টাকা ছাড়া। এখন করতেই আছি।

হিমি: এটা হয় না কে? এটা প্রায় লোকের সাথেই হয়। সবাই করে।আমি নিজেও করেছি। আমি নিজে ঘর ভাড়া দেওয়ার জন্য পারসোনাল সপ্তাহে চারদিন চারজন আসত। যখন আমি বাসা ভাড়া ছিলাম, খিলগাঁও, আমি কালেকশন করে যা পেতাম তাতে আমার হত না। সত্যি কথা আমার হত না, আমার চলতে কষ্ট হত। ভাল খাইতে গেলে, ভাল পরতে গেলে… একটা মেয়ে বা একটা হিজড়া যে মেয়ে মনের তার একটা নতুন চুড়ি দেখলে কিনতে মন চায়। তার একটা নতুন কানের দুল দেখলে কিনতে মন চায়। তার একটা নতুন লিপস্টিক কিনতে মনে চায়। একটা লিপস্টিক হাইয়েস্ট গেলে এক সপ্তাহ যায়। যদি দুই বার লাগান পরে। আর এখন এক সপ্তাহে শেষ হয়ে গেলে পরের সপ্তাহে তো কিনতে হবে। তো আমার তো ওরকম টাকা থাকতে হবে। যখন ওইটা করতে যাই বা ভাল একটা খেতে যাই বা ভাল একটা কাপড় কিনতে যাই বা ভাল একটা মাল সামানা ঘরে করতে যাই যেটা আমার প্রয়োজন সেক্ষেত্রে দেখা যায় হাতের সব টাকা শেষ হয়ে গেলে আমার রুম ভাড়া কে দেবে? তখন পারসোনালি চারটা, পাঁচটা ফ্রেন্ড রাখি। বা দুইটা ফ্রেন্ড রাখি যে, তুমি সপ্তাহে একদিন আসবা, সারারাত থাকবা। টাকা দিয়ো, বাজার সদাই করব, তোমাকে রান্নাবান্না করে খাওয়াব। সকালে যাওয়ার সময় পাঁচশ-একহাজার তুমি যা এটা দিয়ে…দেখা গেল, এক হাজার দিল, সাথে সাথে বাড়িওয়ালা আপাকে গিয়ে বললাম, আপা, এই সপ্তাহে একহাজার রাখেন, পরের সপ্তাহে চারহাজার ঘরভাড়া দিয়ে দেব।

মালিহা: হ্যাঁ, এটা টেকনিক্যালি। বুঝাইতে দেয় না সে আসলে যৌনকর্মী। এটাও কিন্তু একটা যৌনকর্মীর পর্যায়ে পরে। কিন্তু, এটা আসলে টেকনিক্যালি আমরা…কিছু কিছু ক্লায়েন্ট আছে। আমরা এমনভাবে টাকাটা তার কাছ থেকে নেই, এমনভাবে নেই, সে বুঝে না। সে মনে করে এটা বন্ধু হিসেবে দিছে। কিন্তু সেটাও কিন্তু একটা যৌনকর্মীর পেশায় পড়ে।

কবিতা: আসলে সবচেয়ে বেশি হল এটা নিড বেজড। যখন আমার নিড হয়, তখন আমি মনে করি আমি চেকটা ভাঙাই। এটা হল মেইন কথা।

হিমি: আরেকটা জিনিস কী, যখন নাকি এরকম দুয়েকটা কাজ করে দেখে ভাল পয়সা আইতেছে, ঘরভাড়া হয়ে যাচ্ছে তখন আস্তে আস্তে কিন্তু যৌনপেশায় আরও ঝুঁইকা পড়ে মানুষ। আমাদের হিজড়াদের ক্ষেত্রে কী দেখা যায়, চিন্তা করে আজকে শরীর ম্যাজম্যাজ করতাছে, কাজে যাইতে মন চাইতাছে না। এমন টাইমে একটা ছেলে ফোন দিল, “হ্যালো ডার্লিং, কই আছ?” এই সেই। “আসবা? কখন আসবা?” “বিকালে আসব।” চিন্তা করলাম আসলে তো পাঁচশ টাকা হইয়া গেছেই। হিজড়াগিরিতে গেলে পাইতাম দুইশ টাকা। তিনশ বেশি টাকা। ফোন দিয়া গুরুকে বলি, “গুরু আমি অসুস্থ” এই সেই। এই বইলা থেকে গেলাম। এটাও কিন্তু একটা যৌনকাজ। এটাও যৌনপেশা।

অ্যাডমিন অ্যাসিস্টেন্ট: মালিহা আপা কিছু বলবেন?

মালিহা: না, যেটা আমি বলতে চাইছি যে আমরা প্রতিটা ক্ষেত্রেই কিন্তু যৌনকাজ করে থাকি। সবাই-ই করি। কারণ কী, কেউ আছে…আমরা যেহেতু স্বাধীন দেশের নাগরিক…

মালতী: যৌনকাজ যে শুধু রাস্তায় এমনটা কিন্তু না। বাড়ির ভিতর আমার যে একজন হাজবেন্ড বা একজন বয়ফ্রেন্ডের সাথে আছি তার সাথে চারদিন ধইরা আসছি তারপরও তার কাছে মনে হইতেছে যে প্রতিনিয়ত আমি তার কাছে হ্যারেজমেন্ট হইতেছি। অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তারা বাধ্য হইতাছে।

মালিহা: যৌনকর্মী বলতে আমি যদি নিজে থেকে নিজেকে যৌনকর্মী না বলি আপনি কিন্তু বলতে পারেন না। এটা কেউই বলতে পারে না। এখন কথা হচ্ছে, কেউ আছে স্বীকার করে, কেউ আছে করে না। এটাই হচ্ছে ব্যবধান। কিন্তু, আমরা সকলেই…

হিমি: আমরা মনে করি যৌনপেশাটা একটা সম্মানজনক চাকরির মত। আমরা করে সচ্ছল। আর আমরা যেহেতু আরামপ্রিয় মানুষ, আমরা একটু ভাল জায়গায় থাকতে পছন্দ করি, ভাল খেতে পছন্দ করি, একটু সাজতে পছন্দ করি, একটু ভাল পোশাক পরতে পছন্দ করি…তো, এটা আমার কোত্থেকে আসবে? কেউ ঘরে বসে থাকলে দিবে না। আর যদি একটা ছেলে আসে, “হ্যালো, জানু। কোথায় আছ? আজকে আমি থাকতে চাই, তোমার যা লাগবে আমি দিব।” তখনই তো হিজড়াদের কাছে সুযোগ আসে এই ছেলেদের কাছে এত নেওয়া যাবে!

হিমি: পূজার মধ্যে অলরেডি চারটা শাড়ির কথা বলে চারজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিছি। সময় দিব বলে। তো, বৃহস্পতিবার থেকে শুক্র, শনি তিনদিন সময় দিতে হবে। এটাও তো যৌন কাজ।

সম্পাদক: কথা শুনেই তো আমরা বুঝতেছি, অনেক প্রেজুডিস বা অনেক বায়াসড ভাবে আপনাদের অনেক জায়গায় দেখা হয়। বিশেষ করে পাবলিক প্লেসগুলাতে। যেরকম, এই যে বললেন ভ্যাকসিনের কথাটা। এটা আমার কোশ্চেন ছিল, আপনার কথায় কাভার হয়ে গেছে। তো, এরকম কোন জায়গা কি আপনাদের মনে হয় যেখানে আমরা কোনভাবেই ঢুকতে পারব না বা আমি গেলে আমাকে অ্যাকসেস দেওয়াই হবে না। হতে পারে সংসদ, হতে পারে একটা মসজিদ, একটা মন্দির, একটা পাবলিক প্লেস যেখানে আমাকে অ্যাকসেস দেওয়াই হবে না শুধুমাত্র আমি হিজড়া বলে।

হিমি: এটা সব জায়গায়ই হয়। যেমন, মনে করেন এই যে করোনাটা আসছে না? মহল্লা থেইকা কমিশনার সবাইকে ত্রাণ দিয়েছে। প্রত্যেকটা কমিশনার, আমি আমার কমিশনারের কথা বলি। আমি আট নং কমিশনারের এলাকায় আছি, সুলতান নাম। যেয়ে জিজ্ঞেস করেন তো একজনকে দিয়েছে কিনা ত্রাণ? একটা হিজড়াকে সে দিয়েছে কিনা ত্রাণ? তারে যেয়ে প্রশ্ন করেন। এটা তো গর্ভমেন্টের প্রশ্ন করা উচিত যে এই থানায় তো দুয়েকটা হিজড়া বসবাস করে, তাদেরকে দিয়ো। আমরা ঢুকতেই পারিনি। যাইতেই পারি নাই। এমনকি বাসাবাড়িতে যে ত্রাণ দিয়েছে মহিলাদের, পুরুষদের নামের লিস্ট করে, হিজড়া দেখলে দূর দূর কইরা বাইর কইরা দিছে। প্রভাবশালী লোকেরা, এলাকার নেতারা। আমরা ত্রাণই পাইনি কোন।

কবিতা: তারপর কোন মসজিদ, মন্দির এগুলিতেও যাওয়া যায় না।

হিমি: মন্দিরে তাও যাওয়া যায়। বাট, বিশেষ করে, আমি যেটা মনে করি, হিন্দুরা হিজড়াদেরকে খুব সম্মান করে বিধায় হিজড়াদের জন্য ওই জায়গাটা ওপেন।

সম্পাদক: হু মালিহা! এই যে পূজার সময় এখন আপনারা…

হিমি: এখন পূজার সময় আমি বলতে পারি, আমি বৃহস্পতিবারদিন পূজার লগ্নতে যাব। আমার এরিয়াতে পূজার মণ্ডপ বসবে। ওইখান থেকে আমি চার-পাঁচ হাজার টাকা ইনকাম করতে পারব। ধান-দুবলা নিয়ে যাব।মা দুর্গাকে বিসর্জ ন দেওয়ার আগে সেখানে হয়ত একটু অঞ্জলি দিয়ে পূজা কমিটির লোকেরা আসবে একটু ডান্সটান্স করব। আশীর্বাদ দেব। বাদে সবাই দুইশ, পাঁচশ, পঞ্চাশ, একশ যা দেয়, পূজা কমিটি থেকে হাজার বারোশ টাকা আমাকে দেবে। এটা প্রতি বৎসরই দেয়। কিন্তু, কোন ঈদ আসলে মসজিদ থেকে আমাদের দেবে? দেবে না। মসজিদে এমন হয়, মাঝেমাঝে দেখি মিলাদ পড়তেছে, জিলাপি বাটতাছে, তেহারি বাটতাছে।যেহেতু আমরা হিজড়া, মসজিদে ঢুকতে পারি না। মসজিদের বাইরে দাঁড়ায়া যদি একশ বারও বলি, ভাই, আমাকে একটুদিয়েন তাও দেয় না। সেখানে প্রায়োরিটি পাই না। কমিশনারের অফিসে সার্টিফিকেটের জন্য যায়া আমি পাই না। কমিশনারের জন্য যদি ভোটার আইডি কার্ডের কিছু বলার জন্য যাই পাই না। সেজন্য আমাদের কারও ভোটার আইডি কার্ড নাই। কারও জন্মনিবন্ধন নাই। শুধু একমাত্র এই জন্য। এখনও কি বলতে

পারবে, আপনাদের এলাকায় কমিশনার বলছে, আপনাদের এলাকায় যেসব হিজড়া আছে তাদের নিবন্ধন আমি করে দেই। দেখাইতে পারবে? কোত্থাও নাই এটা। আর সংসদ তো অনেক দূরের বিষয়। ভাল ভাল জায়গা তো অনেক দূরের বিষয়। সরকারি হাসপাতালগুলাতে হ্যারেজমেন্টের শিকার হই। একটা প্রাইভেট ক্লিনিকে হ্যারেজমেন্টের শিকার…টাকা দিয়ে দেখাব তারপরও হ্যারেজমেন্টের শিকার! হিজড়া দেখলে বলে কালকে আইসেন, আজকে লোক নাই। ভিতরে ডাক্তার থাকা সত্ত্বেও তারা বসায় রাখে। আড়াই ঘণ্টা, দুই ঘণ্টা, তিন ঘণ্টা। সব যাওয়ার পরে কেন হিজড়াকে দেখবে? তার কি শরীর অসুস্থ হয় না? তার কি বাঁচার অধিকার নাই? কেন দেখবে? কোন একটা ভাল রেস্টুরেন্টে যান, আপনাকে ঢুকতে দেবে। কোন একটা হিজড়া যাক, হিজড়াকে ঢুকতে দেবে না। কতক্ষণ দাঁড়া করাবে।

কবিতা: তারপর ক্লিনিকগুলো আমরা পারি না…

হিমি: আমার কথাই বলি। আমার বাড়ির বিদ্যুৎ বিল আমার দিতে হয়।আমি সেনাকল্যাণ ভবনে গেছি বিদ্যুৎ বিল দেওয়ার জন্য। আইএফআইসি ব্যাংকে। সেখানে দাড়োয়ান আমাকে আটকাইছে যে, আপনে কোথায় যাচ্ছেন। আমি কই, বিল দিতে যাচ্ছি! “আপনে বিল দিবেন মানি?” এটা কী ধরনের প্রশ্ন? স্বাভাবিক এত লোক যাচ্ছে, এত মহিলা যাইতাছে তাদের তো আটকাইলেন না? আমাকে কেন আটকাইলেন? আমি কী অন্যায় করছি? আমি তো আইনের বিরুদ্ধে কোন কাজ করি নাই? আমি যদি ভিতরে ঢুকতাম, দুইটা তালি বাজাইতাম, হইচই করতাম আমাকে আটকাইতেন! দেখেন, একটা সামান্য ব্যাংক, সেখানেও আমাদের সুযোগসুবিধা নাই। একটা ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট করতে গেলে হয় না। একটা ব্যাংকে টাকা তুলতে গেলে হয় না। হাসপাতালে গেলে হয় না। ভাল একটা স্কুলকলেজে হয় না। কনিশনারে দেয় না। তো, একটা মানুষ কোথায় যাবে? সেক্ষেত্রে আমরা পিছে পড়ে আছি। আমাদের নাই জন্মনিবন্ধন, নাই ভোটার আইডি কার্ড, নাই চিকিৎসার সুবিধা, নাই পড়ার সুবিধা, না আছে ভাল কোন শপিংমলে যাওয়ার সুবিধা। আমরা রাস্তা থেকে কাপড় কিনি। কেন? আমাদের কি মন চায় না একটা ভাল কাপড় কিনতে? আপনি আমার সাথে চলেন এখন! কিছুদিন আগের ঘটনাই বলি। সিটি হাট মার্কেটে গিয়েছি। হিজড়া দেখে দাঁড়া করাইছে। কোথায় যাচ্ছেন, কার কাছে যাবেন, কেন যাবেন? এত প্রশ্নের শিকার কেন হব? মার্কেট যাব, টাকা দিব, কিনব, চলে আসব। কেন এত হ্যারেজমেন্টের শিকার? একটা হিজড়া সে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রতিনিয়ত হ্যারেজমেন্টের শিকার হচ্ছে। ফ্যামিলি থেকে হ্যারেজমেন্ট, বন্ধুবান্ধব থেকে হ্যারেজমেন্ট, ভাইবোন থেকে হ্যারেজমেন্ট, মহল্লা থেকে হ্যারেজমেন্ট, প্রভাবশালী লোক থেকে হ্যারেজমেন্ট। কেন? আমাদের জন্যই কেন এত হ্যারেজমেন্ট? আমরা কী অন্যায় করছি? আমাদেরও তো মন চায় মুক্ত আকাশে উড়তে! আমরা কেন খাঁ চার ভিতরে থাকব? আমাদেরও তো মনে চায় মুক্ত আকাশে ডানা মেইলা উড়ব, যেদিক ইচ্ছা সেদিক যাব কেউ বাধা দিবে না! আজকে রাস্তায় বের হইলে মনে হয় কি হাতে পায়ে শিকল বাঁধা। হাঁটতে ভয় লাগে। একটা নারী, একটা পুরুষ যখন বাসে উঠে তখন আমি দেখি তারা খুবই স্ট্রংলি বসে। আমি উঠলে ভয় লাগে কে কী বলে! আমি উইঠা আতঙ্কে থাকি। কে কী বইলা নামায় দেয়! যদি রাস্তায় নামায় দেয় আমি কি হাঁইটা যাব? এখনও আমাকে দেখলে বাসে উঠাইতো চায় না। কেন? একজন হেল্পারের থেইকাও কি জঘন্য আমরা? একটা হেল্পার সেও আমাকে বাসে উঠতে দেয় না। সে গেইটটা মুখের ওপর মাইরা দেয়। কেন? কী কারণে? কী অন্যায় করছি? একজন নারীকে যদি ছয়টা সাতটা আসন দেওয়া হয় একটা বাসে যে, নয়টা আসন নারী ও প্রতিবন্ধীর জন্য। আমরাও তো হিজড়া। যদি প্রতিবন্ধীও ধরেন তাও তো একটা আসন পাই! সেটাও পাচ্ছি না। যদি মেয়ে হিসেবে ধরেন তাও আসন পাই। সেটাও পাচ্ছি না। বরং আপনি আমাকে গাড়িতেই উঠতে দিচ্ছেন না।

কেন? এত কেনর উত্তর কে দিবে?

কবিতা: আচ্ছা, যাই হোক। আমাদের অলওভার সব জায়গাতেই বাধা।

সম্পাদক: আচ্ছা, ধর্মের ব্যাপারটা বললেন। হিন্দু ধর্মে দেখা যায় যে হিজড়াদেরকে তারা একটু সম্মান করে। কারণ তাদের একজন দেবতা আছেন যে অর্ধ পুরুষ, অর্ধ নারী। অর্ধাংশ। সেই ক্ষেত্র থেকে ওই যে সম্মানটা আপনারা পাচ্ছেন। নিজের ক্ষেত্র থেকে আপনারা কেউ ধর্ম অনুসরণ করেন?

মালিহা: আমরা মুসলমান ধর্ম…

সম্পাদক: সবাই?

সমস্বরেঃ না না, যে যে ধর্মের সে সে ধর্ম পালন করে।

হিমি: আসলে যার যার ধর্ম সে সে পালন করে। আমাদের ধর্ম নিয়ে কোন বাধাবিপত্তি নাই। আমাদের হিজড়াগিরির মধ্যে যে যে ধর্মের…একই ঘরে মসজিদ, একই ঘরে মন্দির। আমাদের হিজড়াদের এই নিয়মই। যেমন আমার এক নাতিচ্যালা হিন্দু। ও ওর ঘরে গীতা পড়তেছ। পাশের ঘরে নাতিচ্যালা কু রআনও পড়ে, নামাজও পড়ে। যার যার কর্ম তার তার কাছে।কিন্তু, একটা সমস্যা কী, হিন্দু ধর্মথেকে দুইটা সম্মান দেওয়া হয়, দুইটা কথা বলা হয়, দুইটা ভালবাসা দেওয়া হয়। কিন্তু, ইসলাম ধর্মে যেহেতু গ্র্যান্টেড না, যোগ্যতা নাই, স্বীকৃতি নাই ধর্ম অনুযায়ী…সেখানে আমরা প্রতারণার শিকার হই। আমরা একটা মাওলানাকে গিয়া যদি বলি আমাদের বাসায় একটা মিলাদ পড়ান, আসতে চায় না। আমরা একটা মাওলানাকে গিয়া যদি বলি আমাদের একটু কু রআন পড়ান। কু রআন পড়াতে চায় না।আমরা যদি একটা মাওলানাকে গিয়া যদি বলি আমরা একটা মসজিদে বসতে চাই, বিভিন্ন কথার সম্মুখীন! একটা হিজড়া জামাতে দাঁড়াবে এইটা নিয়া তাদের অনেক কথা। সে কথাগুলার কারণে যাচ্ছে না। কিন্তু, সেই মাওলানাই আবার রাতে আইসা কোন না কোন হিজড়ার ঘরের দরজায় নক করে। তখন কোথায় যায়?

কবিতা: আমাদের আসলে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যেটা দেখে আসছি এতদিন ধরে, আমরা হিজড়ারা বিশেষ করে ধর্মকে খুব বেশি মানি। কারণ, আমরা মনে করি কিছুই জানি না, কিছুই জানি না। সেজন্য এত সম্মান করি ধর্মকে! শবে বরাত আসলে, ঈদ আসলে আমরা মেয়ে সাজা থেকে ছেলে সেজে গিয়ে আমরা বিভিন্ন জায়গায় যতই হ্যারেজমেন্ট হোক তারপর বায়তুল মোকাররমে আমরা নামজ পড়ি। আমরা কখনও সারারাত্র হাইকোর্ট মাজারে আল্লাহর নাম জিকির করি। ঘরের মধ্যে আমরা ওইভাবেই ই করি।এইটা আমাদের হিজড়াদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ধর্মের প্রতি খুব টান।

হিমি: আরেকটা কথা বলতে ভুলে গেছি। আমাদের যত যাই হোক, ধর্মের প্রতি আমাদের খুব শ্রদ্ধা। কিন্তু, ধর্মীয় লোকজন…আমাদের সবচেয়ে বেশি খারাপ সময় আমাদের মৃত্যু র সময়ে আমাদের জানাজা পড়তে চায় না, আমাদের কবর দিতে চায় না। এই গত চারপাঁচদিন আগে নরসিংদী একটা হিজড়া মারা গেছে। তার নাম আমি বলব না। তাকে দাফনকাফন নিয়ে তাকে জানাজা পড়াতে খুব ঝামেলা হইছে। যখন এগুলা দেখি তখন খুব খারাপ লাগে। যে একজন হিজড়াকে গোসল দিতে চায় না। একজন হিজড়াকে জানাজা দিতে চায় না। আরে ওরাও তো মানুষ! ওরাও তো আল্লাহর বান্দা। আল্লাহ যদি সবার জন্য দাফনকাফন লেইখা রাখে, আল্লাহ যদি সবার জন্য জানাজা জায়েজ কইরা থাকে তো আমার জন্যও আছে।আমার জন্যও আছে। কিন্তু একটু ডিজিটাল হইছে। অনেক মাওলানা আছে আমাদের সাপোর্টে কথা বলে। দুই একটা মাওলানা আছে আমাদের শেখাইতে চেষ্টা করে। ইদানীং আছে। এক বৎসর ধরে হচ্ছে। এক বৎসর। এক বৎসরের আগে কিছুই ছিল না। সামনে হয়ত আরও ভাল হবে।

সম্পাদক: হ্যাঁ, ইনশাআল্লাহ! আমরা অন্য কোশ্চেনে যাই। যেহেতু বলতেছেন আপনাদের কারও আইডি কার্ড নাই। আইডি কার্ড বা লিগ্যাল আইডেন্টিফিকেশনই নাই। কোথাও যে আপনি দেখাবেন যে এইটা আমার নাম, এখানে আমি থাকি। আপনার যদি কোন লিগ্যাল সমস্যা হয়, বাসায় চুরি হইল বা একটা ডাকাতি হইল। এইটা আপনারা রিপোর্ট যে করবেন, এগুলা কীভাবে করেন?

হিমি: এগুলা এমনি এমনি চইলা যায়।

মালতী: হিমি ঠিক কথাই বলছে। কারণ, আমি এক জায়গায় আমার এই ইনভলভটা আমার এত বড় ক্ষতি হয়া গেছেগা, আমি কারও কাছে যায়া বলব কেউ আমার কথা শুনবে না। কেননা শুনবে কীভাবে? তোমার পারসোনাল কোন বন্ধুবান্ধব থাকতে পারে বা তুমি হয়তবা ঘরে কাউকে নিয়া আসছ। হয়ত ওরা কেউ নিয়া গেছে। তোমার কমিউনিটির মানুষজনই নিয়ে গেছে। তুমি হিজড়া। তোমার ঘরে একটা পাবলিক যেয়ে চুরি করার মত না। পাবলিক যদি করেও ওইটা উল্টা আমার ঘাড়ে যেয়ে পড়ে।

মালিহা: এই কথাই বলে যে, হিজড়াদের ঘর থেকে চুরি? এটা সম্ভব না।

হিমি: কয় তরাই তো বড় ডেঞ্জারাস পাবলিক। তগো লগে কেউ যুদ্ধ কইরাও পারে না। তগো ঘরোত্থে চুরি হয়। আর যদি হাইয়েস্ট গেলে অনেক চিল্লাচিল্লি করি তাইলে হয়তবা আমাদের এফআইআরটা লেখে। শেষ! ফোন দিয়া যদি দুয়েকদিন বলি খালি বলে, দেখতাছি, আপা! ওই এই ওই এইভাবে কইরাই চইলা যায়। আজ পর্যন্ত কোন হিজড়ার…ঘরে চুরি থেইকা নিয়া ঘরে মার্ডার হয়ে গেছে বাংলাদেশে, এভেইলেবল এইটা নিয়ে লেখালেখি হচ্ছিল, টিভিতে দেখাইছে হিজড়ারা মারা গেছে, হিজড়াগো ডাকাতি হইছে, হিজড়াকে খুন করছে…কোন কি একটার বিচার হইছে? দেখাইতে পারবে কেউ? পূর্ণ বিচার হয় নাই। কারণ আমাদেরকে না দিছে সরকার সম্মতি। না দিছে সরকার যোগ্যতা, না দিছে আইন যোগ্যতা।কোনখানেই না। আমাদের কোন যোগ্যতাই নাই সমাজে। আমরা সমাজের পিছিয়ে পড়া লোক না। আমাদের পিছিয়ে রাখছে সমাজ।

কবিতা: সবচেয়ে বড় কথা আইডি কার্ডের জন্যই কিন্তু অনেক কিছুই মিলান হচ্ছে না। সিমিলারিটি পাচ্ছে না। আমার আইডি কার্ড হলে পরে আমার জন্মের থেকে পুরা ডাটাটাই পেয়ে যাচ্ছে। সেই জিনিসটা নাই বলে আমরা অনেক জায়গায়…আমাদের এখানে অনেকেরই আছে। যেমন, ওর (মালতী) একেবারেই নাই। ও করতে গিয়েও পারে নাই।

মালতী: আমার কথাই বলি। এই যে প্রথম ডোজ, দ্বিতীয় ডোজ, এই করোনার যে টিকা…এখানেই দিতে গেছি। যেমন, হাস্যকর একটা কথা।কয়, তোমার আইডি কার্ড কোথায়? বা তোমার জন্মনিবন্ধন কোথায়? আমি কই, আমার আইডি কার্ডও নাই, জন্মনিবন্ধনও নাই। কয়, তুমি তো রোহিঙ্গা। কী সুন্দর একটা অ্যানসার! অথচ আমরা এই দেশেরই নাগরিক।

কী সুন্দর! আমি একজন হিজড়া। তারউপর যাইয়া কী হইয়া গেলাম রোহিঙ্গা। মানে আমি অন্যদেশ থেকে আগত।

অ্যাডমিন অ্যাসিস্টেন্ট: এই কথা ওই কর্মকর্তা বলছে?

মালতী: হ্যাঁ!

অ্যাডমিন অ্যাসিস্টেন্ট: বলেন কী!

মালতী: হ্যাঁ।আমার আইডিই নাই। আমার আইডেন্টিটিই নাই। আপনি কীভাবে আমার আইডেন্টিটি দিবেন?

হিমি: সবাই রোহিঙ্গাটা হাসির মনে করলেও আমি মনে করি দুর্ভাগ্য।আমি বাংলাদেশে জন্ম নিয়া, আমার বাপ-মা চৌদ্দ গুষ্টি বাঙালি। আমি একটা স্বাধীন দেশের মানুষ। স্বাধীন দেশ কয়টা আছে পৃথিবীতে? সেই গন্যমান্য কয়টা স্বাধীন দেশের একটা আমাদের এই দেশটা। আমি একটা স্বাধীন দেশের মানুষ। আমি বুকসিনা টান কইরা কইতে পারি আমি স্বাধীন দেশের মানুষ। সেইদেশের মানুষ হইয়া আমার একটা ভোটার আইডি কার্ড নাই। সেইখানে আমি কতটুক পিছিয়ে পড়া? কতটুক নিম্নতর হয়ে গেছি?

সম্পাদক: এই যে কথাটা বললেন যে আইডি কার্ডে আপনাদের ছেলে ভাবে বা বাইরে কোথাও গেলে আপনি মেয়ে হিসেবে যান না, ছেলে হিসেবে না। এই যে সরকার থেকে বলা হল গর্ভমেন্টের থেকে জব দেওয়া হবে একটা।আপনাদের কি মনে হয়, আমরা যদি গভর্নমেন্ট জবটায় যাই, আমি এরকম মেয়েদের মত পোশাক পরতে পারব না। যদিও আমাকে হিজড়া হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে গভর্নমেন্ট আমাকে চাকরিটায় নিবে তাও আমি ওইখানে আমাকে এই মেয়েভাবে এক্সপ্রেস করতে পারব না।

মালিহা: আপনার গভর্নমেন্টের যেইটা হচ্ছে, যেই লোকগুলা তাদের নেয়, তাদের অ্যাওয়ারনেস করতে হবে ফার্স্টে। প্রথমত এই অ্যাওয়ারনেস করতে হবে, হিজড়া কী? এখন আমাকে যদি জব দিতে হয়, আমাকে যদি বলে তুমি এখানে এই সরকারি জব করবা, এখন সেখানে যারা আছে আমার উপরের কর্মকর্তা তাদের তো জানা উচিত আসলে হিজড়াটা কী।হিজড়ার ডেফিনিশন জানা দরকার। তারা যদি আমার সম্পর্কে সবটুকু জানে তাহলে দেখা যাবে আমি যখন যাব আমাকে নরমালি নিবে। এখন আমার সম্পর্কে যদি সে না জানে তাহলে সে কিন্তু আমাকে নরমালি নিবে না। এখন তাদের কি উচিত না এই হিজড়া সম্পর্কে একটা অ্যাওয়ারনেস মিটিং করান? বা হিজড়া মানে কী? আমাদের কমিউনিটির লোক থাকে।আমরা ঢোল বাজাই, আমাদের গুরু থাকে। এই সব কিছু মিলে। তাকে কিন্তু বায়োলজিক্যালি পরীক্ষা করে হিজড়া সেইটা কিন্তু না। মেন্টালি কী। আমাদের মন মানসিকতা মেয়েদের মত। যার কারণে আমরা আদার ছেলেদের থেকে একটু ভিন্ন। আলাদা। একারণেই তো আমাদের হিজড়া বলতেছে। নাহলে তো হিজড়া বলত না।

হিমি: আর আরেকটা কথা হচ্ছে সমাজ যখন আমাদেরকে হিজড়া আইডেন্টিটি দিয়ে দিছে তখন কিন্তু ডাক্তারি পরীক্ষা করে দেয় নাই।

মালিহা: এখন সেইটা উঠিয়ে নিতে হবে। এখন এই লোকদের যদি হিজড়াটা কী এইটা অ্যাওয়ারনেস করে তাহলে দেখা যায় তাহলে ফিউচারে হয়ত আমি থাকব না, আমার কোন জেনারেশন থাকবে, হিমি আপা থাকবে না, তার চ্যালানাতি থাকবে তারা সরকারি চাকরিটা করতে পারবে। তারা বলবে হ্ যাঁ, হিজড়া তো এটাই।

হিমি: আর আমার কথাটা হচ্ছে ওই জায়গাটার মধ্যে…আপনার কথাটা আমি বুঝতে পারছি এখন…আমি যদি গর্ভমেন্ট চাকরি নেই, আমি হিজড়া হিসেবে কী কাপড় পরে ডিউটি করব? এইটাই তো কথা? আমি শাড়ি পরব না কাপড় পরব না ছেলেদের পোশাক? আমি একটা কথা বলি, এই মেয়েলি পোশাকের জন্য ঘর ছাড়লাম, বাপ মা ছাড়লাম, ভাইবোন ছাড়লাম। সব ত্যাগ করলাম। শুধু একটা মেয়েলি পোশাক পরার জন্য।এই মেয়েলি আচরণ করার জন্য, মেয়েরূপে আসার জন্য। কেন এইটাকে বিসর্জ ন দিব শুধু গর্ভমেন্ট জবের জন্য? যেটার জন্য আমার সারাজীবনের সব ত্যাগ করছি? আমার উচিত, গর্ভমেন্ট যেভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে সেভাবে আমাকে জবও দিবে হিজড়া হিসেবে। আমি আমার স্বাচ্ছন্দ্য অনুযায়ী যেকোন ট্রেডিশনাল পোশাক পরে আমি জব করব। কিন্তু সেটা আমার শৃঙ্খলার ভিতরে থাকবে। এবং সরকারি একটা নারী যদি হিজাব পরে একটা বোরখা পরে ডিউটি করতে চায়, আমি হিজড়া, আমিও পারব একটা থ্রি পিস পরে ডিউটি করতে। আমি যদি মন চায় না আমি ছেলেদের মত একটা শার্টপ্যান্ট পরে তাদের সাথে ম্যাচিং করে চলব অবশ্যই সেটা আমার মনের ওপর নির্ভর করবে। সেটা আমাকে কেউ বলে দিবে তা না। কেউ যদি আমাকে বলেই দেয় তাইলে তো আমি তখনই শুধরায় যেতাম যখন আমি ফ্যামিলি ত্যাগ করলাম?

মালিহা: এখানে কথা হচ্ছে যে, হ্যাঁ! কিছুকিছুক্ষেত্রে আমাদের দোষ থাকে। যেমন: কিছু কিছু হিজড়া আছে যাদের মেন্টালিটির সমস্যা থাকে যে, যাইয়া কাউকে হয়ত গায়ে হাত দেওয়া, একটু ফাজলামি করা। হ্যাঁ, এসব আমাদের কিছু ভুল আছে। আমরা দুধে ধোয়া তুলসি পাতা তা না।এখন চাকরির ক্ষেত্রে সেটা তো চলবে না। ফর্মালিটিতে সেটা চলে না।একটা হিজড়া হিসেবে যদি শৃঙ্খলাবোধ হয়ে কাজ করি, সেখানে যদি মেন্টালিটি সব মেনে চলি তাহলে আমার সমস্যা কী?

হিমি: আরেকটা কথা কী, আমাকে যেখানে জব দেবে, সেখানকার কর্মকর্তারাও আমাদেরকে তাদের ইমপ্লয়িদের মতই দেখুক এবং সেরকম আচরণ করুক। আমি তো উঠে আসছি নর্দমা থেকে। আমি কিন্তু আসি নাই শিক্ষিত সমাজ থেকে। আমি আসছি হিজড়া…যেখানে হিজড়া নামটা একটা গালি…তার মানে নর্দমাই মনে করেন। একটা নোংরা জাগাত্থেকে উঠে আসছি। আমাকে শৃঙ্খলায় আনতে হলে তাদেরও তো পরিশ্রম করতে হবে। তারা আমাকে বুঝাবে আমার কীভাবে চাকরি করতে হবে, কীভাবে আমার চলতে হবে। এবং তাদেরও তো আমাকে ক্ষমার চোখে দেখতে হবে।আমার অন্যায় হতেই পারে। আমি তো ভুল জায়গা থেকে আসছি। আমাকে রাইট করার দায়িত্ব ওনাদের টিমের। ওনারা যদি অফিসিয়াল সবাই আমাকে এভাবে চিন্তা করে যে, না, ও হিজড়া। এই শুনো, তুমি এভাবে না এভাবে চল। আমাকে আইসা হেলপ করে। আমাকে লেখতে সুবিধা করে।আমাকে বুঝাইতে সুবিধা করে। আমাকে কাপড় পরতে সুবিধা করে। আমি কীভাবে চলব সেভাবে বুঝায়া দেয়। সেক্ষেত্রে চাকরির ক্ষেত্রে তাদেরকে আমি আমার কলিগ মনে করব না। মনে করব তারা আমার গার্জিয়ান।তারা গার্জিয়ান, তারা আমাকে গাইড করতেছে। এবং সেই অনুযায়ী আমি কাজ করব। কর্ম করব। ঠিক না? সেটাও দেখতে হবে।

মালিহা: আর সবচেয়ে বড় কথা, আমি হিজড়া, পুরুষ না মহিলা সেটা তো দেখার কথা না। আমি যখন একটা সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানে বা জবে নিয়োগ হব, আমার দক্ষতা দেখুক। সেখানে আমি হিজড়া নাকি সেটা তো তার দেখার বিষয় না! তার যেই কর্ম, যেই কাজটার জন্য আমাকে নিয়োগ করা হইছে সেটা আমি কতটুকু পারতেছি, করতেছি। সেখানে আদৌ কোন বেখেয়াল আছে কিনা। কাজে মনোযোগ নাই কিনা সেগুলো দেখুক। সে তো হিজড়া বলে আমার দক্ষতাকে পিছিয়ে দিতে পারে না। কারণ, সেইটা তার কোন রাইটস নাই।

কবিতা: আমার শেষ তিনটা কথা, এটার মধ্যে। একটা হল গিয়ে, যদি হিজড়াদেরকে কাজে দেয়…আমরা কিন্তু আগেই বলছি আমরা মুরুক্ষ।একেবারেই মুরুক্ষ। তাহলে আমাদের ঝাড়ুদার ছাড়া আর কিছু নাই। দেন যদি কাজে দেয়, আমাদের যদি মনমানসিকতা বা জ্ঞানধ্যান দেখে দেয়, তাহলে সেই জায়গাতে তাদেরকে দেবে একটু উৎসাহ করে যে অফিশিয়াল কাজকর্ম কর। সেইক্ষেত্রে এক নাম্বার হল গিয়ে এইটা যে, আমাদেরকে প্রথম চিনবে। দ্বিতীয় হল গিয়ে আমাকে যে প্রতিষ্ঠানে নিবে সেই প্রতিষ্ঠানের মানুষগুলোকে আই কন্টাক্ট চেঞ্জ করতে হবে। এবং দৃষ্টিভঙ্গি আমাদেরও চেঞ্জ করাতে হবে। এবং এই দুইটা একসাথে করে, বুঝে…এবং ও (হিমি) যে একটা কথা বলেছে যে, কর্মী। আমি কর্মী সেটা তো আছেই, এমপ্লয়ি, কর্মী।আমরা কাজ করতেছি না? যেমন, এনজিওরা কাজ করতেছে। তারা কিন্তু এই কমিউনিটির মানুষজনকে নিচ্ছে। বন্ধুতে আছে কতগুলো স্টুডেন্ট । তারা দেশেবিদেশে কাজ করে আসতেছে। পাশাপাশি আমি আইসিডিডিআরবিতে জব করি। সেখানেও দেখা যাচ্ছে লোক নিচ্ছে। কর্মের জায়গাগুলোতে কিন্তু দিয়ে রাখছে দক্ষতাগুলো। তো, সেই জায়গাগুলো কিন্তু স্পষ্ট।

হিমি: আমি এতটুকু ই বুঝি। ছ্যারাও বুঝি না, হিজড়াও বুঝি না। আমার আইডেন্টিটি দিয়েছে আমি হিজড়া। আমাকে চাকরি দিবে। আমি কাজ করব, আমি খাব। আমার সাথে সবাই হেল্প করবে। আমাকে সুস্থ সমাজে কীভাবে সুদক্ষভাবে কর্ম করে খেতে পারব সে পথটা আমাকে বইলা দিবে।

হাসনা: সমাজ আমাদের পরিবেশ তৈরি করে দিবে। কিন্তু, আমাদেরকে কাজ দেওয়া হচ্ছে আবার পরিবেশটা কিন্তু অন্যরকম করে দেওয়া হচ্ছে।কেন হচ্ছে? আমি যেভাবে সাচ্ছন্দ্যবোধ করতেছি আমাকে ওইভাবেই দেক না কেন? ওইভাবে দেওয়ার পরে যদি না পারি কয়, তো তুমি চলে যাও!

একদিকে দিচ্ছে আবার আরেক জায়গায় আটকায় রাখছে তাহলে তো হবে না।

হিমি: …চাকরির মুখ দেখে নাই। জীবনভর গিয়া হাত পাতছে, দশ টাকা দিছে, চইলা গেছে। ওই ব্যক্তি যদি হঠাৎ কইরা চাকরি পায় সেও কিন্তু কনফিউশনে থাকে যে কীভাবে কী করব! তাকেও বুঝাতে হবে।তাকেও মিলাতে হবে। একটা দেশি কু কু র যে রাস্তায় লাত্থিউষ্টা খায় সে সবাইকেই কামড় দেয়। কিন্তু, বিদেশি কুকুর কিন্তু কামড় দেয় না। সবার কাছে ভালবাসা পায়। আইসা জড়ায়া ধরে। চুমা দেয়। এইগুলা করে। কিন্তু হিজড়াদের তো এভাবে করতে হবে।

সম্পাদক: ড্রাগ অ্যাবিউজের ব্যাপারটা। যেটা আমরা দেখছি সেক্স ওয়ার্কার কমিউনিটিতে তারা খুব ইজিলি ড্রাগসের সাথে ইনভলভড হয়ে যায়। এটা আপনাদের কমিউনিটিতে কেমন?

সমস্বরে: আমাদের কমিউনিটিতে আরও বেশি হয়।

হাসনা: নেশার জগতের যে বিষয়টা না? আমাদের না সেভেন্টি পার্সেন্টই এর সাথে জড়িত আছে। কেন? সেটা হচ্ছে যে মনমানসিকতা। ওই যে একটু আগে বলল যে পর বিষয়গুলা…

হিমি: আপনি আমার ঘরে যাইয়েন। আমার নাতির ঘরের পুতি, ষোল সতের বছর বয়স। তিন মাস এক ছ্যারার প্রেমে বাবাখোর হয়া গেছে।দুইজন। তিন মাস প্রেম করছে। বাবাখোর। নেশা ধইরা ফালাইছে। বাচ্চা বয়স। আপনেও যদি দেখেন যে এই বয়স। এই বয়সে তো সিগারেট খাওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না। কীভাবে হইছে? যেই ছেলের সাথে অ্যাফেয়ার ছিল সে ও বাবা খাইত।

কবিতা: আচ্ছা, আপনারা শুধু চাচ্ছেন যে আমরা নেশায় কতটুকু আসক্ত, তাই তো? হান্ড্রেডে সত্তর পার্সেন্ট। কারণ আমরা এখনও এমন করতে পারি…সব কষ্ট, সব দুঃখ…বইসা বলতে পারি…ও বলতে পারে আমাকে, ও বলতে পারে আমাকে যে, চল যাই। একটু খাই।

অ্যাডমিন অ্যাসিস্টেন্ট: কী ধরনের ড্রাগ অ্যাবিউজ হয়?

কবিতা: মনের আনন্দের জন্য আমরা শুধু ড্রিংকসটাই করি। আর কিছু না। ড্রিংকস, সিগারেট এই দুইটাই। আর পাশাপাশি যখন নাকি বেশি ইমোশন হয়ে যায়, হয়তবা দুইচার জন ঝরে পড়ার মত…যেমন আমার এই মেয়েটা (মালতী)। এই মেয়েটাও সব ধরনের কিছু খাইছে। কিন্তু, ওরকম ভাবে জড়িত না। আবার তাড়াতাড়ি অফ হয়ে যেতে পারে। এইটা আবার আছে। যে আমরা আবার ভয় পায়া…

হাসনা: অনেকে আছে আবার গাঁজা খায়। গাঁজা হচ্ছে গিয়ে আমাদের সিনিয়র পারসন যারা আছে তারা খায়। তারা কিন্তু নিশা ভাবে নেয় না।তারা দেখা যাচ্ছে যখন একটা জায়গায় বসে, খাচ্ছে আলিশান ভাবে।কালচার হিসেবে তারা নিয়ে নিছে, ঠিক আছে?

মালিহা: আমরা যদি নেশার কথা বলি, আমাদের কমিউনিটির ভিতরে সবাই বেশির ভাগ নেশা করে। কেউ হয়ত আনন্দে ড্রিংকস করে। সিগারেট খায়। কেউ হয়ত ইমোশনাল হয়ে করে। কিন্তু, সবাই নেশায় কিছু না কিছু ক্ষেত্রে আছে।

হাসনা: সমাজের জন্যই। আজকে সমাজ যদি আমাদের ভাল লাগত তাহলে কিন্তু এই জায়গাটায় আসা লাগত না।

প্রথম প্রকাশিত
আসর
বাংলাদেশের প্রথম ও ভিন্ন ঘরানার বহুমাত্রিক ক্যুইয়ার নারী সংকলন

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.