
বকুল আহমেদ
গতকাল রাতে একটা আজব স্বপ্ন দেখলাম।
দেখলাম আমি চব্বিশ বছরের জলজ্যান্ত পুরুষ শরীরের এই দিহান মীর্জা— সহসা যেন নারী হয়ে গেছি। স্বপ্নটা এরকম— আমি আমার অন্ধকার ঘরে শুয়ে আছি। ঘুম থেকে জেগে উঠবো উঠবো। গায়ের উপর থেকে তখনো কাঁথা সরাইনি। সময়টা খুব ভোর। আব্বু ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে যাবেন। বাহির ঘরের দরজা খোলার শব্দ পেলাম। রোজকার মতন বের হওয়ার আগে আগে আম্মুকে আওয়াজ দিয়ে বলছেন, দরজাটা বন্ধ করে দাও। আম্মু বাথরুমে। আমি কল থেকে পানি পড়ার শব্দ পাচ্ছি। হয়তো অযু করছেন।
আমি ভাবলাম আমিই দরজাটা বন্ধ করে আসি। আম্মু বাথরুম থেকে বের হতে হতেই যদি চোর-ডাকাত কেউ দরজা খুলে ঢুকে পড়ে বাসায়। আমার আবার ডাকাতের খুব ভয়! এজন্য দরজাটা বন্ধ করার জন্য যেই উঠেছি তখনই কাণ্ডটা হলো। মনে হলো শরীরের নীচটা কেমন হালকা হালকা লাগছে। কি মনে করে পায়জামার ভেতরে উরুসন্ধিতে হাত দিয়ে দেখি সর্বনাশ! আমার পুরুষাঙ্গ সেখানে নেই, তার সার্বক্ষণিক সহচর বীচি দু’টোও উধাও। পরিবর্তেসেখানে মসৃণ একটা যোনী। যেন মিহি নিভৃত খাদ। আর তার দুপাশে টসটসে টম্যাটোর মতন নরম মাংস।
প্রথমে একটু অস্বস্তি হলো মেয়ে হয়ে গেছি দেখে। সাথে মনের ভেতর কেমন একটা ভয়, লজ্জা। স্বপ্নের ভেতরই মনে হতে লাগলো কয়দিন নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারবো এই পরিবর্তন? একদিন তো সবাই জানবেই। তখন মানুষ কি ভাববে? কিভাবে আমার এই পরিবর্তন নেবে তারা? আত্মীয়-বন্ধু-পরিবার পরিজনের অগণন কৌতূহলকে কিভাবে সামাল দেবো— মনের ভেতর এরকম চিন্তা এলো। এরপরপরই নাফির কথা মনে আসলো। তখন মনের ভেতর কেমন একটা ভালোলাগা স্বস্তি স্বস্তি ভাব শুরু হলো। মনে হলো এবার তো মেয়ে হয়েই গেছি। আর আমাকে শয়তান নাফিটা এড়াতে পারবে না। এতদিন তো কিছু হলেই বলতো, তুই কি মেয়ে? তোর সাথে কিভাবে প্রেম করবো?
এখন আর এই অযুহাত দিতে পারবে না। নাফির সাথে সারাজীবন ঘরসংসার করছি এরকম একটা সুখ সুখ কল্পনায় স্বপ্নের ভেতরেই আবেগের বুদ্বুদ মনের মধ্যে গভীর হয়ে ফুটতে লাগলো।
আর তখুনি ঘরের দরজায় তুমু ল কড়া নাড়ার শব্দ। আম্মু তীক্ষ্ণ সুর তুলে চিকন গলায় ডাকছেন- দি-ই-হা-আ-আ-ন- ওওওঠো। ফজরের ওয়াক্ত চলে গেল।
ধুত্তো র! কিসের মধ্যে কি! ঘুমটা ভেঙে গেল। কোনদিনই আমাকে এত সকাল সকাল উঠানো যায় না বিছানা থেকে। তবু আম্মুর প্রতিদিন এই সময়ে আমাকে ডাকা চাই। স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ায় যতো না কষ্ট হলো তার চেয়ে বেশি উৎকণ্ঠা হলো আমি আবার ছেলে হয়ে গেছি কি-না এই ভেবে। তাই ঘুম ভাঙতেই প্রথমে আমার হাত নুনুর কাছে চলে যায়। আর হতাশ হয়ে আবিষ্কার করি সেখানে সে-ই পুরনো পুরুষদণ্ডটি বেহায়ার মতনখিল খিল করছে।
পাঠকরা আবার ভাববেন না— আমি মেয়ে হতে চাই এই কারণে যে আমি ভীষণ মেয়েলি কিংবা ছেলে হওয়ায় আমার মনে খুব কষ্ট। এটা ঠিক— পুরুষ শরীরের প্রতি আমার ভয়াবহ রকমের দুর্ব লতা। সাথে এটাও সত্যি আমার নিজস্ব পুরুষ শরীরটিকেও আমি ভালোবাসি। এই পুরুষ শরীর বা সত্তা নিয়ে তেমন কোনো আক্ষেপ নেই। মেয়ে হতে চাওয়ার এই গোপন আকুলতা শুধু নাফিকে সারাজীবনের জন্য পাওয়া যাবে বলে।
মেয়ে হলে তাকে বিয়ে করা যাবে। কারণ সে আমাকে সোজাসুজি বলে দিয়েছে কোনো একটা মেয়েকেই সে বিয়ে করবে। কোনো ছেলের সাথে তার প্রেম করা সম্ভব না, বিয়ে করাও সম্ভব না। আর এক ছাদের নীচে সারাজীবন একসাথে কাটানো তো দূর কি বাত।
আমি আবার নাফিকে ছাড়া আমার জীবনে অন্য কাউকে সারা জীবনের জন্য ভাবতে পারিনা। মানুষ হিসেবে এটা আমার সীমাবদ্ধতা। আমি যা চাই তা খুব একগুঁয়ের মতন চাই। সংকীর্ণের মতন, অবুঝের মতন চাই।
শেষবার যখন নাফির সাথে বিছানায় গেলাম, তখনো তার সেই একই কথা। বললো-
তুই ক্যান মেয়ে হলি না দিহান?
বহুবার শোনা এই প্রশ্নের উত্তরে আমিও বরাবরের মতন বললাম, মেয়ে হলে কি হতো? আমার সাথে সত্যি সত্যি প্রেমও করতি?
—করতাম।
—আমাকে বিয়ে করতি?
—করতাম।
—সারাজীবন একসাথে থাকতি?
—থাকতাম।
তারপর একটু থেমে বলে, শুধু একসাথে থাকতামই না, সারাক্ষণ শুধুতোর পিছনে পিছনে ঘুরতাম। আমার মনের মধ্যে তোর মনটাকে, আমার শরীরের মধ্যে তোর শরীরটাকে লুকায়ে রাখতাম। ইনা-মিনা-টিনা কারো দিকে চাইতাম না। চাকুরি নিয়ে কোন দূর শহরে চলে যেতাম। সংসার পাততাম সেখানে। বউ বানায়া তোকে আমার সেই সংসারে রেখে দিতাম। বাকী জীবনের জন্য।
দুই নগ্ন শরীরের মধ্যে একসুতা পর্দা নাই— এমন অবস্থায়, আধো অন্ধকারে ফিসফিস করে কথাগুলি নাফি যখন বলছিলো, মনে হয়েছে সে যেন সত্যি এরকম চায়। কবি রা যেমন কবিতায় আক্ষেপ করে তাদের না পাওয়া আরাধ্যের জন্য, নাফির বলার মধ্যেও ঠিক তেমন একটা ঢং। আমাকে এমন ভাবে কেউ কখনো বলে নি এসব কথা। হয়তো আমাকে এমনভাবে কেউ চায়ও নি।
যদিও জানি না নাফির এ ধরনের কথাগুলি কতোটা সত্যি আর কতোটা মন ভুলানোর জন্য, তবে তার কাছ থেকে আমার এরকম শুনতে ভালোই লাগে। আর আফসোস হয় ইস, আমি যদি সত্যি সত্যি মেয়ে হতাম! হতে পারতাম! নাফিকে আমি ছাড়া আর কে পেতো? কেউ পেতো না।
দিন কে দিন সেই আফসোসটা বেড়েই চলছিল।
সত্যি বলতে নাফি সারা জীবনের সাথী বা প্রেমিক হিসেবে খুব দারুণ কিছু হবে আমার সেরকম মনে হয় না। আবার মানুষ হিসেবেও সে খুব ভালো— তা নয়। বরং উল্টোটা। খারাপের ভাগই বেশি। আমার প্রিয় বন্ধু রাতিনের তো মনে হয় সে সবসময় নাকি ধান্ধায় থাকে। পড়ালেখায় যাচ্ছেতাই। কথা বার্তায় অগোছালো। পয়সাওয়ালা কিংবা রুচিবান— তা ও না। থাকার মধ্যে আছে শ্যামলা রঙের আদুল আদুল সেক্সি একটা শরীর আর তারচেয়েও সেক্সি একটা হাসি। কি যে আছে ঐ হাসি আর ঐ শরীরের মধ্যে-যতবার দেখা হয় আমার ভেতরের আমি টা আর আমি থাকে না। আমি তো আমিই- তার ওই সেক্সি হাসি আর শরীরের টানে নাফির মেয়ে বান্ধবীরাও সে-ই পাগল। সবাই যেন পটে যাওয়ার জন্য বসেই আছে। নাফির কথা— অনেক মেয়েই তার সাথে প্রথম ডেটিং এই লুব আর কন্ডম নিয়ে হাজির হয়। তার মতন জিনিসকে প্রথম সুযোগে ই চেখে দেখার সুযোগ কেউ মিস করতে চায় না। আমি অবশ্য তাকেও কাউকে ‘না’ করতে দেখি না তেমন। বিশেষ করে যেসব মেয়েগুলার মালদার বাপ আছে। শালা মনে হয় লোভীও।
নাফি মেয়েদের সাথে লাগাতার সম্পর্ককরছে এজন্য তার উপর আমার রাগ করার যৌক্তিক কারণ আসলে নাই। নাফি আমার সত্যিকারের কে? সে তো বলেই দিয়েছে একটা মেয়েকেই সে বিয়ে করবে। তাই নিরুপায় আমি এখন এই কিম্ভূত মেয়েবন্ধুগুলার উপর মেজাজ খারাপ করে থাকি। আরে বাবা সেক্সি পুরুষ শরীর দেখলেই এমনআদেখলার মতন শুয়ে পড়ার কি আছে? তোরা কি আমার মতন? গে? কোন ছেলের সাথে বিয়া হবে না কখনো? তোরা জানিস না নাফি তোদের গার্লফ্রেন্ডও ভাবে না, বউও ভাবে না। ভাবলে রসায় রসায় তোদের সাথে যা করে তা কি আমার সাথে আলাপ করতো? তোরা কি জানিস নাফির উসিলায় তোদের সবার পেন্টি আর নিপলের রঙ আমার মুখস্থ? এই নাফির জন্য এত পাগল ক্যান তোরা?
ধুর! আমার কি হইছে আজকে? যেন আমি জানি না কেন একট শরীর আরেকটা শরীরের জন্য এমন কাঙ্গাল হয়! হুদাই তুই তোকারি করতেছি— নিজের মনেই বকবক করতেছি— কেন কে জানে!
আমি তো নাফির মতন না। লুচ্চা রাজা। বেহুদা কথা বলে বলে মেয়ে পটানো আমাকে দিয়ে হয় না। যদিও মেয়ে বন্ধু আমারও কম নাই। নাফির মতন না হোক দেখনসই পুরুষ শরীর আমারও তো একটা আছে। বাপ ভার্সিটির প্রফেসর বলে হোক বা তিন পুরুষের গড়া বিত্তের গরিমার কারণে হোক, কথায়, চলনে একটা ভাবও আছে। আবার গে-দের নাকি মেয়েরা অবচেতনেই নিরাপদ ও ডিপেন্ডেবল ভাবে। কি জন্য ঠিক জানিনা— মেয়েদের প্রেম প্রেম ভাব আর বন্ধুত্ব দুই অভিজ্ঞতাই আমার আছে।
একটা অভিজ্ঞতা তো সেইরকম ইন্টারেস্টিং! যাকগে সেটার কথা পরে বলি। আপাতত আমার আর নাফির ব্যাপারেই থাকি। একটা কথা অবশ্য ঠিক- হুদাই নাফির শরীর নিয়া ঘাঁটাঘাঁটি আমার পোষায় না। মজাও পাই না। বেশি মজা পাই ঘাঁটাঘাঁটির জন্য অপেক্ষা করে থাকতে। তার চেয়ে বেশি মজা পাই ঘাঁটাঘাঁটির পর নাফির ঘুম শরীরে মুখ ডুবিয়ে ঘুমায়ে থাকতে। কি সুন্দর একটা গন্ধ থাকে তার ক্লান্ত শরীরে তখন। আর শ্বাস নেয়ার নিভৃত ছন্দ। কতবার সেই শরীরে শরীর রেখে ঘুমায়ে পড়েছি! মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙে গেলে তার ঘুমন্ত চেহারার দিকে অপলক তাকিয়ে থেকেছি! কি নিষ্পাপ সেই ঘুমন্ত মুখ! কতবার তার অজান্তেই তার কপালে, গালে চুমু খেয়েছি— তার চুলে বিলি কেটেছি, নগ্ন শরীরে আঙুল দিয়ে তুলির মতন আঁচড় কেটেছি! বহুবার সে ঘুমে র ঘোরেই আমাকে তার বুকে টেনে নিয়েছে— আমার ঊরুবাঁকে তার ঊরু রেখেছে— কখনো পেছন থেকে জড়িয়ে ঘাড়ে মুখ গুঁজে তার হাতের মুঠোতে আমার মুঠো ধরে রেখেছে! সারারাত। এগুলো কি প্রেম নয়? প্রেম না থাকলে দু’টো শরীর কি দিনের পর দিন এত কাছাকাছি আসতে পারে? তবে কেন সে বলে— কোন ছেলের সাথে প্রেম করা পোষাবে না! শালা হিপো!
একদিকে নাফি ছাড়া আমার কিচ্ছু ভালো লাগে না, আর নাফি থাকে দুনিয়ার মেয়েদের দেহরঞ্জনে— কি এক অবস্থা যে আমার!
(২)
নাফির জন্য আমার মনের ভেতর এমন আকুলি বিকুলি দেখে রাতিন একদিন বললো, বাইদের সাথে সম্পর্ককরলে সারাজীবন জ্বলতে হবে।
রাতিন আমারই মতন। তবে একটু আঁতেল মার্কা। হয় জ্ঞানী জ্ঞানী বই পড়ছে না হয় ইউটিউবে ডকুমেন্টারি ভিডিও দেখছে। নিজেকে স্যাপিওসেক্সুয়াল দাবী করে। আবার ভাড়া করা জিগোলোদের সাথে আনন্দ ফুর্তি ও করে। জিজ্ঞেস করলে সিরিয়াস মুখে বলে, কি করবো? মনের মতন তো কাউকে পাই না যে প্রেম করবো! প্রেমও হবে না, সেক্সও করবো না— এটা হয় নাকি?
যাক গে— মন খারাপ থাকলে রাতিনই আমার সহায়। ওর গুরুগম্ভীর ভঙ্গিতে বলা রসের কথা আমার ভালোই লাগে। আজকে যখন আমি মেয়ে হয়ে যাওয়ার কথা তাকে বললাম, সে বললো সবই তোর নাফির প্রতি অবসেশন। সেলফ ডিসিপশন—ধোঁকা। বললে তো শুনবি না। পারবি ও না। তবু বলি— নাফির থেকে দূরে থাক।
—দূরে থাকলেই সব প্রবলেম সলভড হবে?
—সম্ভাবনা তো আছে।
—কি রকম?
—নাফির মধ্যে ডুবে আছিস বলেই আরেকজনকে খুঁজে বের করার সময় পাচ্ছিস না। পাওয়ার চেষ্টা করছিস না।
রাতিনকে বলি না যে নাফিকে শিক্ষা দেয়ার জন্য অন্য দুয়েক জনের সাথে আমিও শুয়েছি। সত্যি বলতে সেসব ভালো তো লাগেই নাই, কাজও দেয় নাই। বরং নিজেকে কেমন অপরাধী অপরাধী মনে হয়েছে। হতাশা বাড়ছে। মনে হয়েছে নাফিরও কি এমন হয় না? কেন হয় না?
একেবারে হয় না এটা মানতেও পারি না, বিশ্বাসও করতে পারি না। যার রন্ধ্রে রন্ধ্রে আমার চলাচল সেই মানুষটা কি সত্যি সত্যি এরকম মিথ্যা মানুষ হতে পারে?
রাতিনের প্রশ্নের উত্তরে তাই বলি, সেই আরেকজনটা যদি আরেকজন নাফির মতন হয়? রাতিন বিজ্ঞের মতন বলে, বেছে দেখবি। এমন কেউ যে তোর মতন। ছেলেদের সাথে সংসার করতে চায়।
—যদি না পাই?
—পাবি না কেন?
—কারণ আমি নিশ্চিত আমি নাফির মতন কারুরই প্রেমে পড়তে চাই। নাফি মার্কা পোলাই আমার নিয়তি।
রাতিন বিরক্ত হয়ে বললো, নিয়তি তো তাহলে প্যান প্যান করিস ক্যান সারাক্ষণ?
নাফি এই করছে, সেই করছে— ফালতু!
আমি বললাম, প্যান প্যান করি নিজেকে হালকা করার জন্য। মাথায় ব্যথা বলে মাথা কেটে ফেলার জন্য না।
রাতিন রেগে গিয়ে বললো, এর চেয়ে সুইসাইড কর। গাধা কোথাকার। তিলে তিলে মরার চেয়ে একবারে মরে যাওয়া ভালো। এখুনি এই অবস্থা! দুইদিন পর নাফি বিয়ে করবে। তখন কি হবে?
—কি হবে? নাফির বউকে গিয়ে বলবো, ভাবী আমার নাম দিহান। সম্পর্কে আপনার সতীন।
—হুহ! ভড়ং! তুই কি চাস তোর হবু সতীন নাফি কে ছেড়ে চলে যাক?
আমি কনফিডেন্টলি বলি, নাহ! ওর বউ কেউ যদি হয় তো সে কখনো নাফিকে ছেড়ে যাবে না।
—কেন?
—যাদের মানুষ সহজে পায় না করে তাদেরই মানুষ বেশি চায়।
—নাফিকে ওর বউ পাবে না সেটা কিভাবে জানিস?
—যার নাগর সে-ই এইসব জানতে পারে। অন্যরা না।
(৩)
আনুশা যেমন জানতে পারেনি।
রাতিন আনুশার কথা জানে না। আনুশা আমাদের ক্লাসমেট ছিল।
প্রথমে সে আমার সাথে টাংকি মারতো। তারপর একসময় চাহিদা-জোগানে টান পড়তে কেটে পড়লো। পুরো পুরি না। আমার উপর শোধ নিতেই কি-না জানি না নাফির সাথে লটকালটকি শুরু করলো। সেখানে আমার কাছে যা পায় নি তা পেলো ঠিকই, কিন্তু যা আমার কাছে পেয়েছিলো তা পেলো না। নাফিরও যে এক নারী শরীরে মন বসে না।
হঠাৎ আমার একটা কথা মনে হলো— নাফি এত নানান মেয়ের সাথে লটর পটর করে, কিন্তু আমি ছাড়া অন্য ছেলের সাথে এই জিনিস করে না কেন? সিক্রেট টা কি?
নিজের অজান্তেই মনে হয় হেসে উঠলাম! রাতিন বললো, হাসতেছিস যে! পাগল হয়ে গেলি নাকি?
—পাগল! নাহ পাগল হই নাই! আনন্দে হাসতেছি।
—কিসের আনন্দে?
—একটা সল্যুশন পাইছি মনে হচ্ছে।
—কি সেটা? সেক্স চেঞ্জ করবি?
—নাহ। সেক্স চেঞ্জ করলে যদি নাফির ভালো না লাগে। ও তো পুরুষ দিহানের সাথে মেশে, নারী দিহান না।
—তাহলে?
একটু চুপ থেকে দার্শনিকের মতন বলি- উত্তরটা হলো, শুধু নাফিই আমার নিয়তি না, আমিও নাফির নিয়তি। আমি ছাড়া নাফিরও উপায় নাই।
বলে এইবার হাসি না। আত্মবিশ্বাস নিয়ে রাতিনের দিকে তাকিয়ে থাকি। এমন সময় আমার ফোনে রিং বেজে ওঠে। না দেখেই বলতে পারি নাফির কল ওটা।
আজকে ওর তাহিয়ার বাসায় যাওয়ার কথা। ওদের বাসা নাকি আজ ফাঁকা।
ও কি তাহিয়ার সামনেই আমাকে ফোন দিচ্ছে?
নাকি তাহিয়া এখন বাথরুমে? তাহিয়া এখন কোথায়!
নাফি নয়, তাহিয়ার অবস্থান জানাটাই যেন এখন আমার জন্য বেশি জরুরী— এমন একটা ভাবনার চোরাবালিতে আমি যেন ধীরে ধীরে তলিয়ে যেতে থাকি।
প্রথম প্রকাশ: সমারূঢ়
(মন্দ্র প্রকাশিত বাংলাদেশের প্রথম কুইয়ার ছোটগল্প সংকলন)