বুদ্বুদ

শৈলবালা দেবী

বৃষ্টির রাত। চারদিকে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি ঝরছে। 

ঘুমিয়ে আছে পুরো এলাকাবাসী। টিনের চালে বৃষ্টির শব্দে এক মাদকতার সুর সৃষ্টি  করছে। শো শো হাওয়ায় বৃষ্টির ছাট এসে নাকে মুখে লাগছে করিম মোল্লার। টিনশেড একটি আধাপাকা ঘরের দাওয়ায় রকিং চেয়ারে বসে আছেন তিনি। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। 

জানালার ফাঁক গলিয়ে একবার তাকালেন বিছানার দিকে। জবুথবু হয়ে শুয়ে আছেন  মমতা। 

বিদ্যুৎ চমকানোর সামান্য আলোয় বার বার একটুর জন্য আলোকিত হচ্ছে মমতার  মুখশ্রী। এক মায়াময় অবয়ব। গিয়ে দাঁড়ালেন স্ত্রীর কাছে, ইশ! এই স্ত্রীকে পাবার জন্যই  কত কী করতে হয়েছে। ভাবতে চাইলেন না, মমতার দেহের উষ্ণ ছোঁয়া পেতে চাইছে করিম মোল্লার দেহ। বিছানায় গিয়ে আস্তে করে বৌকে জড়িয়ে ধরলো করিম। 

আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠল মমতা। করিম মোল্লার এই ছোঁয়া তার বড্ড পরিচিত।  তারপরও জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন করিমের দিকে মমতা। করিম মিয়া মমতার দৃষ্টি  দেখে কিছুটা লজ্জা পেলো। উঠে গিয়ে আবার বসলো রকিং চেয়ারটায়। তার কীসের  এতো লজ্জা মমতার প্রতি বুঝতে পারলেন না। এতটুকুও সাহস নেই, মমতার চোখের  দিকে তাকানোর। চোখে চোখে চাইলেই যেন ধরা পড়া ভাব কাজ করে করিমের মধ্যে। 

আবার বিদ্যুৎ চমকালো, টিনের ঢেউ থেকে প্রবাহিত বৃষ্টির পানির সরু ধারাটা মাটিতে পড়ে কিছুটা গর্তের সৃষ্টি করেছে। 

ফলে গর্তথেকে সৃষ্টি বুদ্বুদ পানির ওপর ভেসে ওঠে। কিছু ফেটে যাচ্ছে, আবার নতুন বু্দ্বুদ সৃষ্টি হচ্ছে। বিদ্যুৎ চমকানোয় সেটার উপর আলোর প্রতিফলন হচ্ছে সামান্য। দৃষ্টি পড়লো বুদ্বুদের  ওপর করিমের। একমনে চেয়ে স্মিত একটা হাসি ফুটে ওঠলো করিম মোল্লার ঠোঁটের  কোনায়। সেদিন এমনই বৃষ্টির রাত ছিলো! গাছের পাতা চুঁইয়ে রক্তে ভেজা মাটির উপর পড়া পানি এমনি বুদ্বুদের সৃষ্টি করেছিলো।  বু্দ্বুদের দিকে এতোই আনমনা হয়ে ছিলো যে মমতা কখন যে পাশে দাঁড়ালো খেয়ালই  করলো না। পাশে রাখা মোড়াটা টেনে করিম মোল্লার পাশে বসলো মমতা। খেয়াল হলো করিমের। তাকালেন স্ত্রীর দিকে। চোখে কেমন যেন ধরা পড়া ভাব। অন্য দিকে চোখ ফিরিয়ে নিলেন। মমতা কিছুটা  আঁচ করতে পারলেন। 

অনেকটা রসিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন স্বামীকে, 

—কী গো, ফোটনা দেইখা এমন ভাবে হাসলা ক্যান? আমারে একটু কইবা? করিম কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। মমতার থেকে এমন প্রশ্ন আশা করেনি সে। সে কি বলবে? এই ফোটনা রহস্য! 

শুধুমাত্র সে ছাড়া আর তো কেও জানেনা। না, কিছুতে ই বলবে না সে। সে চায় না  তার অপরাধ কেও জানুক। হাসিমুখে তাকালো মমতার দিকে। বললেন, —না গো বউ, এমন কিছুনা।  

নিজের চোরা ভাব টা চোখ থেকে লুকাতে পারলেন না। মমতা ধরে ফেললেন। বিশ্বাস করতে চাইলেন না। বার বার অনুনয় করতে লাগলেন করিম কে, কিন্তু করিম বলতে অপারগ। এদিকে মমতাও নাছোড়বান্দা। মজা করে জানতে চেয়ে করিম মোল্লার মনের অবস্থার পরিবর্তন  দেখে নিয়েছে। সে গোঁ ধরে বসে আছে, কি রহস্য আছে এই বুদ্বুদে তাকে জানতেই  হবে। একদিন পার হয়ে গেলো, মমতা কিছুই খাচ্ছে না। করিম মোল্লা বুঝে উঠলো না, সামান্য একটা হাসির কারণ জানতে মমতা এতো জেদ  ধরবে। বউকে পাবার জন্যইতো এসব করছিলো সে। তার বউ কি তাকে নির্দোষ মনে করবে? সে কি তার পক্ষ নিবে? 

যাই হোক করিম তার স্বামী। স্বামীকে নিশ্চয় মমতা বিপদে ফেলবে না? সেই আশায় করিম বলে দিলো তার অতীত। সেই বৃষ্টি রাতের কাহিনী। 

(২) 

মিয়ারচর গ্রামের পাশেই বয়ে চলেছে পণতীর্থ নদী। সেই নদীর পাশেই গ্রাম। গ্রামের জমিদার বংশের পোলা কাশেম মোল্লা। জমিদারী তখন ছিলোনা। তারপরও খ্যাতি রয়ে গিয়েছিলো করিমের বাপের। তাই  বেশ দাপট দেখিয়ে গ্রামে বসবাস করছে। তারই ছেলে করিম মোল্লা, যুবা বয়সের সেই  রক্ত টগবগ করা যুবক ছিলো করিম। জমিদার বংশের পোলা হিসেবে বাবার পাশাপাশি তারও দাপট রয়েছে গ্রামে। কিন্তু দাপট শুধু মুখে আর কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলোনা,  সেটা যৌনতাতেও ছড়িয়ে গিয়েছিলো। যৌবন প্রাপ্ত করিম তার যৌন উন্মাদনা সহ্য করতে না পেরে রাতের আঁধারে কিশোরী মেয়েদের উপর চড়াও হতো। 

বিনিময়ে তাদের টাকা দিয়ে হাত ভরিয়ে দিত। মেয়েদের সাথে এতোই বিছানায় গিয়েছিলো যে করিম মোল্লা বিছানায় মেয়েদের নিয়ে যৌন স্বাদ পেতেন না আগের মতো। মেয়েদের সাথে করতে রুচিতে বাধতো। যৌনতায়  তিনি যেন আলাদা কিছু অনুভূতি খোঁজেন। খুঁজে পান নি সেই অনুভূতি। করিম যেদিন সেই অনুভূতির খোঁজ পান সেদিন পণতীর্থের তীরে এক বড় যাত্রা পালা  আসে। সেই বিখ্যাত যাত্রাপালা “রূপবান”। রাতে যাত্রা অনুষ্ঠান শুরু হয় “রূপবান”। করিম মোল্লাও সেই রাতে যাত্রাপালায়  ছিলেন। সেখানেই দেখা হয় ছেলেটির সাথে। রূপবান চরিত্রে সে অভিনয় করেছিলো।  নকল স্তন, মেকাপ আর পোশাকে প্রথমেই মনে হয়েছিলো এক রূপসী নারী কোমর  দুলিয়ে দুলিয়ে নৃত্য করছিলো। সেই ছেলের সুডৌল নিতম্বের তিরতির করে কাঁপতে থাকা দৃশ্য দেখে নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারেনি করিম। তার মন বলছিলো এই সেই  জিনিস। যেখানে তিনি খুঁজে পাবেন যৌনতার পরম সুখ। তিনি কাটাতে চান তার সাথে এক মুহুর্ত। ছেলে জানার পরও বিছানায় যাওয়ার প্রস্তাব দেয় যাত্রাপালার ম্যানেজারকে। গ্রামের প্রতাপশালী বলে, বেশ ঝামেলাহীন ভাবেই সেই খায়েশ পূরণ করে করিম।  ছেলেটাকে নিয়ে গিয়েছিলো তার কাচারি ঘরে। সেই রাত্রে ছেলের সাথে সময় কাটিয়ে পেয়েছিলো সেই যৌনতার স্বাদ যা তিনি মেয়েদের মাঝে খুঁজে বেড়াতেন। সেদিন  কাচারি ঘর থেকে শোনা গিয়েছিলো রূপবানের আর্তচিৎকার। সেই থেকে ছেলেদের সাথে বিছানায় যাওয়া তার শুরু। ধীরে ধীরে করিমের ভিতরে জন্ম হয়েছিলো উভকামী সত্তার। যাত্রাপালা চলে গিয়েছিলো, কিন্তু সেই সুখে র আমেজ রয়ে গিয়েছিলো করিমের  মধ্যে। ছেলেদের সাথে সঙ্গমে এতোই তৃপ্তি পেয়েছিলেন যে গ্রামের অল্প বয়সী ছেলেরা  শিকার হতে থাকে তার এই উভকামী যৌন লালসার।

তার এই ইচ্ছা মেটাতে মিয়ারচরের  বিভিন্ন বয়সী ছেলেপেলেদের নিরিখ করে সে। একে একে লালসার শিকার হতে থাকে মিয়ারচরের প্রত্যেকটা ছেলে। এমনিভাবে চলতে থাকে করিমের জীবন। বিকৃত  লালসা সাথে নিয়ে একের পর এক ছেলেদের সাথে তার এই অপরাধের কাজ করেই  চলেছিলেন। গ্রামে কানাঘুষাও উঠেছিলো। শীঘ্রই বিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলেন  কাশেম মোল্লা। সেদিন করিম সুনামগঞ্জে গিয়েছিলো। করিমের বিয়ে ঠিক হয়েছে নদীর  ওপারের গ্রামের বনেদী বংশের মেয়ে মমতার সাথে। বিয়ের হাটবাজার করতে করিম নিজেই গিয়েছিলেন। সুনামগঞ্জে আসা যাওয়ায় দুই দিন লেগে যেতো। করিমদের নৌকার  মাঝিদের মধ্যে বয়ঃপ্রাপ্ত কিশোর মনাকে নৌকার মাঝি করে নিয়ে যান গঞ্জে। সেদিন বাড়িতে ফেরার রাতে প্রচণ্ড যৌন তৃষ্ণা পেয়েছিলো করিমের। তার মনটা কামনায় ভরে গিয়েছিলো। হাতগুলো নিশপিশ করছিলো কচি স্তন কচলানোর জন্য। দাঁতগুলো কিড়মিড়  করছিলো একটা নরম দেহ কামড়ানোর জন্য। নিজেকে আর সামলিয়ে রাখতে পারেনি। গিয়ে জাপটে ধরেছিলো মনাকে। নৌকা তখন মাঝ নদীতে গিয়ে পড়ছিলো। চারিদিকে বিভিন্ন ইঞ্জিন চালিত নৌকা লঞ্চের আনাগোনা। মাঝনদীতে সেদিন কেউ  শোনেনি মনার চিৎকার। তার চিৎকার চাপা পড়ে গিয়েছিলো ইঞ্জিনের শব্দে। সেদিন  অনেক কেঁদেছিলো মনা। 

পায়ে লুটিয়ে পড়েছিলো করিমের। বিকৃত মস্তিষ্কধারী করিমের মন তখন যৌন তৃষ্ণা মেটাতে কঠিন হয়েছিলো পাথরের মতো। কামড়ে খেয়েছিলেন মনার কলাপাতার মতোন  নরম শরীর। চুষে চুষে লাল করে দিয়েছিলেন কমলার কোয়ার মতন দু’টি ঠোঁট। কচলে দিয়েছিলো মনার দু’টি স্তন। সারা শরীরে ছিলো কামড়ের দাগ। নিস্তার পায়নি করিমের  হাত থেকে। করিমের আঘাতে রক্তাক্ত হয় মনার দেহ। রক্তে নৌকার কাঠের পাটাতন ভিজে গিয়েছিলো। অবশেষে আশা ছেড়ে দিয়ে মনা মেনে নিয়েছিলো তার নিষ্ঠুর পরিণতি। বাড়ি এসে কাউকে কিছু বলতে পারেনি সে।  প্রতাপশালী এই করিমের সাথে কিছুতেই পেরে উঠবেনা সে একা। উলটো ঘরছাড়া  হয়ে পথে যেতে হবে তাকে। প্রতিশোধে মন বিষিয়ে উঠছিলো মনার। বিয়ের আগের  রাতে করিম কে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলো নদীর পাড়ে। ঝিরঝির বৃষ্টির সেই বজ্রপাতের  রাতে করিম ও গিয়েছিলো যৌনতার সুখ পাওয়ার লোভে নদীর পাড়ে। নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলো সেদিন করিমের কাছে। নিয়ে গিয়েছিলো পরিকল্পনা মাফিক স্থান ধানখেতের  আড়ালে। মনে ছিলো কঠোর প্রতিহিংসা। সব কিছুর প্রস্তুতি শেষে করিম যখন উত্তেজনায়  জাপটে ধরেছিলো মনার শরীর। ঠিক তখনি! ধানখেতের আইলের ওপাশে লুকিয়ে রাখা কাস্তেটা বের করলো। বসিয়ে দিলো করিমের পিঠে। কিন্তু মনার স্বল্পবুদ্ধির সেই খুনের পরিকল্পনার উপকরণ টা ছিলো অত্যন্ত ভুল। সে ভাবতে পারেনি, কাস্তে দিয়ে শুধু ধানই কাটা যায়। কোনো মানুষকে খুন করার জন্য উপযুক্ত নয়, বড়জোর কয়েকটা ক্ষত সৃষ্টি করতে পারবে। কাস্তের আঘাত পেয়ে প্রথমে চমকে উঠেছিলেন করিম। কিন্ত ঘটনা বুঝতে দেরী হয়না করিমের। তাড়াতাড়ি বগলদাবা  করে নেয় মনার হাত। কাস্তেটা পড়ে যায় মাটিতে। কাস্তের আঘাতে আক্রান্ত জায়গার  যন্ত্রণা হিংস্র করে দিলো করিমকে। একের পর এক আঘাত করতে করতে জর্জরিত করে মনাকে। দ্বিতীয়বারের মত মনার নিতম্বে দেখা যায় রক্তের ধারা বৃষ্টির পানিতে মিশে মাটিতে পতিত হচ্ছে। সেই পানিতে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ে সৃষ্টি হচ্ছে লাল বুদ্বুদ।  বজ্রের আলোয় সেই রক্তের বুদ্বুদ কালচে দেখাচ্ছিল। পুরো টাই বৃষ্টির পানির সাথে মিশে একাকার হয়েছিলো। তারপর করিম হাতে নেয় কাস্তে টা। এই জঞ্জাল সে বাঁচিয়ে রাখতে চায়না। আগামীকাল থেকে শুরু হবে তার নতুন জীবন। নিস্তেজ শরীরের মনাকে নিজের পরনের লুঙ্গি টা দিয়ে হাত পা বাধে সে। কাস্তেটা বসিয়ে দেয় মনার গলায়। ভোতা কাস্তে এক বিশ্রি শব্দ করে কেটে দিচ্ছে মনার কণ্ঠস্বর। ঘর্ঘর শব্দ বের হচ্ছে মনার গলা দিয়ে। নিস্তেজ শরীরের মনা হাত পা নাড়িয়ে চিৎকার করতে পারেনা। সে শুধু আস্তে করে বলেছিলো, তোর বিচার হবে! তোর বিচার হবে! 

মনার কথা শুনে সেদিন ভীষণ হাসি পেয়েছিলো করিমের। করিম উপহাস করে বলেছিলো, এই নির্জন বৃষ্টির রাতে তোকে খুন করার সাক্ষী এখানে কেউ নেই। মনা  বলেছিলো 

—এই যে দেখছিস বুদ্বুদ, আমার শরীরের রক্তে তৈরি বু্দ্বুদ সাক্ষী। সে তোর সত্য সবার সামনে প্রকাশ করবেই। 

তারপর মনার শরীরটা নিস্তেজ হয়ে যায় চিরদিনের মতো। নাক দিয়ে কোনো বাতাস বের হয়না। করিম সেই রাতে মনাকে খুন করে একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিলো বুদ্বুদে র দিকে।  মনে একটা কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছিলো আবার হাসিও পাচ্ছিলো। তারপর মনার লাশটা  সেখান থেকে তুলে ফেলে দিলো খরস্রোতা পণতীর্থের পানিতে। সেদিন এর কথা কেউ  জানেনি। 

পরের দিন থেকে মনা নিখোঁজ। কেউ বুঝতেই পারেনি। সবাই করিমের বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত ছিলো। 

কেউ খোঁজ করেনি মনার। 

(৩) 

সকাল সকাল জমিদার বাড়িতে পুলিশ আসাতে বেশ অবাক হলো মিয়ারচর গ্রামবাসী। কেউ ভেবে পেলোনা, গ্রামে এমন কি হয়েছে এক রাতে যে পুলিশ আসতে হবে।  লোকজন আরো অবাক হয়েছিলো যখন কোমরে দড়ি বেঁধে গ্রামের রাস্তা দিয়ে নৌকায়  তুলছিলো করিমকে। সারা গ্রামে গুজব রটে গেলো। দরজার একটা পাল্লা ধরে দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে উঠছেন মমতা। সেটা নিজের স্বামীকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য নয়।  গত দশ বছর ধরে যার সাথে সে সংসার করছে, সেই করিম এতো বড় নরপিশাচ আর  হিংস্র। এত বড় এক জানোয়ার, পশুত্ব মনের মানুষকে নিয়ে সে কিভাবে সংসার করেছে।  যার মন এতো কুরুচিপূর্ণ । 

বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ। না জানি কত শত ছেলেদের সাথে এইসব জঘন্য কাজ করেছিলো। 

এইজন্যই ওপরওয়ালা তার কোলে একটা সন্তানও দেননি। দশটা বছর হয়ে গেলো।  সবই হয়তো এই করিমের পাপের কারণে। ভেবে ভেবে একসময় আর কাঁদতে পারেনা  মমতা। 

একটা নরপশুর জন্য তার এভাবে কাঁদতে নেই। এক সপ্তাহ হয়ে গেলো। আজ কোর্টে করিমের মামলার রায় জানাবে। বাদী হিসেবে নিজের স্ত্রী মামলা করায় বেশ পাকাপোক্ত হয়ে ওঠেছে কেস। সাক্ষী হিসেবে পিঠে মনার আঘাত করা কাস্তের দাগটা কালো হয়ে আছে করিমের  পিঠে। মামলার রায় করিমের বিপক্ষে গেলো। তখন করিমও স্বীকার করে নিয়েছিলো তার অপরাধ। যাকে সে এতোদিন বিশ্বাস করেছিলো, নিজের সঙ্গিনী কে বিশ্বাস করে বলেছিলো অপরাধের কথা। ভেবেছিলো মমতার কাছে মাফ চেয়ে নিবে জীবনের জন্য।  কিন্তু সেই সুযোগ দিলেননা মমতা। পুলিশে জানিয়ে সারা গ্রাম জানিয়ে দিলো অপরাধের  কথা। এখন সে কীভাবে মুখ দেখাবে সে গ্রামে। এখন তার মৃত্যু ছাড়া আর কোন শাস্তি  নেই। মাথা পেতে নিলেন রায়। ফাঁসির দিন করিমকে যখন মঞ্চে নেয়া হলো তখন করিমের চোখের সামনে মনাকে হত্যার দৃশ্যটা ভেসে ওঠছে। বাতাসে শোনা যাচ্ছিলো মনার সেই ম্লান কথাগুলো, এই যে দেখছিস বুদ্বুদ। আমার শরীরের রক্তে তৈরী বু্দ্বুদ সাক্ষী। বুদ্বুদ।  

প্রথম প্রকাশ: সমারূঢ়
(মন্দ্র প্রকাশিত বাংলাদেশের প্রথম কুইয়ার ছোটগল্প সংকলন)

There is one comment

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.