
অনির্বাণ
সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। প্রেম ভালোবাসা কপালে নেই আগে থেকেই জানতাম। কিন্তু এ তো নতুন এক জালা যন্ত্রণা। কিছু হলেই হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দেখার অব্যক্ত চাওয়া, কয়েক মুহূর্তের জন্য দেখার আহ্লাদ। চোখ দুটো বড় বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকি চুপচাপ, যেন আর কোনদিন দেখা হবে না, সেই ভাবুক চাহুনির বিশ্লেষণ করা হবে না। তাও ভালো যে যখন দৃঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি আশেপাশে দেখার কেউ নেই। বাংলায় লেখার প্রেরণাও ওর থেকে পাই। আবার কোথাও আটকে গেলে ওকেই প্রশ্ন করি।
রিমা চৌধুরীকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে চাই, কিন্তু স্বপ্ন দেখার সাহস নেই। আজকাল মনে হয় ভালোবাসায় অমরত্ব আসে যখন প্রিয়জনকে ছেড়ে দিতে হয়। ওর আর ওর প্রেমিকের ছবি দেখলে হিংসা অনুভব করা দূরে থাক, বরং ওর আনন্দ দেখে নিজেই খুশি হয়ে যাই। ওর মনের মানুষের সাথে কোন না কোন দিন তো মিলন হবেই; আমার আরও অসুবিধা। আমি তো আমার মনের মানুষের ভবিষ্যতের অংশই নয়! ছেলে হয়ে জন্মাতে চাইলেও যে পারিনি, ওটাই দিন শেষে আমার সর্বনাশ করল। নিজের শরীরের প্রতি আমার যে পরিমাণ ঘৃণা, সেখানে ওর আকর্ষণের কমতি টের পাওয়া ভার।
একটা ভুল গল্পে ঢুকে গেছি রে। যে গল্পে আমার অস্তিত্ব মূল্যহীন। লায়লা-মজনুর গল্পতে গোপাল ভাঁড়ের চরিত্রে অভিনয় করছি মনে প্রেম-ভালোবাসার অলেখা সব কবিতা নিয়ে। লিখতেও বিবেকে বাঁধে, যেন এক কম্পিউটারের পর্দায় লেখা জিনিস কখনো এই প্রেমকে সত্যি করবে, নিজেকে এই ভুল আশা দেয়ার দুশ্চিন্তায় থাকি।
বেশিরভাগ সময় নিজেকেই তো বোঝাতে পারি না এই প্রেমের কারণ কি – কালাম এবং আমার বাকি সব বন্ধুবান্ধবদের কিভাবে বোঝাবো? একটা মানুষের প্রতিটা বিষয় কিভাবে ভালো লাগতে পারে মাঝে মাঝে ভাবি। একটা ক্ষুদ্র প্রাণীর জন্য কেন নিজেকে বাস্তুহারা করতে রাজি আছি, কে জানে?
রিমা চৌধুরীকে জিজ্ঞেস করতে হবে। ওকে যদিও কখনো বলা যাবে না এই সুপ্ত প্রেমের গাঁথা। বলা যাবে না যে, ওর পায়ের নিচে একটা কাঁটাও যাতে না পড়ে, তার জন্য পৃথিবীর সমস্ত মাটি সমতল করতে রাজি আছি আমি। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সকল পড়ে থাকা ফুল ওর হাতের নাগালেই যাতে থাকে, ওই পরিকল্পনার বন্দোবস্ত ওকে বলা যাবে না। খামোখা ঝামেলা পাকাবে। তার চেয়ে বরং ওর অজান্তেই নিজেকে বিলিয়ে দিই – তখন এক উদ্ভট রকমের উদারতা ভেবে আর না করতে পারবে না।
থাকুক প্রেম অব্যক্ত। থাকুক কাহিনী অসমাপ্ত। ভালোবাসা না পেলেও, ভালবাসতে পারলেই চলবে।