নিবর্তন

অরিত্র হোসেন

‘কাবেরী নদী-জলে কে গো বালিকা?’

সরোজিনী মৃদু হাসল। অকস্মাৎ তার প্রত্যেকটি ইন্দ্রিয়তে আহ্লাদের জোয়ার তুলে দিয়ে লুকিয়ে গেল প্রিয় কবির প্রিয় গানের চরণ। পরের চরণগুলো মনে আসছে না কেন?

সরোজিনী চমকে উঠলো! আজ সকালেই তৈরি হবার সময় গানটি কমপক্ষে পনেরো বার শুনেছে। ষোলবারের বেলায় বাড়ির সকলের হাসিঠাট্টার শিকার হয়ে লজ্জায় ক্যাসেট প্লেয়ার বন্ধ করে দেয়। আসার পথে চরণগুলো ঘুরপাক খাচ্ছিল তবে এখন কি হল?

‘আনমনে ভাসাও চম্পা-শেফালিকা’ সরোজিনী কৌতূহলী কণ্ঠে বলল, নজরুলের প্রতি চৈতির অনুরাগ দেখে আমি মুগ্ধ! চৈতি হেসে বলল, অনুরাগ শুধুনজরুলের প্রতি সেটা তোকে কে বলল? সরোজিনী শান্ত গলায় বলল, অনুমানে ঢিল ছুঁড়লাম।

চৈতি আবারও হেসে বলল, বহুদিন পর বিদেশ থেকে এলে বুঝি হাত-পা ছড়িয়ে শাড়ি পরে প্রকৃতি উপভোগ করতে হয় তা তো জানতাম না!

প্রত্যুত্তরে কিছুনা বলে সরোজিনী শাড়ির আঁচলের শেষভাগ পানিতে হালকা ছোঁয়াল। শ্রাবণের এক মধ্যাহ্নে পুকুরঘাটে পায়ের পাতা ভিজিয়ে বসে আছে সে। বদ্ধ পুকুরের এই পানি অবশ্য পবিত্র কাবেরী নদীর জলের কাছে কিছুই না। আবার সে তো বালিকাও নয়। তবে তাতে কিছু যায় আসে না। কনকনে শীতে ঢাউস আকৃতির জ্যাকেট পরে শিকাগোর রাস্তায় হাঁটার সময় প্রায়ই ভাবতো, ইশ! একটি বারের জন্য হলেও সুতির শাড়ি পরে পুকুরের জলে পা ভিজিয়ে শরতের ‘পরিণীতা’ উপন্যাসটি শেষ করা প্রয়োজন।

অনেকবার চেষ্টা করেও শিকাগোর কোনো স্থানে বসে বইটি পড়ে আনন্দ পায়নি। তাই আজ খায়েশ পূরণের তাগিদেই এমন এলাহি আয়োজন। চাপা গায়ের রঙ, গোলগাল কমল চেহারায় বড় বড় এক জোড়া নয়ন, ঠোঁটের কোনায় তিনটি তিল, ঘাড় অবধি কোঁকড়ানো গাঢ় বাদামী চুল আর মিষ্টি হাসি – মাঝারী গড়নের সরোজিনী মর্ত্যের বেশিরভাগ লোকজনের কাছে সাধারণ এক প্রৌঢ়া। সৌন্দর্যকি দাঁড়িপাল্লায় পরিমাপ করা যায়? সৌন্দর্যকে করতে হয় অনুভব, যা মর্ত্যের লোকের কাছে অতি দুরূহ কাজ।

উদাসীন নয়নে শ্যাওলায় ভরা পুকুরের জলের দিকে তাকিয়ে আছে নীল পাড়-সবুজ শাড়ি পরিহিত প্রৌঢ়া। নিজের চেহারা স্পষ্ট দেখতে না পেলেও তার কোঁকড়ানো চুলগুলোর গাঢ় অবয়ব প্রতিফলিত হয়েছে জলে।

‘প্রভাত-সিনানে আসি আলসে, কঙ্কন-তাল হানো কলসে’ সরোজিনী রাগী গলায় বলল, নিচে নামতে কষ্ট হচ্ছে?

চৈতি বলল, চোখ তুলে বা’পাশে তাকালেই হয়।

সরোজিনী অনিচ্ছায় চোখ তুলতেই চৈতি আয়োজন করে সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগলো। মাঝারী হিলের জুতো পরেছে। খট খট শব্দ হচ্ছে। দাঁত কিড়মিড় করে উঠলো সরোজিনীর। এই বিদঘুটে জুতো কেন মানুষ পরে!

নামার পর্বশেষ করে খুব যত্নে বসার জায়গা এক লিফলেট দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে বসলো চৈতি। আহা! মুখখানি ওমন শুকনো হয়ে আছে কেন? সেই ইউনিভার্সিটির সময়কালের চশমা চোখগুলোকে জিইয়ে রেখেছে। মলিনভাবে হেসে চৈতি বলল, কি দেখছিস তুই?

সরোজিনী বলল, তোকে। তুই মাস্টারি করিস না কেরানির চাকরি?

চৈতি মুচকি হেসে বলল, শিকাগো থেকে ‘কেরানি’ শব্দ বলতে তোর সম্মানে দাগ পড়লো না? তুই তো শব্দের ব্যাপারে যা সচেতন!

সরোজিনী বলল, যা দেখাচ্ছে তাই বললাম! কতবার করে বললাম সবুজ রঙের প্রবর্তনার শাড়ি পরতে, কথা তো শুনলি না আবার আমাকে খোঁটা দিচ্ছিস শব্দ নিয়ে!

চৈতি হাসতে হাসতে বলল, টাঙ্গাইলের বেগুনি সুতির শাড়ি পরেছি বলে তুই আমাকে আর কাছে আসতে দিবি না?

সরোজিনী চোখ নামিয়ে ফেলল। তার আর চৈতির কাছে আসা, আর দূরে যাওয়ার কয়েকশ স্মৃতি মাথায় উঁকিঝুঁকি দিতে শুরু করল। হাতে দিয়ে হালকা স্পর্শ করলো চুলে। হয়তো এক স্পর্শে সব হারিয়ে যাবে!

চৈতি বলল, দুই মাস আগে মার বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। তাই আমার সব ভালো শাড়িগুলো আপাতত মাকে দিয়ে দিয়েছি। তার খুব পছন্দের রঙ সবুজ, প্রিয় কাপড় সিল্ক!

শাড়িটা দেখতেই আমাকে বিশেষ করে বলে দিয়েছে সে নিজের কাছে রেখে দিবে। আমি কি আর মানা করতে পারি?

সরোজিনী দীর্ঘঃশ্বাস ছেড়ে বলল, রাখুক। নিজের কাছে সবকিছুরেখে দেওয়াই তো উনার সবচে’ প্রিয় কাজ।

চৈতি বিষয় পরিবর্তন করার জন্য তড়িঘড়ি করে বলল, তোকে নীলে খুব মানায়।

সরোজিনী চোখ তুলে বলল, তুই ভালো আছিস?

চৈতি পানির দিকে পা বাড়িয়ে বলল, আমার কি! মাস্টারি করি, সংসার করি – এইতো। একই রকম চলে যাচ্ছে সব দিনগুলো! তুই কেমন আছিস?

সরোজিনী অম্লানকন্ঠে বলল, তোকে মনে পড়ে।

চৈতি শক্ত গলায় বলল, ছয় বছর পর এ কথা বলার জন্যই এই এলাহি আয়োজন?

সরোজিনী তীক্ষ্ণকণ্ঠে বলল, আজেবাজে বকিস না!

চৈতি ঠাণ্ডা গলায় বলল, হ্যাঁ। তোর একারই মেজাজ গরম হয়, তোর একার সঙ্গেই অন্যায় হয় – আর বাকি সবার জীবনে আহা! কি আনন্দ!

সরোজিনী রাগে ফুঁসছে। তাঁর গায়ের প্রত্যেক বিন্দু রক্ত গরমে হয়ে উঠেছে যেন, যেকোনো সময় বিশাল ধরণের অঘটন ঘটতে পারে। চৈতি তা আন্দাজ করতেই বিড়বিড় করে বলল, মাথা ঠাণ্ডা কর। আশেপাশের মানুষ হা করে তাকিয়ে আছে।

আসলেই! দু’জন মেয়ে পুকুর ঘাটে বসে আছে, আর কিছু উৎসুক পুরুষ মানুষ তাদের দিকে চেয়ে থাকবে না – তা কি হয়! সানন্দে দাঁত খিলি করে আড় চোখে শরীর পরখ করে নিচ্ছে, লজ্জাশরমের ছিটেফোঁটাও নেই!

সরোজিনী ইচ্ছা করেই শাড়ির আঁচল ছুঁড়ে মারলো পানির মধ্যে। সঙ্গে সঙ্গে কিছু ছোকরা-পোলাপান শিস দিতে শুরু করলো। চৈতি দাঁত কড়মড় করে বলল, সরোজ! বাংলা একাডেমির পুকুরপাড়ে ভরদুপুরে খুব কমই কর্মরত মানুষজনের আনাগোনা দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা ঘুরাফেরা করে মাঝেমধ্যে, তবে আজকে বেশ সুনসান। আবহাওয়া বেশ শান্ত। শীতল হাওয়ার ঝটিকা সফর অব্যাহত আছে।

সরোজ জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। কপাল জুড়ে মৃদু ঘাম আলোতে চিকমিক করছে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই স্বাভাবিক হয়ে যাবে সরোজ। চৈতি দায়িত্ববানের মতো শাড়ির আঁচল পুকুরের পাশ থেকে সরিয়ে পানি ঝরিয়ে মেলে দিলো পিছনে । বাতাসে শুকিয়ে যাবে।

তারপর নিজের আঁচল দিয়ে সরোজের কপাল মুছে দিল। সে এখনও কাঁপছে। চোখে ঘুম ঘুম ভাব, খুব জোর করেই সেজেগুজে নিজেকে তাজা রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে।

সরোজ বিড়বিড় করে বলল, তুই শুকিয়ে গেছিস কেন?

চৈতি শান্ত গলায় বলল, আমি আগের মতোই আছি।

সরোজ বলল, না! কাঁধ নুইয়ে গিয়েছে, তোকে দেখলে মনে হয় কেউ তোর প্রাণ কোন সিন্দুকে বন্দী করে রেখেছে। আগে হাসলে পুরো মুখ জ্বলজ্বল করতো।

সরোজ যদিও মিথ্যা বলেনি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চৈতির পরিবর্তন হয়েছে। প্রথম সন্তান হবার পর কিছুদিন নাজুক অবস্থায় ছিল। সুন্দরী চৈতি – যা আর দশটা বাঙালি ললনার মতন সবার নজর কাড়তো, এখন নিজের অস্তিত্ব লড়াইয়ের সংগ্রামে হাবুডুবু খাচ্ছে। আগে সরোজকে টিটকারি মেরে, সব ছেলেগুলো দিওয়ানা হয়ে চৈতির পিছন পিছন ঘুরত। তবে একই ডিপার্টমেন্টে দুই ঘনিষ্ঠ বান্ধবী যে প্রণয়ের সম্পর্কে নিজেদের বেঁধে ফেলেছিল তা এক-দুজন হালকা আন্দাজ করেছিল। শুরুটা অনার্সের দ্বিতীয় দিন থেকে। হঠাৎ পরিচয়, তখনই প্রেম। ‘রোমিও ও জুলিয়েট’ যে কতবার ‘জেইন ও জুলিয়েট’ বানিয়ে নিজেদের মধ্যে বাক্য বিনিময় করেছে, ড্রামা প্র্যাকটিস করেছে তার ইয়ত্তা নেই।

চৈতি বলল, রাগ নামার পর হাঁপানি রোগ এখনও আছে? চিকিৎসা করাস না কেন?

সরোজ বলল, সবসময় হয় না।

“শোন সরোজ। রহস্য আমরা সবাই পছন্দ করি। আমি নিজেই খুব করি। আজকে ক্লাসে জন ডান এর সেই বিখ্যাত কম্পাস থিউরি বুঝাচ্ছিলাম। তখন তোর কথা চট করে মনে পড়ে গেল। তুই বলেছিলি, আমরা দুজন কম্পাসের মতো একে অপরকে দুদিকে ধরে রাখবো – তা অবশ্যই বাস্তব হয়নি তবে তখন খুবই ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলাম।

এরই মধ্যে ৬ বছরের সব মান-অভিমান ভেঙে তুই হাজিরা দিলি। এই তোর জরুরি তলবে চলে এলাম কোনোমতে। আমার প্রতি তোর কি একটু মায়া হয় না?”

“হয় রে। এই মায়ার কারণে আজও ৬ বছর ধরে এগুতে পারছি না। ওকে একা রেখে চলে এসেছি”।

চৈতি অভিমানী সুরে বলল, সেই ফরাসি মেয়ের সঙ্গে?

সরোজ মাথা নাড়িয়ে বলল, হ্যাঁ। আমি এসেছি তোর কাছ থেকে ‘ক্লোজার’ নিতে।

কোনভাবেই আমি তোকে ভুলতে পারছি না আমি, কোনভাবেই আমি সামনে এগিয়ে যেতে পারছি না।

চৈতি হাসতে হাসতে বলল, প্রফেসর যদি এই ধরণের কথা বার্তা বলে! হাহাহা!

সরোজ বলল, প্রফেসরদের কি মন নেই?

চৈতি ঠাণ্ডা গলায় বলল, আছে।

“বাছুর প্রেম তো বাছুরকালেই শুকিয়ে যাওয়ার কথা, এখনও জেগে আছে”।

“ওটা হবে ইউনি-প্রেম। অনার্সশেষ, প্রেমও পালিয়ে গেছে। হাহাহা”

“সেটা যে যায়নি, ওটা আমিও জানি – তুইও জানিস”

চৈতি বলল, ক্লোজার চাস? জানতে চাস আমি সংসারে সুখি কিনা?

সরোজ বলল, তুই জোর করেই তো ভান করে আসছিস যে তুই বিয়ে করে, বাচ্চা নিয়ে সুখে আছিস!

“থাকতেই পারি! আমাদের কি ভবিষ্যৎ ছিল এখানে? তুই তখন আমেরিকা যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠলি। নিজে মাস্টার্স এ এপ্লাই করলি, আমাকে তো সুযোগ দিলিই না বরং আমা্র সঙ্গে তখনই চলে যেতে চাইলি। ওদিকে বাসা থেকে বিয়ের চাপ”।

“আর সেই বিয়ের চাপ থেকে বাঁচানোর জন্য তোমার বন্ধুশিমুলকে বলা হল প্রেমিকের অভিনয় করতে। পরে সে নিজেই তোমার বাবা মায়ের প্যাঁচে পড়ে বিয়েতে রাজি হয়ে গেলো! আর তুই…!”

“আমি? সেই বিয়ে ঠেকাতে তুই কি করলি? সবকিছুভেঙেচুরে, ঝামেলা পাকিয়ে

চলে গেলি!”

“তুই তো বিয়ে বসলি!”

“আমি নিজের ইচ্ছাই বসেছি?”

“তুই যদি চাইতি তাহলে কি হতো?”

“দুই নারীর প্রেম। আমাদের বাস্তবতা কি তোকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে?”

সরোজ কয়েক সেকেন্ড জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে বলল, বাসায় বলেছি বিয়ে করছি। সাংঘাতিক অবস্থা।

চৈতি সরোজের দুইহাত ধরে তুলে দাঁড়া করালো। এরপর শাড়ির কুঁচি ঠিক করে দিয়ে বলল, চল হাঁটতে হাঁটতে চারুকলায় যাই।

সরোজ কোনোরকমের সংকোচ করলো না। সিঁড়ি বেয়ে কিছুদূর উঠে গিয়ে আবার নিচে ফিরে এলো। বেলি ফুলগুলো প্রিয় মানুষকে দেওয়া হয়নি। চৈতির খোঁপায় গুঁজে, খানিকটা কাছাকাছি হাঁটতে শুরু করলো দুজন।

সেই হারানো দিনের অনার্সের স্মৃতিগুলো আবারও জেগে উঠছে।

“মনে আছে সরোজ, সেই বার প্রথম রঙধনু যাত্রা হল। আমি তো ভীষণ ভয় পেয়েছিলাম। তারপরও যাত্রার পিছন পিছন আমরা মৃদুপায়ে হেঁটেছিলাম”।

“মনে থাকবে না কেন? সেই ছিল আমাদের শেষ একসঙ্গে…..”

“না, সরোজ। আজ হল সেইদিন”।

“আজকে একদম সই করে আমাকে পর করে দিবি?”

“দিতে হচ্ছে। আমি নিজে সংসার করে, সন্তান-ক্যারিয়ার সবকিছু সামলে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি কিন্তু আমি আমার সবচেয়ে আপনজনকে মুক্তি দিতে পারলাম না”।

“ও, তুই আমাকে আজকে মুক্তিও দিবি?”

“দিলাম। তুই আজকে থেকে মুক্ত। আমার ভালোবাসার খাঁচা থেকে মুক্তি দিয়ে দিলাম”।

রঙবেরঙের বেলুন নিয়ে এক লোক খুব মলিন মুখে দাঁড়িয়ে আছে শাহবাগ মোড়ে।

চারদিকে গাড়ির হর্ন, রিকশাওয়ালাদের দাপট, ফেরিওয়ালাদের ব্যস্ততা। এই এক মোড়েই পুরো দেশের সুখ, দুঃখ, ভালোবাসা, যাতনা একত্রে প্রতিফলিত হচ্ছে। খুব শক্ত করে চৈতির হাতে ধরে সরোজ হাঁটতে লাগলো। বিকেলের নরম আলোয় শুধু এই অতি দুর্লভ, ফিরে পাওয়ার স্মৃতি মুক্ত করতে চায় না সরোজ। চৈতি গুণগুণ করে গাইতে লাগলো, কাবেরী নদী-জলে কে গো বালিকা।

আধা ঘণ্টার মধ্যেই বিমান গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিবে। সরোজিনী ঘুমে ঢুলছে।

বাসার অবস্থা করুণ। বিয়ের জন্য ভীষণ চাপ দিচ্ছে। একের পর এক পাত্র দেখেই চলছে, তাকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজনবোধও করে না! চৈতির সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করে বাসায় যেয়ে দেখে তার পরিবার এক পাত্রপক্ষের সঙ্গে বিয়ে প্রায় পাকাপাকি করে ফেলেছে।

তড়িঘড়ি করে হাতের সামনে যা পেয়েছে তা নিয়ে প্রায় জান সামলে এয়ারপোর্টে এসেছে। ইসাবেলা কল করেই যাচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে মেসেজ পাঠিয়েছে, “তুমি কি আমার কাছে আসছ না?” । ইসাবেলাকে মেসেজের জবাব দিতে গিয়ে আরেকটি মেসেজ এসে পৌঁছল।

“ইচ্ছে করেই বলিনি। আমি পিএইচডি করতে আগামী আগস্টে আসছি তোর ওখানে। মেয়েকে নিয়েই আসছি। দেখা কি হবে? তোর, চৈতি”।

সরোজ মেসেজের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কোনো উত্তর লিখল না।

সরাসরি কল করে সরোজিনী কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো, “হ্যালো, ইসাবেল! আমাকে বিয়ে করবে?”

প্রথম প্রকাশ: সমারূঢ়
(মন্দ্র প্রকাশিত বাংলাদেশের প্রথম কুইয়ার ছোটগল্প সংকলন)

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.