আশুর খোলা আলমারি

আশু

আমি আশু। একজন বাংলাদেশি সমকামি পুরুষ। ২০১৬ সালের পর থেকে পাবলিক স্থানে নিজেকে প্রকাশ করায় প্রথম দিকে একটা ভয় অবশ্যই কাজ করত! যেহেতু নিজের পরিবার আমার যৌন পরিচয় সমকামী সম্পর্কে জানতো, সেহেতু তাদের দুশ্চিন্তা অনেক গুনে বেরিয়ে এসেছে এর পর থেকে। সামাজিকভাবে পুরুষালী হওয়া সত্ত্বেও নিজেকে আরও গুটিয়ে নিতে হয়েছে। ২০১৮ তে আমার বয়ফ্রেন্ড এর সাথে সম্পর্ক হওয়ার পর পাবলিক প্লেসে নিজেদের উপস্থিতির মাত্রা আরও কমাতে হয় কারণ আমি আর আমার জীবন-সাথী সোশাল মিডিয়াতে ভাইরাল, তাই জীবন ঝুঁকি আরও বেড়ে গিয়েছিল। প্রায়ই অপরিচিত মানুষ আমাদের রাস্তা বা বাসার সামনে চলে আসত! এজন্য আমরা ঠিকানা পরিবর্তন করি।

তবুও আমি আগেও মানতাম আর এখনও মানি যে আমাদের জুলহাজ মান্নানের মত পাবলিকের সামনে এসেই কাজ করতে হবে। লুকিয়ে চুরি করা হয়! আমরা নিজেরাই যদি নিজেদের ক্রিমিনাল ভাবি তাহলে আমাদের জাতির এই দেশে কোনো সামাজিক, পারিবারিক উন্নয়ন হবে না। উদাহরণ হিসেবে আমি যখন নিজের বিসমকামি বন্ধুদের সাথে নিজের আসল পরিচয় সমকামি পুরুষ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করি তখন তারা ধীরে ধীরে ব্যাপারটা মেনে নিল আর বুঝতে পারলো। এর আগে আমার জীবন নিয়ে অজানা থাকায় তাদের মনে নানা প্রকার ভয় কাজ করত আমাকে নিয়ে।

জুলহাজ মান্নান আমার ফেসবুক বন্ধু ছিলেন। উনার কাজ আমার সব সময় অনুপ্রাণিত করত। সমাজে নিজের আসল পরিচয় নিয়ে বাঁচার মধ্যে একটি স্বাধীনতার সুখ রয়েছে। যেটা উনার খুনের পর ভয়ে পরিণত হয়েছিল কিছু দিনের জন্যে! সব স্থানে নিজের উপস্থিতি কমিয়ে দিতাম। কিন্তু বলা আছে, “আপনি আপনার আসল পরিচয় চিরকাল লুকিয়ে রাখতে পারবেন না!” সময়ের সাথে সাথে তাই আমাকে আবার আমার জেন্ডার এবং যৌনতা প্রকাশ করতে হয়েছিল।

লেখকের অনুভুতি, অভিজ্ঞতা এবং মতামত একান্তই নিজের। ‘মন্দ্র’ এর অনুমতি ছাড়া এই লেখা পুনঃপ্রকাশ করা যাবে না।

বিক্ষিপ্ত অনুভূতি একটি তনয়-জুলহাজ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত মন্দ্র আর্কাইভ সংকলন। এই সংকলনে কমিউনিটির বিভিন্ন মানুষ ঘটনা সম্পর্কিত নিজেদের অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন। 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.