
হুতুম পেঁচা
লি চেং পরিচালিত ‘Jose’, একটি রক্ষণশীল সমাজে নিজস্ব পরিচয় নিয়ে একজন যুবকের সংগ্রামের ছবি। গুয়াতেমালা শহরের প্রেক্ষাপটে তৈরি, ছবিটির মূল চরিত্র, হোজে(Jose) একজন ১৯ বছর বয়সী সমকামী পুরুষ যে তার মায়ের সাথে থাকে এবং একটি ছোট রেস্তোরাঁয় কাজ করে।
Jose’s Character In Short: Jose is a gay and poor man, breadwinner of his family beside his mom, works in a small food joint, falls in love with a migrant construction worker named Louie and his life gets complicated when he has to choose between his mother (who holds orthodox mentality) and love.
প্রথমেই আসি এই মুভি কোন জায়গার কন্টেক্সট এ করা।
গুয়াতেমালা মধ্য আমেরিকার একটা দেশ(এই দেশকে আন্তর্জাতিকভাবেও পাত্তা দেওয়া হয় না বললেই চলে, এই দেশকে নিয়ে কোথাও খুব একটা কথা/আলোচনা শুনবেন না), জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি … এই দেশের আবহাওয়া বেশ তীব্র এবং ভূমিকম্পের ক্রমাগত হুমকি রয়েছে (যা আমরা মুভিতেও দেখতে পাই)। এখানে দুর্নীতি আছে, বৈষম্য আছে, অর্ধেকের বেশি মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে। আর হাসিব যেটা বলসিলো এটা গৃহযুদ্ধপূর্ণ দেশ।
মুভিতে দেখবেন গুয়াতেমালা শহরটার সাথে আপনার রিলেট করতে খুব একটা সমস্যা হবে না ( দেশ আর রাজধানীর নাম একই)। গাড়ির আওয়াজ, মানুষের আওয়াজ, a city full of life and energy and long established traditional beliefs!
এই মুভির কেন্দ্রবিন্দু ‘হোজে’ নামক ব্যক্তি; যার ব্যক্তিগত একটা জার্নি আমরা দেখতে পাই যেখানে সে ভ্যালিডেশান খোঁজে, ভালোবাসা খোঁজে, নিজের যৌন আকাঙ্খা মেটানোর সুযোগ খোঁজে ডেটিং এপের মাধ্যমে, সে এমন একটা শহরে বসবাস করে, যে শহর তার অস্তিত্ব, তার সেক্সুয়ালিটিকে গ্রহণ করে না।
মানুষের মনের ভেতরকার অশান্তি, জটিলতাকে ডিরেক্টর বেশ ভালোভাবে দেখিয়েছেন অতিরিক্ত কোনো ড্রামা বা আবেগের বহি:প্রকাশ ছাড়াই, অনেক মূহুর্ত ছিলো যেখানে আপনি গল্পের মূল চরিত্রের ডায়লগ ছাড়া খুবই subtle কিছু facial expression দেখতে পাবেন, যা খুব তীব্র বা সরাসরি কিছু না কিন্তু আপনি ভালোভাবে খেয়াল করলে বুঝবেন যে এই দৃশ্যে চরিত্র কিছু না কিছু নীরবে বলার/বোঝানোর চেষ্টা করছে দর্শকদের।
এই মুভিতে আপনি হোমোফোবিয়া ছাড়াও আরো বেশ কিছু সামাজিক সমস্যা দেখবেন যেমন দারিদ্র্য, মাইগ্রেশান, পরিবারের অন্দরমহলের মানসিক ও আর্থিক টানাপোড়ন, গার্লফ্রেন্ড প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর বয়ফ্রেন্ডের তাকে রিজেক্ট করা, মালিকের তার কর্মচারীর সাথে অসংবেদনশীল ব্যবহার এরকম আরো অনেক কিছুই। দেড় ঘন্টার এই মুভির মধ্যে খুব ধূর্ততার সাথে ডিরেক্টর এগুলার ইনপুট দিসে কিন্তু আপনার মনে হবে না too much is going on the screen at the same time.
স্ক্রিনপ্লে দূর্বল লাগলো আমার কাছে, একটা শটে দেখাচ্ছে ছেলেটা ফোন চালাচ্ছে, পরের শটেই তাকে তার ডেইটের সাথে দেখা যাচ্ছে, ভিজ্যুয়াল ল্যাংগুয়েজ পোক্ত মনে হয় নি, মনে হইসে this shot is missing something কিন্তু কী মিসিং সেটা চিহ্নিত করতে পারি নি। পুরোটা সময় থাকতে পারলে গতকাল এর লেখককে জিগেস করতাম এই ব্যাপারে।
কয়েকটা শট বেশ সুন্দর ছিলো যদিও। কিছু শট এমন ছিলো দেখবেন বেশ একটু দূরে থেকে নেওয়া, অনেককিছুর মধ্যে হোজেকে দেখা যায় যখন সে তার ডেইটদের সাথে দেখা করতে যাচ্ছে, মনে হয় অনেককিছুর মধ্যে হোজে যেভাবে লুকাতে চায় তার সমকামীতা আর সমকামী হওয়ার অপরাধবোধ, সিনেমেটোগ্রাফারও সেভাবেই হোজেকে লুকানোর চেষ্টা করছেন স্ক্রিনে। ক্যামেরার কাজটা মজা লাগসে এইসব দৃশ্যে।
আর এই মুভির সাউন্ড। ভিজ্যুয়ালি আমাকে অতৃপ্তি দিলেও, সাউন্ডে উতরে গেসে এই মুভি! একবারে ১০/১০। একটা মুভিকে সেটা যে জায়গার গল্প, সে জায়গাতে বিলং করাতে সে জায়গার সাউন্ড খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি না ও দেখেন এই মুভি, শুধু সাউন্ডটা খেয়াল করেন আপনি শুনবেন হর্নের শব্দ, ট্রাফিকের বিভিন্ন ধরণের শব্দ, ব্যবসায়ীদের আওয়াজ, খাবার বানানোর শব্দ সব কিছুই Loud & Clear।
হোজে আর লুইকে নিয়ে একটু বলে শেষ করতেসি।
হোজে যার জীবনের এক মাত্র রঙিন দিক, যেখানে সে তার সত্তার বহি:প্রকাশ ঘটাতে পারে সেটার মূল অস্ত্র হলো তার মোবাইল ফোন। আমরা মুভিতে কখনোই তার ফোন স্ক্রিন দেখতে পাইনা কিন্তু বুঝতে পারি সেখানে ডেটিং এপের মাধ্যমে সে দৈহিক চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন পুরুষের সাথে শোয়ার সুযোগ সন্ধান করছে এবং এভাবেই লুই তার জীবনে আসে, যার সাথে হোজের প্রেমের মাত্রা আমরা দ্রুতই বিপদসীমার দিকে অগ্রসর হতে দেখতে পাই।
হোজে আর লুই, দুইজনই cispassing guy, যাদের ভালোবাসার যাত্রা শুরু হয় শারীরিক চাহিদা দিয়ে এবং ক্রমশই তা ছোট ছোট আদরে রূপ নেয় যেমন বাইকে যখন লুই হোজেকে চুমু খায়, তার গাল-ঠোঁট-গলায় স্পর্শ করে, there are controlled but very certain and intense hit between them. নিজের সত্তার সাথে সামাজিক-পারিবারিক চাপে যে দেয়াল তারা তৈরি করেছে, সে বাঁধ তারা ভেঙে দেয় একে অপরের সংস্পর্শে এলে, বিচ্ছিন্ন এক পৃথিবীতে চলে যায় যেখানে শুধু হোজে আর লুই ই থাকে, আর থাকে তাদের ভালোবাসা ও একে উপরকে পাওয়ার আকাঙ্খা which they suppressed in order to survive.
মুভিটা খুব Low key ভাবে বানানো, light watch বলা যেতে পারে সম্ভবত, কিন্তু এই মুভি দেখার পর যে বোধোদয় হয় সেটার ধাক্কাটা তীব্র।
Jose (2018); Director: Li Cheng, Writers: Li Cheng, George F. Roberson